নিজস্ব প্রতিবেদক: হঠাৎ উইকেট পতন। উইকেট নয় পোস্টার পতন। পোস্টারটা পড়েই গেল। বৃষ্টিতে নয় কুয়াশার চাদরে ভিজে তা গোবর হয়ে গেছে।
বহুল আলোচিত এই আগডুম-বাগডুম ‘পোস্টার’। রাজনীতিতে তাকে তেমনটি দেখা যেতো না । ২০০৮/২০০৯ সালের দিকে হঠাৎ তার উদয় হয় সাতক্ষীরায়। গায়ে তখনও ঢাকাই ঢাকাই গন্ধ। লোকে তাকে চিনতেও ভুল করতো। কারণ তার নামে তো আরও অনেকেই আছেন। কারও নামের আগে শেখ, কারও নামের আগে কাজী। তাদের নামের সাথে যাতে গুলিয়ে না যায় সেজন্য নতুন নাম বেরিয়ে পড়লো। নাম ‘পোস্টার’। এর যুক্তিও অবশ্য আছে কারণ তিনি নিজেকে হোমরা হনু ভেবে গাছে গাছে, দেয়ালে দেয়ালে, খুঁটিতে ও ভবনে নিজের ছবি টানিয়ে নাম ও উচ্চাভিলাস প্রচার করতে শুরু করেন। সেই থেকে তাকে পোস্টার নামেই আইডেন্টিফাই করে মানুষ।
এই পোস্টার নিজেকে অনেক ক্ষমতাধর মনে করেন। তিনি কখনও মিডিয়ার বিরুদ্ধে লাঠিসোটা নিয়ে রুখে দাঁড়ান। কখনও ভ্যানচালকের গালে চড় বসিয়ে দেন। তাছাড়া নিজের দলেও তিনি দাম্ভিক আচরণ করে থাকেন।
২০০৯/২০১০ সালের কথা। সন্ধ্যায় ‘পোস্টার’ তার নতুন প্রাইভেট কারটি রেখেছিলেন রেড ক্রিসেন্ট অফিসের সামনে। এ সময় ভারি লোহার রড বহনকারী একজন দরিদ্র ভ্যান চালক গায়ের জোরে তার ভ্যানটি ঠেলে ঠেলে নিয়ে যাচ্ছিলেন পোস্ট অফিসের দিক থেকে থানার দিকে। এ সময় বিপরীত দিক থেকে হর্ণ বাজিয়ে আসছিল একটি পুলিশ ভ্যান। রেডক্রিসেন্ট অফিসের সামনের রাস্তায় প্রায় একই সমান্তরালে পুলিশের গাড়ি, পোস্টার’র গাড়ি ও লম্বা রড বোঝাই ভ্যান। ঠিক এমন অবস্থায় ভ্যানটি এগুতেই রডের মৃদু আঘাত লাগে পোস্টারের গাড়িতে। ওমনি পোস্টার ও তার ধামাধরারা সামনে চলে আসে ভীম মুর্তি নিয়ে। পোস্টার এ সময় বলেন ‘শুয়োরের বাচ্চা, তুই আমার গাড়িতে লাগিয়েছিস। জানিস এর দাম কতো? তোরে ১০০ বার বেচলেও এর দাম হবে না’। বাবুমশাই (পোস্টার) যতোটা না বলে চাটুকারেরা বলে তার শতগুণ। ধামাধরারাও কড়া ভাষায় গাল দিতে থাকে তাকে। দরিদ্র ভ্যান চালক বারবার ক্ষমা চাইতেই পোস্টার তার গালে সজোরে বসিয়ে দেয় চড়। এক চড়েই ভ্যানচালক ভ্যান ছেড়ে মাটিতে বসে পড়ে। তখন ফের তার ওপর চলে দমাদম কিল চড়। কিছুক্ষন পর ধকলটা সামলেই কাঁদতে কাঁদতে আধাবয়সী ভ্যান চালক বলে ওঠেন আমার বাবাও কোনোদিন আমার গালে এরকম একটা চড় মারেনি।
ওই মুহুর্তে সেখানে হাজির হন প্রয়াত কৃষক নেতা সাইফুল্লাহ লস্কর। তিনি ভ্যান চালকের কাছ থেকে ঘটনা জেনেই বলেন “তুমি যাও পোস্টারের গালে পাল্টা চড় মেরে বলো রাস্তা জুড়ে গাড়ি রেখেছিস ক্যান। আমি দাঁড়িয়ে আছি তোমার কোন ভয় নেই, যাও।” এ কথা বারবার বলেন সাইফুল্লাহ লস্কর। কিন্তু দরিদ্র ভ্যান চালক আসলেই কাউকে চেনেন না। আর না এগিয়ে ভ্যান নিয়ে চোখ মুছতে মুছতে স্থান ত্যাগ করেন আতংকিত ভ্যানচালক। শুধু বলেন, আল্লাহ এর বিচার করবেন। আর পোস্টার সাইফুল্লাহ লস্করের পাল্টা হুমকিতে মার খাবার ভয়ে কচ্ছপের মতো নিজের শুড়টা খোলসের মধ্যে লুকিয়ে তড়িঘড়ি ঢুকে যান রেড ক্রিসেন্ট অফিসের মধ্যে।
বেশ চড়া গলায় কথা বলতে পারেন পোস্টার। কিছুদিন আগে শহরের মুনজিতপুরে এক আওয়ামীলীগ নেতার বাড়ি থেকে জুয়ার সরঞ্জামসহ বেশ কয়েকজন জুয়াড়িকে আটক করে পুলিশ। এ খবর পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। এতেই গায়ে ছেঁকা লাগে পোস্টারের। তিনি তার দলবল নিয়ে মাঠ গরম করতে নেমে যান। শহরের আলাউদ্দিন চত্বরে তিনি সাতক্ষীরার দুটি দৈনিক পত্রিকার ডিক্লারেশন বাতিল দাবি করেন। বলেন কাল সকাল থেকে এ দুটি পত্রিকা সতক্ষীরায় দেখতে চাইনা। হুমকি দেন এ পত্রিকা দুটির অফিস স্থাপনা ভেঙ্গেচুরে দেওয়া হবে। অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করে সাংবাদিকদের হুমকি দেন এই পোস্টার। সেদিন তাকে শক্তি আর সাহস যুগিয়েছিলেন উপস্থিত চাঁদ আর সূর্যের ঝলমলে আলো।
পোস্টার এর খুব খায়েশ হয়েছিল দলের শহর সংগঠনের শীর্ষ নেতৃত্ব ধরে রাখার। কিন্তু ভাগ্য মন্দ। বিধি বাম। তা আর হলো কই? পোস্টার ছিড়ে গেছে। হঠাৎ উইকেট পতন হয়েছে। বলতে হয় কুযাশায় ভিজে নষ্ট হয়ে গেছে পোস্টার। ধপাস করে পড়েছেন তিনি। অবশ্য তা হয়তো আনন্দের সাথেই মেনেও নিয়েছেন তিনি। কারণ রেড ক্রিসেন্ট নির্বাচন নিয়ে তার সাথে কথা হচ্ছিল সাতক্ষীরার কারও কারও। তিনি তখন বলেছিলেন সবকিছুই নির্ভর করছে ‘এমপি’ ভাইয়ের ওপর। তিনি যা করবেন সেটাই ফাইনাল। তিনি যা বলবেন সেটাই হবে। গর্ব করে পোস্টার আরও বলেন, এমনকি তিনি যদি না চান তাহলে তিনি দলের শহর সংগঠনের নেতা থাকতে পারবো না। যদিও তার ভাইয়ের চাওয়া সত্ত্বেও দলের শহর সংগঠনের নেতৃত্ব থেকে ছিটকে পড়লেন বহুল আলোচিত পোস্টার।