অনলাইন ডেস্ক: বছরজুড়ে ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ডই ছিল সাতক্ষীরার রাজনৈতিক অঙ্গনে সবচেয়ে বেশি সমালোচিত। জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সাদিকুর রহমানকে বহিষ্কার তার বিরুদ্ধে বিকাশ এজেন্টের টাকা ছিনতাই, অস্ত্র, পর্নোগ্রাফি ও চাঁদাবাজির মামলা। তাদের বিরুদ্ধে ফেনসিডিল ও ইয়াবা খাওয়া ও পাচারের অভিযোগও কম ছিল না। জেলা ছাত্রলীগ কমিটি বিলুপ্তির মধ্যদিয়ে পার হয় ২০১৯ সাল।
ছাত্রলীগ বিভিন্ন কোচিং সেন্টার, বড় দোকানি এমনকি কলেজ অঙ্গনে শিক্ষকদের কাছ থেকেও চাঁদাবাজির বহু ঘটনার সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। দেবহাটার সখিপুর কেবি আহসানউল্লাহ কলেজ ছাত্রলীগ সভাপতি মো. ফয়জুল্লাহ বিভিন্ন অজুহাতে শিক্ষকদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করে। এমনকি পরীক্ষার ফরম পূরণের টাকার ভাগও আদায় করেছে। এর প্রতিবাদে ২২ মে কলেজের ৭৭ শিক্ষক কর্মচারী মানববন্ধন করেন। এর আগে একটি মামলায় জামিনে বাড়ি ফিরতেই আশাশুনি উপজেলার বড়দল ইউনিয়ন যুবলীগের সাবেক সভাপতি মুক্তিযোদ্ধাপুত্র তৌহিদ সানাকে ৪ এপ্রিল সন্ধ্যায় মিষ্টি খাবার নাম করে ডেকে নিয়ে হাতুড়িপেটা করে হত্যা করে ইউনিয়ন ছাত্রলীগ সভাপতি নাহিদ হোসেন বাবু ও তার তিন সহযোগী কাজল, আইউব ও টুটুল। ১৮ মে কলারোয়া উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সম্পাদক তুষারকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে চারটি আঙ্গুল কেটে বিচ্ছিন্ন করে দেয় ছাত্রলীগ সভাপতি শেখ সাগর হোসেন, সেক্রেটারি মেহেদি হাসান নাইস ও সহযোগী মন্টু ঢালি, বাবু, ইমান ও জিসান। কালীগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের নেতারা ৫০ হাজার করে চাঁদার টাকা না পাওয়ায় তিনটি ইউনিয়ন কমিটি ভেঙে দেন। এ সময় রনি কুশলিয়া ইউপি কমিটির সভাপতি আবুবকর ও ধলবাড়িয়া ইউপি সভাপতি জাভেদা নাহিয়ান হৃদয় সাবেক সভাপতি আবদুর রহমান বাবুকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে আহত করে। ৭ জুন শ্যামনগর উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি একরামুল হক লায়েস ও সেক্রেটারি হাকিম সবুজের কমিটি ভেঙে জেলা কমিটি তিন লাখ টাকার বিনিময়ে সাগর মণ্ডল ও মোস্তাফিজুর রহমান রনিকে সেক্রেটারি করে নতুন কমিটি দেয়। এর প্রতিবাদে শ্যামনগরে মিছিল ও মানববন্ধন হয়। ৮ সেপ্টেম্বর আশাশুনি সরকারি কলেজে কলেজ ছাত্রলীগ সভাপতি আশরাফুজ্জামান তাজ ও তার সহযোগী শাওন, আল মামুনসহ কয়েকজন অধ্যক্ষ মিজানুর রহমানকে তার রুম থেকে ডেকে এনে মারধর করে। এ সময় তারা কক্ষের জানালা-দরজা ভাংচুর করে। একটি নিরীহ ছেলেকে মারধরের সময় তাদের হাত থেকে রক্ষা করে পুলিশ হেফাজতে দেওয়ার ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে এই কাণ্ড ঘটায় তারা। এর আগে তালার খলিসখালী ইউনিয়ন ছাত্রলীগ সেক্রেটারি একই ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ সভাপতি সমীর দাসকে পিটিয়ে আহত করে। ৩ আগস্ট রাত ১১টায় জেলা ছাত্রলীগ সম্পাদক সৈয়দ সাদিকুর রহমানের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের ১২ সদস্য মাছখোলা শিবতলার প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা আইউব আলির নিঃসন্তান বিধবা স্ত্রী হোসনে আরার জমি দখল করে অন্যদের হাতে তুলে দিতে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হামলা করে একটি মেসবাড়িতে। সেখানে থাকা ছাত্রদের সঙ্গে ঠেলাঠেলির এক পর্যায়ে সাদিকুরের পিস্তলের গুলিতে আহত হয় ছাত্রলীগ নেতা আজমীর হোসেন ফারাবি। ফারাবি পৌর আওয়ামী লীগ সেক্রেটারি শাহাদাত হোসেনের ছেলে। পরে গ্রামবাসীর তাড়া খেয়ে তারা পালিয়ে যায়।
এদিকে গত ২৮ মে সাতক্ষীরা প্রেস ক্লাবে সাংবাদিকদের ওপর সন্ত্রাসী হামলা ও মারধর জেলা ছাত্রলীগ সম্পাদক সৈয়দ সাদিকুরের দেহরক্ষী সাইফুল ও মামুনুল ইসলাম দ্বীপ অংশ নেয়। এ সময় সৈয়দ সাদিকুর রহমান তার বাহিনী নিয়ে প্রেস ক্লাবের সামনে স্লোগান দেয় ‘সাংবাদিকদের চামড়া তুলে নেব আমরা’। ২২ অক্টোবর দেবহাটা সরকারি কলেজ ছাত্রলীগ সভাপতি সহযোগীসহ সজীব ৫০ বোতল ফেনসিডিলসহ খালিশপুরে গ্রেফতার হয়।
এদিকে গত ৩০ অক্টোবর কালীগঞ্জের পাওখালীতে বিকাশ এজেন্টের ২৬ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িত জেলা ছাত্রলীগ সেক্রেটারি সৈয়দ সাদিকুরের দুই দেহরক্ষী সাইফুল ও দ্বীপ ২৯ নভেম্বর রাতে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়। তাদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী গ্রেফতার সাদিকুর ছিনতাইয়ের কথা স্বীকার করে। তার বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে একটি ও দুই চেয়ারম্যানকে নারী লোভ দেখিয়ে ভিডিও করে নয় লাখ টাকা আদায়ের দুটি পর্নোগ্রাফির মামলা হয়। তার সহযোগী আকাশ ইসলাম, পিচ্চি রাসেল ও সুমাইয়া শিমু, অস্ত্রসহ আজিজ ও শামীও গ্রেফতার হয়েছে এসব মামলায়। সংগঠনের শৃঙ্খলাবিরোধী কাজে জড়িত থাকার দায়ে সৈয়দ সাদিকুরকে বহিষ্কার এবং জেলা কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ।
সূত্র: দৈনিক যুগান্তরে প্রকাশিত প্রতিবেদন অবলম্বনে।