দেশের খবর: আওয়ামী লীগের ভেতরেও জামায়াতের লোক রয়েছে মন্তব্য করে বিশিষ্ট লেখক ও কলামিস্ট আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী বলেছেন, এসব অনুপ্রবেশকারী সরকারের বড় বড় পদে আসীন হয়েছে। বিপদের সময় এরা ভয়ানকভাবে আসে। এরা জননেত্রী শেখ হাসিনার আশপাশেও আছে। তাদের নাম বললে হয়তো আমাকে আর দেশে আসতে দেওয়া হবে না। তাই আমি নাম বলতে চাই না, এদের তালিকা প্রকাশ করতে হবে।
রোববার জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে ‘সম্প্রীতি, বঙ্গবন্ধু ও বাঙালির বিজয়’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। শহীদ বুদ্ধিজীবী ও বিজয় দিবস উপলক্ষে এ আলোচনা সভার আয়োজন করে সম্প্রীতি বাংলাদেশ। অনুষ্ঠানে গাফ্ফার চৌধুরীকে আজীবন সম্মাননা দেওয়া হয়। এ ছাড়া একাত্তরের ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে অনুষ্ঠানের শুরুতে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করে ভাষাসংগ্রামী গাফ্ফার চৌধুরী বলেন, দেশে রাজাকারদের তালিকা করার আগে আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশকারী রাজাকারদের তালিকা করতে হবে। কারণ, অনেক স্বাধীনতাবিরোধী আওয়ামী লীগের চারপাশ ঘিরে রেখেছে। তাদের যথাযথভাবে চিহ্নিত করতে না পারলে রাজাকারদের সঠিক তালিকা প্রণয়ন করা সম্ভব হবে না।
তিনি বলেন, আমার ধারণা, শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রাখা না হলে বাংলাদেশের সর্বনাশ হয়ে যাবে। বাংলাদেশ আফগানিস্তানে পরিণত হবে। দেশে মৌলবাদী নেতৃত্ব এসে যাবে। আওয়ামী লীগকে এ ব্যাপারে সজাগ থাকতে হবে।
আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী বলেন, অনেক রাজাকার আছে, যাদের জিয়াউর রহমান ও এরশাদ সম্মান দিয়েছিলেন। যেমন বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারী ফারুককে প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচন করার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। সেই ফারুককে পরে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে। অনেক রাজাকার, আলবদর, আলশামস এবং মুক্তিযুদ্ধবিরোধীকে জিয়াউর রহমান ও এরশাদ প্রতিষ্ঠা করে গেছেন। তাদের আমলে অনেকে এমপি-মন্ত্রীও হয়েছিলেন, যা খুবই নিন্দনীয়।
তিনি আরও বলেন, রাজাকারদের তালিকা করলে দেখা যাবে, রাজাকাররাই সেই তালিকা তৈরি করছে। ওই তালিকায় মুক্তিযোদ্ধারা রাজাকার, রাজাকাররা মুক্তিযোদ্ধা হয়ে যাবে।
গাফ্ফার চৌধুরী বলেন, দৈনিক সংগ্রাম সম্প্রতি কাদের মোল্লাকে শহীদ আখ্যা দিয়েছে। এর আগেও ওই পত্রিকা মোনায়েম খানকে শহীদ বলে আখ্যায়িত করেছে। এর মাধ্যমে তরুণ প্রজন্মকে ভুল বোঝানো হচ্ছে। এ জন্য এই পত্রিকার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।
‘সম্প্রীতি, বঙ্গবন্ধু ও বাঙালির বিজয়’ শব্দগুলো আমাদের জীবনে ওতপ্রোতভাবে জড়িত উল্লেখ করে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু মনেপ্রাণে একজন খাঁটি মুসলমান; কিন্তু তিনি রাজনৈতিক জীবনে ছিলেন একজন আদর্শবাদী এবং অসাম্প্রদায়িক। তবে বাকশালের সময় আওয়ামী লীগ দাঁড়াতে পারেনি। কারণ, বাকশাল গঠনের তিন মাসের মাথায় বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়েছিল। তাই বাকশাল ভালো-মন্দ যাচাইয়ের সুযোগ ছিল না। তবে বাকশাল থাকলে আজকের বাংলাদেশের দুর্নীতি, সন্ত্রাস এত ব্যাপক হতো না। হয়তো এত চাকচিক্যময় রাস্তাঘাটও হতো না।
সম্প্রীতি বাংলাদেশের আহ্বায়ক পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন- তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও সংসদ সদস্য শফিকুর রহমান, সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, সিনিয়র সাংবাদিক হারুন হাবিব, সাবেক সচিব নাসির উদ্দিন আহমেদ, শহীদকন্যা ডা. নুজহাত চৌধুরী প্রমুখ। সভা সঞ্চালনা করেন সংগঠনটির সদস্য সচিব ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল।
পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, একাত্তরের ১৪ ডিসেম্বর বুদ্ধিজীবীদের হত্যার বিচার এখনও শেষ হয়নি। তিনি এই হত্যাকাণ্ডের বিচার ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির দাবি করেন। এর জন্য আগামী এক বছর সম্প্রীতি বাংলাদেশের পক্ষ থেকে গণস্বাক্ষর কার্যক্রম চালানো হবে বলে জানান তিনি।
তথ্য প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসান বলেন, ধর্মীয় সম্প্রীতি বাংলাদেশে থাকবে। কেউ বুদ্ধিজীবীদের নাম মুছে ফেলতে পারবে না। এই বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে কেউ মুছে দিতে পারবে না। দৈনিক সংগ্রাম প্রসঙ্গে তথ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, এ পত্রিকার বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ কঠোর ব্যবস্থা তথ্য মন্ত্রণালয় নেবে। এই দেশে এমন ধৃষ্টতা আর কোনো দিন যাতে কেউ না দেখাতে পারে, সেই ব্যবস্থা সরকার নেবে।
শফিকুর রহমান বলেন, জাতীয় প্রেসক্লাবেও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসীদের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে কেউ কেউ জামায়াত-জঙ্গি, স্বাধীনতাবিরোধীদের প্রতিষ্ঠা এবং পুনরায় ক্ষমতায় আনার অপচেষ্টা করছে। সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেন, বঙ্গবন্ধু ছিলেন সম্প্রীতির মহানায়ক। জিয়াউর রহমান তাকে হত্যার মাধ্যমে দেশে ধর্মীয় রাজনীতি শুরু করেন।