ডেস্ক রিপোর্ট: দেবহাটার সাপমারা খাল পুনঃখননের মূল প্রতিবন্ধকতা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে দ্বিতীয় দফায় দিনভর অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। মঙ্গলবার সকাল ১০ টা থেকে উপজেলার পারুলিয়া ব্রীজ ও মৎস্য সেড সংলগ্ন সাপমারা খালের উত্তর পাড়ের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে অভিযান পরিচালনা করে সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।উচ্ছেদ অভিযানে নেতৃত্ব দেন সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার ও নিবার্হী ম্যাজিষ্ট্রেট মো. নুরুল আমিন।সকাল থেকে পারুলিয়া ব্রীজ সহ আশপাশের এলাকাজুড়ে পুলিশ মোতায়েন রেখে একযোগে বৃহদাকৃত্রির তিনটি এস্কেভেটর মেশিন (ভেকু মেশিন) দিয়ে সাপমারা খালের উত্তর পাড় দখল করে থাকা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে অভিযান শুরু করে প্রশাসন।
দিনভর চলমান উচ্ছেদ অভিযানে বেশ কিছু বড় অবৈধ স্থাপনা এস্কেভেটর মেশিন দিয়ে ভেঙে মাটির সাথে মিশিয়ে দেয়া হয়।
তবে কেবলমাত্র সাপমারা খালের উত্তর পাড়ের অবৈধ স্থাপনা প্রশাসন উচ্ছেদ করলেও, খালের দক্ষিণ পাশ জুড়ে থাকা স্থাপনা গুলো জাল কাগজপত্রের মাধ্যমে রেকর্ডীয় সম্পত্তি বনে যাওয়ায় বহাল অবস্থানে রয়ে গেছে। নদী খনন আইন অনুযায়ী প্রবহমান নদী বা খালের মধ্যভাগ থেকে দুপাড়ে সমান জায়গার অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ ও খনন করার নিয়ম থাকলেও, কেবলমাত্র উত্তর পাড়ের স্থাপনা গুলো উচ্ছেদ এবং খালের দক্ষিণ পাড়ের স্থাপনাসমূহ বহাল অবস্থানে থাকায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় ব্যবসায়ী সহ সকল শ্রেনীর সাধারণ মানুষ। উচ্ছেদ অভিযান চলাকালে সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবুল খায়ের, উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী রাশিদুর রহমান, সংশ্লিষ্ট শাখা ব্যবস্থাপক (এসও) সাইদুর রহমান, সার্ভেয়ার আলহাজ্ব নুরুল্লাহসহ জেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। উল্লেখ্য, যুগ যুগ ধরে প্রবহমান খালটির তলদেশে পলিমাটি ভরাট হয়ে চরাঞ্চলের সৃষ্টি এবং স্থানীয় অবৈধ দখলদারদের দখল প্রবণতায় নাব্যতা হারিয়ে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছিলো ইছামতি নদীর সাথে সংযুক্ত এক সময়ের প্রাণবন্ত সাপমারা খালটি।
ফলে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা প্রায় পুরোপুরি বন্ধ হওয়ায় বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতা ও জনদুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছিলো। তাছাড়া খালের পানি প্রবাহের স্বাভাবিক ধারা মুখ থুবড়ে পড়ায় ডোবা নালার মতো জমাট বাধা হাটু পানিতে ময়লা আবর্জণা পচে তীব্র দুর্গন্ধে দূষিত হয়ে উঠেছিলো এলাকার পরিবেশ। সাম্প্রতিক সময়ে জণসাধারণের দাবী অনুযায়ী জলাবদ্ধতা নিরসণসহ উদ্ভুত সমস্যা সমাধান এবং পুণরায় সাপমারা খালটির নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে দেবহাটার ভাতশালা এলাকার ইছামতি নদীর সংযোগস্থল থেলে শুরু করে আশাশুনী উপজেলার মধ্য কামালকাটি পর্যন্ত খালটির ১৯ কিলোমিটার বিস্তৃর্ণ এলাকা নদী খনন পর্যায়ে পুনঃখননের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে দুটি প্যাকেজে ১৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয় সরকার। সরকারি বরাদ্দ অনুযায়ী টেন্ডারের মাধ্যমে বিগত অর্থ বছরের মাঝামাঝিতে খনন কার্যক্রম শুরু করে দুটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। বর্তমানে সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) সার্বিক তত্বাবধানে ডিজাইন মাফিক বেশ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে খনন কার্যক্রম। ইতোমধ্যেই খালটির বিস্তৃর্ণ ১৯ কিলোমিটার এলাকার মধ্যে প্রায় অর্ধেক অর্থাৎ ৯ কিলোমিটার এলাকার খনন কাজ পুরোপুরি শেষ হয়েছে। এতে করে ক্রমশ আবারো দৃশ্যমান হওয়ার পাশাপাশি প্রাণ ফিরে পেতে শুরু করেছে সাম্প্রতিক সময়ে অস্তিত্ব সংকটে পড়া সাপমারা খালটি। তবে সরকারের গৃহীত সুষ্ঠভাবে বাস্তবায়ন ও জনপ্রত্যাশা পূরণে পারুলিয়া ব্রিজের পাশ্ববর্তী সাপমারা খালের দুপাশে সমানভাবে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা পরবর্তী খালটি সুষ্ঠভাবে পুনঃখননের দাবী জানিয়েছেন সর্বস্তরের মানুষ।