এক ফাল্গুনে পরম পিতা এখানে এসেছিলেন
-শুভ্র আহমেদ
———————————————————-
(স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বঙ্গবন্ধু সেই একবারই সাতক্ষীরার এসেছিলেন, সেদিনের এবং অগ্রজ সাত কবির কথা মনে রেখে)
১.
তখন আমি সাত বছরের।
বাবার হাত ধরে সেই প্রথম আমি
আমার পরম পিতার সান্নিধ্যে যাবো
দেখবো মানুষটাকে, কথা শুনবো তার
কি কথা? তা তো জানি নে, অপেক্ষা ;
অপেক্ষা সেই সকাল থেকে। খুব ভোরে ঘুম
থেকে জেগে আমার সবচেয়ে পছন্দের
লাল রঙের জামা পরে বসে আছি
মাও যাবেন,যাবেন পাশের বাড়ির
খালা-চাচি-মামা-ফুফুরাও।
ফাল্গুন মাস।শীতের আড়মোড়া ভেঙে গাছে গাছে
শতফুল,আম্র মুকুলের সুবাসিত গন্ধে ভ্রমর আর
মৌমাছির বিচিত্র গুঞ্জরণ।বাবা যখন বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেছেন তখন আমি ঘুমিয়ে, অবশ্য
রাতেই বাবা বলেছেন আমাকে তিনি সাথে নিয়ে যাবেন
তাই এই প্রস্তুতি।
আমি জানতাম প্রতিশ্রুতি দিলে বাবা তা রাখতেনই।
(২)
বাবা এলেন।
চললাম আমি পরম পিতার সান্নিধ্য পেতে
লক্ষ জনতার ফিসফিস, কাঠের নৌকা পুস্পিত,রঙিন
রথখোলার মাঠ আর বিলের বুকে
; ‘তিল ঠাঁই আর নাহিরে ‘
দেখা যাচ্ছে এমন বাড়ি -ঘরগুলোর ছাদ আর ছাদ-বারান্দা
জুড়ে শুধু মানুষ আর মানুষ।
বাবা বললেন, তুমি স্টেজে থাকো
আমি হেলিপ্যাডে যাচ্ছি
আমি সেদিন হেলিপ্যাড বিষয়ে অজ্ঞই ছিলাম
অরুণ রবির হাত ধরে আমি স্টেজে উঠলাম।
সাউণ্ড সিষ্টেমে বিরামহীন ভেসে আসছে
; ‘জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু’
লক্ষ কন্ঠস্বর দশ দিগন্ত কাঁপিয়ে বলে উঠলো
; ‘জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু’
(৩)
সহসা বুম বুম শব্দ। চঞ্চল জনতার চোখ
আকাশমুখি,ফড়িং এর ডানায় ভেসে ঐ তো
আসছেন আমাদের পরম পিতা ;শব্দের জেল্লা
শব্দ বেড়ে গেলো। আকাশ ফড়িং আরো ভালো
দৃশ্যমান হলো;আকাশে বার কয়েক চক্কর
লক্ষ জনতার ;’জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু’ ধ্বনির
সাথে বড় ফড়িংটার শ্বাস-প্রশ্বাস হালকা
ঝড়ো হাওয়া
জনতার সাথে জনতার শুরু হলো পাহাড় সমান
মিত্রতা, জীবনের স্তুতিগান,পরম পিতা নেমে এলেন
তার প্রসারিত দুই বাহু,জনজোয়ারে কেউবা হাসছে
কেউবা কাঁদছে,এ কান্না আনন্দের, কেউবা চিৎকার করে
বলছে,পিতা আমরা তোমাকে ভালোবাসি
তোমাকে ভালোবাসি
তোমাকে ভালোবাসি
(৪)
পিতা এসে দাঁড়ালেন ; ভারী লেন্সের পুরো চশমাটা
খুলে রাখলেন পাশের ডায়াসে। এগিয়ে গেলেন
স্টেজের আরো সামনে, যেনো তিনি তার প্রিয়
মানুষগুলোর মধ্যে নেমে যাওয়ার সিঁড়ি খুঁজছেন।
সহস্র কন্ঠে আবার ধ্বনি-প্রতিধ্বনিত হলো
; ‘জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু’
সুখ আর আনন্দচিত্তে তিনি শ্রদ্ধা আর কোটি কৃতজ্ঞতায়
ভরে তুললেন লাখো শহিদ আর জনতার অতৃপ্ত হৃদয়
তিনি কম সম্পদ আর অনেক বেশি স্বপ্নের
কথা বললেন; এক সময় তার বজ্রমুখ কন্ঠস্বরের কাছে
যন্ত্র পরাস্ত হলো। যন্ত্রহীন কন্ঠে তিনি তার
মানুষদের,তার সন্তানদের আরো কাছাকাছি যেনো
(৫)
নৈঋতে তখন নতুন করে সূর্য উঠলো
বেনুর সুরে আমোদিত পবন নির্মল বাতাসে ভরে দিলো
মীনাক্ষী রাবেয়াদের গৃহ।জোয়ারে প্লাবিত বেত্রবতী বেগবান হলো
নৌকার গলুইয়ে দাঁড়িয়ে মাঝির ভাটিয়ালি কণ্ঠ
গেয়ে উঠলো প্রত্যয় দীপ্ত দেশ গড়ার গান
কলের চাকা বিরামহীন বৃত্তীয় গতি পেলো
পিতা
পিতা
পিতা
সবশেষে তিনি শোনালেন সেই অমৃত বচন
বাণী চিরন্তন
;’আমি ভবিষ্যত বংশধরদের উন্নত জীবনের
প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি ‘
(৬)
পরম পিতার জন্মের শতবর্ষ আজ
আমার রক্তের লোহিত, শ্বেত আর অণুচক্রিকায়
কেবলই ধ্বনিত হচ্ছে
এক ফাল্গুনে এসেছিলেন
এক ফাল্গুনে পরম পিতা এখানে এসেছিলেন
এক ফাল্গুনে জাতির পিতা এখানে এসেছিলেন
মুজিববর্ষে,আজ আরেকবার একশত শাপলা
তার বিশ্বস্ত হাতে তুলে দিয়ে
মুক্তকণ্ঠে,শতকণ্ঠে ডেকে উঠবো
পিতা
পিতা
পিতা