ন্যাশনাল ডেস্ক: সম্প্রতি জাতীয় সংসদে ব্যাংক পরিচালকদের পৌনে ২ লাখ কোটি টাকা ঋণ নেয়ার তথ্য প্রকাশিত হয়েছে। এতে আমানতকারীদের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা দেখা দেয়াই স্বাভাবিক। বস্তুত হয়েছেও তাই; ক্ষুব্ধ আমানতকারীরা ব্যাংক পরিচালকদের নামে-বেনামে থাকা
পুরো ঋণের তথ্য প্রকাশের দাবি জানিয়ে এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। আশঙ্কার বিষয় হল, আজকাল পরিচালকরা ব্যাংক থেকে নামে-বেনামে ঋণ নিয়েই ক্ষান্ত হচ্ছেন না, পাশাপাশি তারা সিএসআরের (কোম্পানি ব্যবস্থাপনায় সামাজিক দায়বদ্ধতা) টাকায়ও ভাগ বসাচ্ছেন।
সিএসআরের টাকা হাতিয়ে নেয়ার দুরভিসন্ধি থেকে অনেকেই বেনামে একাধিক কোম্পানি খুলেছেন। এছাড়াও ব্যাংকের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপের পাশাপাশি ঋণ মঞ্জুর, সুদ মওকুফ ও ঋণ পুনঃতফসিলের ক্ষেত্রেও নানা সুবিধা নেয়ার অভিযোগ রয়েছে ব্যাংক পরিচালকদের বিরুদ্ধে, যা শক্ত হাতে প্রতিরোধ করা উচিত।
প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী একজন পরিচালক নিজ ব্যাংক থেকে তার শেয়ারের ৫০ শতাংশের বেশি ঋণ নিতে পারেন না। এজন্য দেখা যায়, ব্যাংকগুলোর পরিচালকরা যোগসাজশের মাধ্যমে একে অন্যের প্রতিষ্ঠান থেকে নামে-বেনামে ঋণসহ নানা সুবিধা নিচ্ছেন। অথচ দেশে ‘ভালো গ্রাহক’ হিসেবে যেসব ব্যবসায়ী, শিল্প মালিক ও উদ্যোক্তার সুনাম রয়েছে, তাদের ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে নানারকম শর্তের জালে বেঁধে বিভিন্নভাবে হয়রানি করা হয়।
এ ক্ষেত্রে ভুলে যাওয়া হয় যে, আমানতকারীদের টাকা ভালো উদ্যোক্তাদের মধ্যে ঋণ হিসেবে বিতরণ করে দেশের উন্নয়ন-সমৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধির উদ্দেশ্যেই ব্যাংকিং ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
বলার অপেক্ষা রাখে না, ব্যাংক পরিচালকরা ভাগাভাগির মাধ্যমে নিজের ও অন্য প্রতিষ্ঠান থেকে যে ঋণ নিচ্ছেন তার অধিকাংশই আর ফেরত আসছে না। এর ফলে মন্দ ঋণের পরিমাণ বাড়ছে, যা অর্থনীতির জন্য অশনিসংকেত। এ নৈরাজ্যের অবসান ঘটাতে হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে অবশ্যই কঠোর হতে হবে। এ কথা সর্বজনবিদিত, অধিকাংশ বেসরকারি ব্যাংকের মালিক ও পরিচালক রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থাকেন।
পাশাপাশি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও পরিচালকরাও রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগ পান। ফলে তাদের ওপর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ ও কর্তৃত্ব অনেকটাই শিথিল। এ সুযোগে নিয়মনীতি উপেক্ষা করে তারা নানা ধরনের আর্থিক কেলেঙ্কারির জন্ম দিচ্ছেন। ব্যাংকগুলোর শীর্ষ পর্যায়ে থাকা ব্যক্তিদের দুর্নীতি দেশের সামগ্রিক আর্থিক ব্যবস্থাপনাকে দুর্বল করে ফেলছে এবং এর ফলে খেলাপি ঋণ, অব্যবস্থাপনা, অনিয়ম-জালিয়াতি ও অর্থ আত্মসাতের ঘটনা না কমে বরং দিন দিন বাড়ছে, যা কোনোমতেই গ্রহণযোগ্য নয়।
আমরা মনে করি, অনিয়ম ও দুর্নীতিমুক্ত ব্যাংকিং ব্যবস্থা গড়ে তোলার বিষয়টি সরকারের কাছে সর্বাধিক গুরুত্ব পাওয়া উচিত। মূলত দুর্নীতি ও বিচারহীনতার সংস্কৃতি বিদ্যমান থাকার কারণেই ব্যাংকিং ও আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা যাচ্ছে না।
প্রচলিত ব্যাংকিং ব্যবস্থা দেশের মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জনে ব্যর্থ হলে এর ফল যে ভালো হবে না, তা নিশ্চিত। এতে দেশের অর্থনীতিতে প্রাণসঞ্চারের কাজটি মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে। এ প্রেক্ষাপটে ঋণসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে অনিয়মের সঙ্গে যুক্ত ব্যাংক পরিচালক ও অন্যদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে, এটাই প্রত্যাশা।