ন্যাশনাল ডেস্ক: আসন্ন ঢাকা সিটি নির্বাচনে কাউন্সিলর প্রার্থী ইয়াছিন মোল্লাকে আদাবর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) নম্বর থেকে ফোন করে জিতিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়। বিনিময়ে তার কাছে ১৫ লাখ টাকা দাবি করা হয়। নির্বাচনের আগে পাঁচ লাখ এবং পরে ১০ লাখ টাকা দেওয়ার চুক্তিতে বিষয়টি রফা হয়। প্রস্তাব পেয়ে ইয়াছিন মোল্লা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে পাঁচ লাখ টাকা দেন। পরে আবার তিন লাখ টাকা চাওয়ায় তার মনে সন্দেহ হয়। তিনি বুঝতে পারেন প্রতারিত হয়েছেন। এরপর থানায় গিয়ে তিনি পুলিশকে বিষয়টি জানান এবং মামলা করেন। একই ঘটনা ঘটেছে আরেক কাউন্সিলর প্রার্থী আবুল কাশেমের সঙ্গে। প্রতারকচক্র তার কাছ থেকে সাত লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। তিনি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন।
ওসির নম্বর ক্লোনিং করে এই প্রতারণা করা হয়েছে বলে পুলিশের ধারণা।
ইয়াছিন মোল্লার হয়ে তার ছেলে কাওসার মোল্লা মামলা করেছেন। এজাহারে বলা হয়েছে, আমার বাবা ইয়াছিন মোল্লা ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের একজন কাউন্সিলর প্রার্থী। ২২ জানুয়ারি সকাল ৮টা ৪৮ মিনিটে তার মোবাইলে আদাবর থানার ওসির নম্বর থেকে একটি ফোন আসে।
কলার বলেন, ‘আমি ওসি আদাবর বলছি। আমি নির্বাচনে আপনার জন্য কিছু করতে পারলাম না। কিন্তু আপনার জন্য একটি পথ আমি তৈরি করে দেই। আপনি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আদাবর থানার ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের ম্যাজিস্ট্রেটের সঙ্গে কথা বলেন।’
এরপর ওসি পরিচয়দানকারী ব্যক্তি একটি নম্বর দিয়ে বলেন এটি ম্যাজিস্ট্রেটের নম্বর। আপনি তার সঙ্গে কথা বলেন। এরপর ইয়াছিন মোল্লা তার সঙ্গে ফোনে কথা বলেন।
কথিত ম্যাজিস্ট্রেট বলেন, ‘আপনি কি নির্বাচনে জয় লাভ করতে চান? যদি জয়ী হতে চান তাহলে আপনাকে ১৫ লাখ টাকা দিতে হবে। নির্বাচনের আগে পাঁচ লাখ এবং নির্বাচনের পরে ১০ লাখ টাকা দিতে হবে।’
ম্যাজিস্ট্রেটের এই প্রস্তাব পেয়ে ইয়াছিন মোল্লা রাজি হন। ওই দিন সকাল ১০টা ২০ মিনিটের দিকে আদাবরের একটি বিকাশ এজেন্টের দোকান থেকে ১৪টি নম্বরে পাঁচ লাখ টাকা পাঠান তিনি। ওইদিন সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার ফের ওসির নম্বর থেকে ফোন আসে। তারা আরও তিন লাখ ৩০ হাজার টাকা দাবি করেন। এই সময় ইয়াছিন মোল্লার সন্দেহ হয়। এরপর তিনি আদাবর থানার ওসিকে ফোন দিয়ে বিস্তারিত জানান। সব কথা শুনে ওসি তাকে থানায় যেতে বলেন। থানায় গিয়ে ওসির সঙ্গে কথা বলে তিনি বুঝতে পারেন প্রতারিত হয়েছেন।
মামলার বাদী কাওসার মোল্লা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা থানায় অভিযোগ দিয়েছি। পুলিশ তদন্ত করে দেখছে।’
ইয়াছিন মোল্লা লাটিম প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন।
একই ওয়ার্ডের টিফিন ক্যারিয়ার প্রতীকে কাউন্সিলর প্রার্থী আবুল কাশেমের কাছ থেকেও সাত লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে চক্রটি। তাকেও নির্বাচনে জয়ী করার কথা বলে সাত লাখ টাকা নিয়েছে। কাশেম মোল্লার ম্যানেজার ফরহাদ থানায় জিডি করেছেন। এটিও মামলার প্রক্রিয়াধীন।
আদাবর থানার ওসি কাজী সাহিদুজ্জামান বলেন, ‘দুজন প্রার্থীর কাছ থেকে ১২ লাখ টাকা নিয়েছে। আমাদের ধারণা তারা নম্বর ক্লোন করে প্রতারণা করেছে। এই ঘটনায় একটি মামলা ও একটি জিডি হয়েছে। আমরা মামলা তদন্ত করছি। আশা করছি প্রতারকচক্রটিকে দ্রুত ধরে ফেলবো।’