ন্যাশনাল ডেস্ক: আটকের পর বহিষ্কৃত যুব মহিলালীগ নেত্রী শামীমা নূর পাপিয়ার অপরাধ জগতের চাঞ্চল্যকর নানা তথ্য বের হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে দেহব্যবসা, অস্ত্র-মাদক ব্যবসা করে সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন। ক্ষমতার শীর্ষে না থেকেও দাপট দেখিয়েছেন। মনোরঞ্জণ করে মন যুগিয়েছেন ওপরওয়ালাদের। আবার তাদেরই ব্লাকমেইলিং করে ফাঁদে ফেলেছেন। চাকরি দেয়ার নাম করে হাতিয়ে নিয়েছেন বিপুল পরিমাণ টাকা। প্রশ্ন ওঠেছে, একজন শামীমা নূর পাপিয়া তো একদিনে তৈরী হয়নি। একদিনে হেরেম খুলে বসেননি তিনি। লোকচক্ষুর আড়ালে বসেও করেননি এগুলো। প্রকাশ্যেই ছিলেন, দাপটেই ছিলেন তিনি। ওঠাবসাও করেছেন শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিবর্গদের সঙ্গে।
প্রশ্ন উঠেছে, কীভাবে তিনি গড়ে তোলেন এই আধুনিক হেরেমখানা। তার এই হেরেমে যাতায়াত করতেন কারা? তার পেছনেই বা কে ছিলো? যাদের কারণে এতোদিন নির্বিঘ্নে এসব অপরাধ করে গেছেন তিনি। অনেকে বলছেন, শক্ত রাজনৈতিক কানেকশন তাকে বেপরোয়া করেছে। পাশাপাশি ছিলো প্রশাসনিক ব্যাকআপও।
জানা যায়, ২০০০ সালের দিকে নরসিংদী শহর ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক মতি সুমনের উত্থান শুরু। শৈশব থেকেই চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী কর্মকান্ড ও ব্ল্যাকমেইল ছিল সুমনের প্রধান পেশা। দূরদর্শী, চতুর ও মাস্টারমাইন্ড সুমন রাজনীতিবিদদের সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলেন। ২০০১ সালে পৌরসভার কমিশনার মানিক মিয়াকে যাত্রা প্যান্ডেলে গিয়ে হত্যার পর আলোচনায় আসেন তিনি। এরই মধ্যে বিয়ে করে রাজনীতিতে কাজে লাগান পাপিয়াকে। ভিড়িয়ে দেন প্রভাবশালী রাজনীতিবিদদের সঙ্গে।
২০১৪ সালের ১৩ই ডিসেম্বর জেলা যুব মহিলা লীগের সম্মেলনে তৌহিদা সরকার রুনা সভাপতি ও শামীমা নূর পাপিয়া সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। সম্প্রতি আওয়ামী লীগের সাবেক জেলা সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান প্রয়াত এডভোকেট আসাদুজ্জামানের স্মরণসভায় বিশাল শোউাউন করেন পাপিয়া-মতি সুমন।
এক ব্যবসায়ী জানান, ব্ল্যাকমেইলিংই পাপিয়া-মতি সুমন দম্পতির প্রধান পেশা। তারা প্রথমে বিভিন্ন ধনাঢ্য ব্যক্তির কাছে সুন্দরী নারীদের পাঠান। তারপর কৌশলে ধনাঢ্য ব্যক্তিদের ডেকে এনে তাদের কর্মকাণ্ড ভিডিও করেন। পরে তাদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেন।
রোববার সকালে রাজধানীর ফার্মগেট ইন্দিরা রোডে পাপিয়ার বাসায় অভিযান চালিয়ে ১টি বিদেশি পিস্তল, ২টি ম্যাগজিন, ২০ রাউন্ড গুলি, ৫ বোতল বিদেশি মদ, ৫৮ লাখ ৪১ হাজার টাকা, ৫টি পাসপোর্ট, ৩টি চেক, বেশ কিছু বিদেশি মুদ্রা ও বিভিন্ন ব্যাংকের ১০টি এটিএম কার্ড উদ্ধার করেছে র্যাব।
শনিবার দুপুরে রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হয়ে দেশত্যাগের সময় শামীমা নূর পাপিয়া ওরফে পিউসহ (২৮) চারজনকে আটক করে র্যাব-১।
যুবলীগ নেত্রী পাপিয়া পিউ নামেই বেশি পরিচিত। রাজনীতির অঙ্গনে পা দিয়েই নানা অপরাধ কাণ্ডের হাতেখড়ি। রাজনীতিবিদদের সঙ্গে ছবি তুলে তা প্রচারের মাধ্যমে নিজের অবস্থান জানান দেয়ার কৌশল। ক্রমে নেতাকর্মীদের মাঝে পরিচিতি পাওয়ার সঙ্গে বাড়ে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড। প্রভাব খাটিয়ে বনে যান যুব মহিলা লীগ নরসিংদী জেলার সাধারণ সম্পাদক। মাস ছয়েক আগে গুরুত্বপূর্ণ এই পদ পাওয়ার পর যেন আলাদীনের চেরাগ হাতে মিলে। কয়েক মাসে অন্ধকার জগতে বিশাল সম্রাজ্য গড়ে তুলে কামিয়েছে কোটি কোটি টাকা। তিনি শামিমা নূর পাপিয়া ওরফে পিউ। যুব মহিলা লীগ নেত্রীর পরিচয়ে অভিজাত ব্যক্তি ও রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে হেন অপরাধ নেই যা পাপিয়া করেননি।
এই অপরাধ সম্রাজ্ঞীর নানা অপরাধ কাণ্ডের তথ্য মিলেছে। রাজনীতিতে নাম লেখানোর আগে অনেকটা সাধারণ ঘরের সন্তান পাপিয়া সাধারণ জীবনেই অভ্যস্ত ছিলেন। বিয়ের পর স্বামী মফিজুর রহমান সুমনের হাত ধরে রাজনীতি ও অপরাধকাণ্ডে জড়ান পাপিয়া। কয়েক বছর আগে স্থানীয় আওয়ামী লীগের এক প্রভাবশালী নেতার সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে স্বামীকে নিয়ে এলাকা ছাড়েন। ঢাকায় এসে গড়ে তোলেন নিরাপদ আস্তানা। মাসের পর মাস ব্যবহার করেছেন পাঁচ তারকা হোটেলের প্রেসিডেন্সিয়াল স্যুট। চলাফেরা করেন সামনে পিছনে গাড়ির বহর নিয়ে। প্রভাবশালী অনেক রাজনীতিকের সান্নিধ্যে যাওয়ার সুযোগে তাদের সঙ্গে ছবি তোলে প্রকাশ করেছেন নানা মাধ্যমে। এখন কি নেই তার? বিলাসবহুল গাড়ি, ফ্ল্যাট, প্লট। আছে দেশে বিদেশে কোটি কোটি টাকার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। শুধু তাই নয়, অপরাধ জগতের ষোলকলাই পূর্ণ করেছেন। অবৈধ অস্ত্র ব্যবসা থেকে শুরু করে মাদক ব্যবসা, জাল নোটের ব্যবসা, তদবিরবাজি, চাঁদাবাজি, জিম্মি করে টাকা আদায়, নারীদের দিয়ে অনৈতিক ব্যবসা, অশ্লীল ভিডিও দিয়ে ব্ল্যাকমেইলিং, অন্ধকার জগতের সব পথেই পা দিয়েছেন তিনি। ধীরে ধীরে হয়ে উঠেন অপরাধ জগতের রানী। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি।
শনিবার দিল্লী যাবার সময় র্যাবের একটি টিম শামিমা নূর পাপিয়া ওরফে পিউ তার স্বামী মফিজুর রহমান ওরফে সুমন চৌধুরী ওরফে মতি সুমন ও তাদের সহকারী সাব্বির খন্দকার ও শেখ তায়্যিবাকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে আটক করেছে। এসময় তাদের কাছ থেকে ৭টি বাংলাদেশি পাসপোর্ট, ৭টি মোবাইল, বাংলাদেশি নগদ ২ লাখ ১২ হাজার ২৭০ টাকা, ২৫ হাজার ৬০০ টাকার জাল নোট, ভারতীয় রুপি ৩১০, শ্রীলংকান মুদ্রা ৪২০ ও ১১ হাজার ৯১ ইউএস ডলার পাওয়া যায়। আর গতকাল তাদের দেয়া তথ্যমতে, ফার্মগেটের ইন্দিরা রোড ও হোটেল ওয়েস্টিনের বুকিং করা প্রেসিডেন্সিয়াল স্যুটে অভিযান চালিয়ে র্যাব ১টি বিদেশি পিস্তল, ২টি পিস্তলের ম্যাগাজিন, ২০ রাউন্ড পিস্তলের গুলি, ৫ বোতল বিদেশি মদ, নগদ ৫৮ লাখ ৪১ হাজার টাকা, আরও ৫টি পাসপোর্ট, ৩টি চেক বই, কিছু বিদেশি মুদ্রা, বিভিন্ন ব্যাংকের ১০টি ভিসা/এটিএম কার্ড উদ্ধার করা হয়েছে।
র্যাব সূত্র জানিয়েছে, পাপিয়ার প্রধান ব্যবসাই ছিল এসকর্ট সার্ভিস। চাকরি দেবার প্রলোভন দেখিয়ে সে দেশের বিভিন্ন স্থানের নারীদের ঢাকায় নিয়ে আসতো। তাদের কখনও তার বাসায় আবার কখনও পাঁচ তারকা হোটেলে রেখে অনৈতিক কাজে বাধ্য করতেন। র্যাব জানায়, চাকরির নাম করে আনা কম বয়সী তরুণীদের চাকরি সে ঠিকই দিত তবে সেটি এসকর্ট সার্ভিসে। চাহিদা বুঝে সর্বনিম্ন ৮ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ৩০ হাজার টাকা বেতন দিত সে। বিনিময়ে এদেরকে দিয়ে কামিয়ে নিত লাখ লাখ টাকা। যেসব তরুণীরা অনৈতিক কাজ করতে অস্বীকৃতি জানাতো তাদের সে বেধড়ক মারধর করতো। অমানষিক নির্যাতনের জন্য অনেক তরুণী এখন ট্রমার মধ্যে আছে। ঢাকায় তার হেফাজতে নিয়ে আসার পরপরই তরুণীদের পরিবারের লোকজনের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ বন্ধ করে দিত। ইচ্ছা না থাকলেও অনেক তরুণীকে বাধ্য করা হতো এসব কাজে।
সূত্র জানায়, পাপিয়ার টার্গেট থাকতো কম বয়সী শিক্ষার্থীদের। তাই সে বিভিন্ন কৌশলে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া তরুণীদের সংগ্রহ করতো। র্যাব পাপিয়াকে আটকের পর সাত তরুণীর তথ্য পেয়েছে। এসব তরুণীরা গাজীপুর ও নরসিংদী এলাকার শিক্ষার্থী। পাপিয়া তার হেফাজতে থাকা তরুণীদের ভালো ছবি, বয়স, উচ্চতা, পেশা, শারীরিক গঠনের বর্ণনা দিয়ে প্রথমে অভিজাত ক্লায়েন্টের কাছে পাঠিয়ে দিত। এসব ছবি দেখে ক্লায়েন্ট আগ্রহ না দেখালে পরবর্তীতে তরুণীদের নগ্ন ছবি তুলে পাঠাতো। ক্লায়েন্টের পছন্দ হলে স্থান নির্ধারণ করতো পাপিয়া নিজেই। ক্লায়েন্ট পাপিয়ার আস্তানায় না আসতে চাইলে তাদের পছন্দমত স্থানে পাঠিয়ে দেয়া হতো। ক্লায়েন্টের বাসায় বা হোটেলে তরুণীদের পৌঁছে দেবার কাজ করতো পাপিয়ার স্বামী সুমন ও তার সহকারী সাব্বির খন্দকার।
র্যাব বলছে, পাপিয়ার আস্তানায় কেউ এসে তরুণীদের সঙ্গে মেলামেশা করলে কৌশলে গোপণে ভিডিও ধারণ করা হতো। ক্লায়েন্ট চলে যাবার পর এসব অন্তরঙ্গ মূহুর্তের ভিডিও ও ছবি দিয়ে তাদের ব্ল্যাকমেইল করা হতো। ভিডিও/ছবি প্রকাশ করার ভয় মাসের পর মাস দেখিয়ে হাতিয়ে নিত লাখ লাখ টাকা। একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে এমন ঘটনা ঘটেছে বলে র্যাব জানতে পেরেছে।
র্যাব সূত্র জানিয়েছে, পাপিয়া ও সুমন চলাফেরা করতো অভিজাত লোকদের সঙ্গে। পাঁচতারকা হোটেলে বসেই তাদের সঙ্গে আড্ডা দিতো তারা। গত বছরের নভেম্বর মাস থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ওয়েস্টিন হোটেলের ২১তলার প্রেসিডেন্সিয়াল স্যুুটের চারটি রুম ভাড়া করে পাপিয়া, সুমন ও তাদের সহযোগীরা অবস্থান করছিলো। ভিআইপি ক্লায়েন্টদের জন্য এসব কক্ষেই মনোরঞ্জনের ব্যবস্থা করা হতো। ভিআইপিদের জন্য পাপিয়া পুরো একটি বারই বুকিং দিয়ে রাখতো। প্রতিদিন শুধু বারের বিলই তিন লাখ টাকা পরিশোধ করতো সে। বারের আড্ডায় সমাজের বিভিন্ন স্থরের ব্যক্তিরা উপস্থিত থাকতেন। র্যাব জানিয়েছে, তিন মাসে প্রেসিডেন্সিয়াল স্যুট, বার সব মিলিয়ে পাপিয়া অন্তত তিন কোটি টাকা হোটেল বিলই পরিশোধ করেছে।
সূত্র জানিয়েছে, সাত বছর আগে পাপিয়ার সঙ্গে সুমনের বিয়ে হয়। তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। স্বামী স্ত্রী দুজনেই উচ্ছৃঙ্খল জীবন যাপনে অভ্যস্ত। তিন বছর আগে পাপিয়ার স্বামী সুমন এক সময় নরসিংদী ছাত্রলীগের রাজনীতি করতেন। সাবেক প্রয়াত মেয়র লোকমান হোসেনের হাত ধরেই তার ছাত্র রাজনীতিতে প্রবেশ। তার পর থেকেই বিভিন্ন রকম অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে তার সম্পৃক্ততা ছিল। তার বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ রয়েছে। লোকমানের পর মেয়র কামরুজ্জামানের ক্যাডার হিসেবে সুমন কাজ করতেন।
র্যাব জানিয়েছে, পাপিয়া ও সুমন নরসিংদী এলাকায় তাদের নিজস্ব ক্যাডার বাহিনী কিউ এন্ড সি গড়ে তুলে। তাদের প্রত্যেকের হাতে কি এন্ড সি ট্যাটু করা আছে। এই বাহিনীর প্রত্যেকের বাইক আছে। তারা মূলত পাপিয়া ও সুমনকে মোটরসাইকেলের বহর দিয়ে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নিয়ে যায়। এছাড়াও তারা পাপিয়া ও সুমনের নির্দেশে বিভিন্ন রকম অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড করে। এলাকায় অবৈধ অস্ত্র ও মাদক ব্যবসা, চাকুরি দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণা, জমির দালালি, দখল, সিএনজি পাম্পের লাইসেন্স প্রদান, গ্যাস লাইনের সংযোগ স্থাপনের নামে মানুষের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা নিয়েছে। কাজ না হলে কেউ টাকা ফেরৎ চাইলে তাদের তার টর্চার সেলে নিয়ে নির্যাতন করতো। এরকম শত শত ভুক্তভোগী রয়েছেন।
র্যাব জানায়, পুলিশের এসআই পদে চাকুরি দেয়ার নাম করে পাপিয়া ১১ লাখ ও একটি কারখানায় অবৈধ গ্যাস সংযোগ দেয়ার কথা বলে ২৯ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। র্যাব পাপিয়া ও তার স্বামী সুমনের নামে ঢাকা, নরসিংদী ও গাজীপুরে বিপুল পরিমাণ সম্পদের তথ্য পেয়েছে। কোনো সূনির্দিষ্ট ও দৃশ্যমান পেশা ছাড়াই তারা এই বিপুল পরিমান সম্পদের মালিক হয়েছে। বিভিন্ন ব্যাংকের হিসাবে তাদের রয়েছে লাখ লাখ টাকা। ধারণা করা হচ্ছে দেশের বাইরেও তাদের বিপুল পরিমাণ সম্পদ ও ব্যবসা বাণিজ্য রয়েছে। র্যাব ইতিমধ্যে দেশের বাইরে পাপিয়ার স্বামী সুমনের একটি বার থাকার তথ্য পেয়েছে। দেশের সম্পদের মধ্যে রয়েছে ঢাকার ফার্মগেটের ২৮ ইন্দিরা রোডে ‘রওশন ডমিনো রিলিভো’ ভবনে কয়েক কোটি টাকা মূল্যের ২টি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট। নরসিংদী শহরে রয়েছে ২টি ফ্ল্যাট। রয়েছে বিলাসবহুল বাড়ি। নরসিংদীর বাগদী এলাকায় ২ কোটি টাকা মূল্যের ৬ কাটা ও ১০ কাটার দুটি প্লট। তেজগাঁও এফডিসি এলাকায় কার একচেঞ্জ নামক একটি গাড়ির শো-রুমে প্রায় ১ কোটি টাকা বিনিয়োগ আছে। নরসিংদী জেলায় কেএমসি কার ওয়াস এন্ড অটো সলিউশন নামক প্রতিষ্ঠানে ৪০ লাখ টাকা বিনিয়োগ। তার শশুর বাড়ি বাহ্মণদীতে একটি দোতলা বাড়ি আছে। চলাফেরা করার জন্য তাদের কালো ও সাদা রঙ্গের দুটি হাইয়েস মাইক্রোবাস, ১টি হ্যারিয়ার, ১টি নোহা ও ১টি প্রাইভেট কার আছে।
র্যাব সূত্র জানায়, থাইল্যান্ডে সুমনের একটি মদের বার রয়েছে। নরসিংদীর বাগদী মারকাজ মসজিদ এলাকায় একটি পাকা ও আরেকটি সেমিপাকা টিনশেড বাড়ি রয়েছে। সেমিপাকা বাড়িটি টর্চার সেল নামেই পরিচিত। টর্চার সেলে পাপিয়া তার অবাধ্যদের নিয়ে শায়েস্তা করা হতো। এদিকে হঠাৎ করে পাপিয়াকে গ্রেপ্তার নিয়ে দেশজুড়ে আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে।
এদিকে রোববার পাপিয়াকে নরসিংদী যুব মহিলা লীগ থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে।
দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন-এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে পত্রিকাটির নির্বাহী সম্পাদক পীর হাবিবুর রহমান লিখেছেন, ‘এদের কেউ রাজনৈতিকভাবে ক্ষমতাবান কেউ বা প্রশাসনিকভাবে ক্ষমতাবান কেউ বা অর্থবান। কেবল বেশ্যাকে আটক করলেই হবে না, তার দালাল এবং খদ্দেররা যত ক্ষমতাবানই হোক তাদেরকেও আটক করা প্রয়োজন। না হয় এই কলুষিত অন্ধকার পথ থেকে রাজনীতি, প্রশাসন ও সমাজকে আলোর পথে ফিরিয়ে আনা যাবে না। মন্ত্রীদের বাড়ি বাড়ি, অফিসে অফিসে, সচিবালয়ে কর্মকর্তাদের দুয়ারে দুয়ারে সকাল-সন্ধ্যা দলীয় পদ-পদবি পরিচয়ে একদল নারী কেন ছুটছে? দীর্ঘদিন ধরে এই প্রশ্ন সমাজে ওঠছে। ক্ষমতার ছায়ায় থেকে সারা দেশে কারা নানা পদ-পদবি ও ক্ষমতা এবং অর্থবিত্তের মালিক হচ্ছে এই প্রশ্ন জোরালো হচ্ছে। উত্তর মিলছে না। মানুষের মুখে মুখে একেকটি চরিত্র নিয়ে কত কথা উড়ে। কিন্তু মানুষ অসহায়। অতীতের কোনো কালে এই ধরনের আগ্রাসী রাজনৈতিক বাণিজ্যে একদল অসৎ পুরুষের সঙ্গে এমন করে একদল লোভী অসৎ নারী পাল্লা দিয়ে ছুটেনি।
কারা চেয়েছেন তাকে শয্যায়। নষ্টদের হাতে সবকিছু চলে যাওয়ায় অসৎ দাপুটেরা ভুলে যাচ্ছে, কী নিয়ে অহংকার করা গৌরবের আর কী নিয়ে আত্মঅহংকারে ভোগা বা দম্ভ করা লজ্জা ও গ্লানির। একটা অস্থির ও অশান্ত সময় অতিক্রম করছি আমরা।
পাপিয়া পিউদের মতো নষ্ট নারী আটক হলে জানা যায় কতটা অপরাধী। যে নারী ও পুরুষ ক্ষমতার ছায়ায় থেকে ক্ষমতাবানদের সহযোগিতায় অসৎ মতলব হাসিল করে অঢেল অর্থ-সম্পদ বাগিয়ে নিয়েছে তাদের খবর আর জানা যায় না।’