আন্তর্জাতিক ডেস্ক: চীনে করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১৫৩৩ জনে দাঁড়িয়েছে। এতে আক্রান্ত হয়েছেন ৬৬ হাজার ৪৯২ জন। এছাড়া নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ২ হাজার ৬৪১ জন।
শনিবার চীনের মধ্য প্রদেশ হুবেইয়ের স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো এ তথ্য জানিয়েছে। খবর বিবিসি বাংলার। বিশ্বজুড়ে উদ্বেগ তৈরি করা প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস যার নাম এখন কোভিড-১৯। এই রোগের ভ্যাকসিন আবিষ্কারে কাজ চলছে। এই রোগের ভ্যাকসিন নিয়ে মানুষের আগ্রহের শেষ নেই। সবাই এখন জানতে চায় ভ্যাকসিন আবিষ্কার কত দূর।
কেউ হয়তো আশা করছেন কোনো একটি ঔষধ কোম্পানি দ্রুত এর ভ্যাকসিন বা টিকা বা প্রতিষেধক বাজারে আনবে।
আর আয় করবে মিলিয়ন বা বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার। বে বাস্তবতা হলো এটা হচ্ছে না এখনই। এ জন্য প্রয়োজন সময়ের। বৈশ্বিক ভ্যাকসিন বাজার চলতি বছরে ছয় হাজার কোটি ডলারে দাঁড়াবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে সেখানে বড় ধরনের লাভের কোনো নিশ্চয়তা নেই।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বায়োটেকনোলজি বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান লংকার ইনভেস্টমেন্টের প্রধান নির্বাহী ব্রাড লংকার বলেন, তবে এই টিকা বা প্রতিষেধক সফলভাবে বের করে আনা বেশ জটিল কাজ। আর এর জন্য দরকার অনেক সময় ও অর্থের।
তিনি জানিয়েছেন, কোম্পানিগুলোতে ভ্যাকসিন তৈরি করার মতো পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ নেই। করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণ এখনও অনেক দূরে। বৈশ্বিক ভ্যাকসিন বা টিকা শিল্পে বড় নামগুলো যেমন পিফিজার, মার্ক, গ্লাক্সোস্মিথ, স্যানোফি এবং জনসন অ্যান্ড জনসন।
গত বছর বিশ্বব্যাপী টিকা বিক্রি হয়েছিল পাঁচ হাজার চারশো কোটি ডলার যা ২০১৪ সালের দ্বিগুণ। আর এ বৃদ্ধির মূল কারণ হলো- ইনফ্লুয়েঞ্জা, সোয়াইন ফ্লু, হেপাটাইটিস ও ইবোলার মতো রোগগুলো।
আমস্টার্ডমের ইউনিভার্সিটি মেডিকেল সেন্টার গ্রনিনজেনের মেডিসিন ল’ অ্যান্ড পলিসি বিষয়ক পরিচালক ড. এলেন টি হোয়েন বলেন, করোনার টিকা আবিষ্কারে চারটি সেরা কোম্পানির কেউই এ বিষয়ে কোনো আগ্রহ দেখায়নি কেউ ভাবতে পারে যে এবারের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার মতো অর্থ এই শিল্পের আছে।
তবে বড় কোম্পানিগুলোর বাইরে কিছু ছোট ওষুধ কোম্পানি চেষ্টা করছে কোভিড-১৯ এর টিকা আবিষ্কারের জন্য।
জিলিড, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বায়োটেক প্রতিষ্ঠান যারা এন্টি এইচআইভি ড্রাগ তৈরি করে তারা ঘোষণা করেছে যে, তারা রেমডিসিভির নামে একটি ওষুধ নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা চালাবে। অন্যদিকে কালেট্রা চীনে একজন রোগীকে নিয়ে গবেষণা করছে। তবে দুটি পরীক্ষাতেই বিদ্যমান ওষুধই ব্যবহার করা হচ্ছে।
কোভিড-১৯ এর জন্য টিকা খুঁজতে কোম্পানিগুলোকে উৎসাহিত করতে চ্যারিটেবল ডোনেশন ব্যবহার করা হচ্ছে।
এর মধ্যে একটি হলো অলাভজনক সংস্থা দ্য কোয়ালিশন ফর এপিডেমিক প্রিপেয়ারডসেন ইনোভেশন বা সিইপিআই। এর যৌথ প্রতিষ্ঠাতাদের মধ্যে আছে নরওয়ে ও ভারত সরকার, বিল ও মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন এবং দা ওয়েলকাম ট্রাস্ট।
সিইপিআই ইনোভিও ফার্মাসিউটিক্যালস ও মডার্নার ভ্যাকসিন ডেভেলপমেন্ট কর্মসূচিতে সহায়তা করছে। আর বড়দের মধ্যে জিএসকে তাদের হাতে থাকা প্রযুক্তি দিয়ে সিইপিআইকে সহযোগিতার কথা জানিয়েছে।
টিকার ক্ষেত্রে বিক্রির অনুমতি পাওয়ার আগে অনেক সময় লম্বা সময় ধরে হাজার মানুষের ওপর পরীক্ষার প্রয়োজন হয়।
যদিও ২০০২ ও ২০০৩ সালে সার্সের সময় কোনো টিকাই আনা যায়নি এবং সার্সের জন্য এখনও কোনো টিকা নেই। ইউএস ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব অ্যালার্জি অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজের ডিরেক্টর ড. অ্যান্থনি ফৌচি বলছেন, কোনো বড় কোম্পানিই এগিয়ে এসে বলেনি যে তারা কোভিড-১৯ এর ভ্যাকসিন তৈরি করবে। এটা খুব হতাশাজনক।
তার মতে, কোভিড-১৯ এর ভ্যাকসিন আসতে অন্তত এক বছর সময় লাগবে। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আশা করছে দেড় বছরের মধ্যে এ ভ্যাকসিন বাজারে আসবে।