র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন-র্যাব অন্ধকারের মৃত্যু পরোয়ানা নিয়ে ঘুরে বেড়ানো সংগঠনে পরিণত হয়েছে মন্তব্য করে আবার তা নিষিদ্ধের জোর দাবি জানিয়েছে বিএনপি।
বৃহস্পতিবার নয়াপল্টনস্থ দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদ এমন দাবি করে বলেন, বিরোধী দল দমনে র্যাবের অমানবিক নৃশংসতার ঘটনা আজ মানুষের মুখে মুখে। এ বিষয়ে আমরা অনেক কথা বলেছি। সন্তানহারা অনেক মায়ের আহাজারি, স্বামীহারা স্ত্রীর বুকফাটা কান্না এবং পিতাহারা শিশুর পিতার জন্য অপেক্ষার করুণ আর্তি এই র্যাবের জন্যই সৃষ্টি হয়েছে। র্যাবকে যেন অন্ধকারের মৃত্যু পরোয়ানা নিয়ে ঘুরে বেড়ানো একটি সংগঠনে পরিণত করেছে এই সরকার।
সুইডিশ রেডিও’তে র্যাবের গুপ্তহত্যার লোমহর্ষক বর্ণনা ফাঁস হয়ে যাওয়াতে এদের কর্মকাণ্ডের বিভৎসরূপ এখন শুধু বাংলাদেশ নয়, সারাবিশ্বের মানুষের বিবেককে প্রবলভাবে নাড়া দিয়েছে দাবি কিরে র্যাব নিষিদ্ধের জানান রিজভী।
এর আগেও একাধিকবার র্যাবকে নিষিদ্ধের দাবি তোলে বিএনপি। যদিও এ দলটির শাসনামলেই ২০০৪ সালের ২৬ মার্চ জন্ম লাভ করে সংস্থাটি।
সুইডেনের সরকারী অর্থায়নে পরিচালিত ‘সভারিজেস রেডিও’ গোপনে ধারণকৃত একটি অডিও প্রকাশ করেছে, ঐ রেডিওতে একজন উচ্চ পদস্থ র্যাব কর্মকর্তা কিভাবে মানুষ হত্যা করে সাজানো নাটক বানায়; তার বর্ণনা উঠে এসেছে। সেই ধারণকৃত অডিও’তে শরীরে কাঁটা দেয়া মর্মস্পর্শী ঘটনার অসংখ্য বর্ণনার মধ্যে একটি জায়গায় বলা হয়েছে-“যদি তুমি তাকে (টার্গেটকৃত ব্যক্তি) খুঁজে পাও; তাহলে সেই যেই হোক না কেন তাকে গুলি করো ও হত্যা করো, তার পাশে একটি অস্ত্র রেখে দাও”।
রিজভী আহমেদ বলেন, সেই অডিও’তে ক্রসফায়ারে কিভাবে হত্যাটিকে নাটকীয় কায়দায় মিডিয়া ও সাধারণ মানুষের নিকট তুলে ধরা হবে সেটিরও বর্ণনা আছে। সেখানে বলা হয়-র্যাব সদস্যদের দিকে গুলি করার কারণেই র্যাবকে পাল্টা গুলি চালাতে হয় এবং তাতেই তাদের টার্গেটকৃত ব্যক্তির মৃত্যু ঘটে।
ঐ কর্মকর্তা কিভাবে কোন ব্যক্তিকে গুম করা হয় সেটির তিনটি কৌশলের কথাও উল্লেখ করেছেন। কৌশলগুলি হলো-টার্গেটকৃত ব্যক্তিকে ধরা, তাকে হত্যা করা, লাশ লুকিয়ে ফেলা। নিহতদের মরদেহ নদীতে ফেলে দেয়ার আগে লাশের সঙ্গে কিভাবে কংক্রিটের ব্লক বেঁধে দেয়া হয় অডিও কথোপকথনে সেটিরও বর্ণনা দেয়া হয়েছে জানিয়ে রিজভী বলেছেন, কার সন্তান কখন নিরুদ্দেশ হয়ে যায়, বন্দুকযুদ্ধের নামে ক্রসফায়ারে হত্যা করা হয় এ নিয়ে এখন সারাদেশে আতঙ্ক বিরাজ করছে। তার উপর সারাদেশ এখন সুইডিশ রেডিওতে অডিওটি’র ঘটনা প্রকাশিত হওয়ার পর সারাদেশ এখন শোক ও বেদনায় স্তব্ধ।
তিনি বলেন, র্যাবের মতো একটি খুনে বাহিনী ব্যবহার করেই প্রধানমন্ত্রী বিরোধী দলকে দমন করান এবং জনগণকে চোখ রাঙিয়ে কথা বলেন। সমস্ত বাহিনী দিয়েই ক্ষমতাসীনরা আমাদের জনসমাজ থেকে গণতন্ত্র, সহনশীলতা, মত প্রকাশের স্বাধীনতা, মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা, ন্যায়-বিচার, ভিন্নমত প্রকাশের সুযোগ সবকিছুকেই স্তব্ধ করে দেয়া হয়েছে।
রিজভী এ কারণেই জঙ্গিবাদ নামক একটি নতুন উপদ্রবের উপসর্গ সারাজাতিকে উদ্বিগ্ন ও আতঙ্কিত করে তুলেছে বলে দাবি করে এই জঙ্গীদের সাথে জড়িতদের মধ্যে শাসকদলের সংশ্লিষ্টতা জাতিকে হতবাক করেছে বলে মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, গত কয়েকদিন আগে ময়মনসিংহে যে জঙ্গিদের ধরা হয়েছে তাদের মধ্যে একজন ধোবাউড়া উপজেলা বাঘবেড় ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি আল আমিন, আরো দু’জন আওয়ামী পরিবারের সদস্য এবং যেই ভবন থেকে তাদেরকে ধরা হয়েছে সেই ভবনটি আওয়ামী লীগের একজন সাবেক এমপি’র বাড়ী। যেমনভাবে শায়খ আব্দুর রহমান থেকে শুরু করে হলিআর্টিজানের জঙ্গি হামলার সাথে জড়িত কেউ কেউ আওয়ামী পরিবারের সদস্য- দাবি রিজভীর।
তিনি বলেন, এসব ঘটনাকে ধামাচাপা দিতে সরকার র্যাবকে দিয়ে বিরোধীদের দমন করছে। গুম-খুন নেতৃত্বে দিয়ে র্যাব এখন নৃশংস একটি সংগঠন। র্যাবের নৃশংসতা সারা দেশ আতঙ্কিত মন্তব্য করে রিজভী বলেন, আমি আবারও র্যাব নিষিদ্ধের জোর দাবি জানাচ্ছি।
র্যাব নিয়ে কড়া সমালোচনা করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীও।
দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক আলোচনা সভায় তিনি বলেন, এসমস্ত বাহিনীকে দিয়ে গুম-খুন করিয়ে সরকার ক্ষমতায় টিকে আছে। আজ দেশ আতঙ্কের নগরীতে পরিণত হয়েছে। দেশে নয়, সারা বিশ্বে আজ এই নৃশংসতার চিত্র ফুটে উঠছে। তিনি বলেন, আইনের শাসনের অভাবে বিচার বিভাগের মতো রক্ষকও ভক্ষকে পরিণত হয়েছে।