দেশের খবর: মন্ত্রিসভায় রদবদল আসছে এমন গুঞ্জন ভেসে বেড়াচ্ছে বাতাসে। কয়েক দিনের মধ্যে এই রদবদল হচ্ছে বলে আলোচনা রয়েছে। রদবদল হলে পুরনো কয়েকজন মন্ত্রী বাদ পড়তে পারেন। যুক্ত হতে পারেন কয়েকজন। রদবদলের আভাসে এরইমধ্যে কয়েক মন্ত্রী চিন্তিত। কেউ কেউ পদোন্নতির আশায় রয়েছেন। গত কয়েক দিনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কয়েকজন মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীর সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে কথা বলেছেন। মন্ত্রণালয়ের সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে খোঁজ-খবর নিয়েছেন।
যদিও প্রধানমন্ত্রী সব মন্ত্রণালয়ের বিষয়ে সার্বক্ষণিক খোঁজ-খবর রাখেন। তবে রুটিন ওয়ার্কের বাইরে মন্ত্রীদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর এমন আলোচনায় রদবদলের বিষয়ে অনুমান করছেন অনেকে। বিষয়টি নিয়ে প্রকাশ্যে কেউই কথা বলতে চাননি।
আওয়ামী লীগের শীর্ষ কয়েক নেতা বলেন, মন্ত্রীসভার রদবদলের বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এখতিয়ার। কাকে নিয়ে বা কাকে বাদ দিয়ে তিনি মন্ত্রিসভা চালাবেন সেটা তিনিই ভালো বলতে পারেন। আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিলের আগে থেকেই মন্ত্রিসভায় রদবদলের বিষয়টি আলোচিত হতে থাকে। তখন সরকার ও দলকে আলাদা করার কথা শোনা যায়। পরে আওয়ামী লীগের নতুন কমিটিতে মন্ত্রিসভার ৯ জন মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রী দলের কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে বাদ পড়েন।
দলীয় নেতারা জানান, এবার মন্ত্রিসভা ও দলের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে যারা রয়েছেন, তাদের বিষয়টি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে হাইকমান্ড। পাশাপাশি দলের প্রতি নিবেদিত এবং স্বচ্ছ ভাবমূর্তিসম্পন্ন যেসব নেতা কোনো পদ পাননি, তাদের মন্ত্রিসভায় বিবেচনা করা হবে। নেতারা জানান, রদবদলে মন্ত্রিসভার আকার বাড়তে পারে। সেখানে আসতে পারে একাধিক নতুন মুখ, যারা আগে কখনও মন্ত্রিসভায় ছিলেন না। পাশাপাশি আগে মন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রী ছিলেন-এমন নেতাকেও অন্তর্ভুক্ত করা হতে পারে। দপ্তর পরিবর্তন হতে পারে বর্তমান মন্ত্রিসভার কোনো কোনো সদস্যের। এছাড়া কয়েকজন প্রতিমন্ত্রী বা উপমন্ত্রীর পদোন্নতি হতে পারে, যাদের প্রয়োজনীয় যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও দলীয় কোনো পদে রাখা হয়নি। অন্যদিকে বর্তমান মন্ত্রিসভার যেসব সদস্য মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রমে এখন পর্যন্ত দক্ষতার পরিচয় দিতে ব্যর্থ হয়েছেন অথবা কোনো নেতিবাচক কর্মকাণ্ডে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যুক্ত আছেন, তাদের জন্য রয়েছে দুঃসংবাদ। অদক্ষতার কারণে তাদেরকে সরিয়ে দেয়া হতে পারে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা। ৪৮ সদস্যবিশিষ্ট বর্তমান মন্ত্রিসভায় পূর্ণ মন্ত্রী ২৫, প্রতিমন্ত্রী ১৯ ও উপমন্ত্রী ৩ জন রয়েছেন। বর্তমানে আটটি মন্ত্রণালয়ে পূর্ণ মন্ত্রী নেই। সেগুলো হচ্ছে- মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে আছে জনপ্রশাসন এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়। এসব মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেতে পারেন মন্ত্রিসভায় যারা নতুন যোগ হবেন অথবা যারা পদোন্নতি পাবেন।
এদিকে ১৪ দলীয় জোটের কয়েকজনকে মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়টি রয়েছে আলোচনায়। আওয়ামী লীগের নতুন কমিটিতে চারজন পূর্ণ মন্ত্রী রয়েছেন। তারা হলেন- সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। এই চারজনকে নিয়ে চলছে ব্যপক আলোচনা। নানা বিবেচনায় এদের মধ্য থেকে যে কেউ বাদ পড়তে পারেন মন্ত্রিসভা থেকে। সরকার ও দলকে আলাদা করার অংশ হিসেই এ উদ্যোগ নেয়া হতে পারে বলে ধারণা করছেন আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা।
গত বছরের ১৯শে মে প্রথমবারের মতো স্বল্পপরিসরে মন্ত্রিসভা পুনর্বিন্যাস করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে কাউকে সংযুক্ত কিংবা বাদ দেয়া হয়নি। স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী মো. মুরাদ হাসানকে তথ্য প্রতিমন্ত্রী পদে স্থানান্তর করা হয়। এছাড়া ডাক ও টেলিযোগাযোগ, তথ্য ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের মধ্যকার বিভাগ পুনর্বিন্যাস করা হয়। এরপর ১৩ জুলাই পদোন্নতি দিয়ে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক মন্ত্রী হিসেবে ইমরান আহমেদ এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী হিসেবে ফজিলাতুন্নেছা ইন্দিরাকে নতুন অন্তর্ভুক্তি করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এদিকে অসুস্থ হওয়ার আগে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিসভার রদবদল প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, মন্ত্রিসভার রদবদল রুটিন বিষয়, যা প্রধানমন্ত্রীর এখতিয়ার। দলে পদ পেয়েছেন আওয়ামী লীগের এমন কয়েকজন নেতা মন্ত্রিসভার সদস্য তাদের ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত আসতে পারে কি না জানতে চাইলে ওইসময় ওবায়দুল কাদের বলেন, সেটাও প্রধানমন্ত্রী বলতে পারবেন। তিনি যেটা ভালো মনে করবেন সেটাই হবে, দ্যাট ইজ ফাইনাল। আমরা সবাই তার সিদ্ধান্ত মেনে নেব। তিনি যদি আমাকে বলেন ছেড়ে দাও, আমি ছেড়ে দেব। এটা কোনো বিষয় নয়। তিনি বলেন, আমাদের জবাবদিহিতা হচ্ছে সার্বিকভাবে জনগণের কাছে। কিন্তু ব্যক্তিগতভাবে আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে দায়বদ্ধ। প্রত্যেক মন্ত্রণালয়ের পারফরমেন্স তার হাতে আছে, বিচার বিশ্লেষণ তিনিই করছেন।
পূর্ববর্তী পোস্ট