লাইফস্টাইল ডেস্ক: পুরো বিশ্বকে তছনছ করে দিয়েছে কভিড-১৯ বা করোনাভাইরাস। ভয়াবহতম এ মহামারিতে থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় হচ্ছে সতর্কতা এবং সচেতনতা। যতটা সম্ভব জনসমাগম এড়িয়ে চলা। ঘন ঘন সাবান কিংবা লিকুইড হ্যান্ডওয়াশ বা স্যানিটাইজার দিয়ে হাত ধোয়াই কি যথেষ্ট? আমাদের কাছে থাকা ডিভাইসের কথা ভুললে চলবে না। এগুলো পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত রাখাও জরুরি।
কিন্তু কিভাবে গ্যাজেটগুলো জীবাণুমুক্ত রাখা যায়? এটি খুব কঠিন কাজ নয়। এর জন্য প্রয়োজন মাইক্রোফাইবারের কাপড়, তুলা, ডিস্টিলড ওয়াটার, ইজোপ্রোপাইল অ্যালকোহল এবং ডিশওয়াশ। তবে পরিষ্কার করার আগে অবশ্যই গ্যাজেটগুলো আনপ্লাগ বা বন্ধ করতে ভুলবেন না।
ফোন, ট্যাব বা আইপ্যাড পরিষ্কার
ফোন, ট্যাব বা আইপ্যাডে আছে ওলিওফোবিক বা ফিঙ্গারপ্রিন্ট প্রতিরোধকের একটা স্তর, যা সহজে উঠে আসতে পারে। এ জন্য এ ডিভাইস প্রস্তুতকারকরা সবসময় বলে থাকেন, মাইক্রোফাইবার কাপড়ে ডিস্টিলড ওয়াটার নিয়ে গ্যাজেটগুলো মুছে নিতে। এরপর তুলা দিয়ে বাটন এবং স্ক্রিনের পাশগুলো পরিষ্কার করতে। তবে অ্যাপল তাদের ফোন, ট্যাব বা আইপ্যাড পরিষ্কার করার ম্যানুফ্যাকচারার নিয়মে কিছুটা পরিবর্তন এনেছে। এসব পণ্য পরিষ্কারের জন্য ৭০ শতাংশ আইসোপ্রোপাইল ওয়াইপ বা ক্লোরোক্স ডিসইনফেক্টিং ওয়াইপ ব্যবহার করতে বলা হয়েছে। যতটা সম্ভব খোলা জায়গায় ডিভাইস ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে হবে। অ্যালকোহল বা ক্লোরোক্স ওয়াইপ না পেলে আর একটি ব্যবস্থায় স্প্রে তৈরি করে নেওয়া যায়। ৯৯ শতাংশ আইসোপ্রোপাইল অ্যালকোহল, ডিস্টিলড ওয়াটার অথবা ৭০ শতাংশ অ্যালকোহল ও ৩০ শতাংশ পানি একসঙ্গে মিশিয়ে একটি স্প্রে তৈরি করে নিতে পারেন। এটা দিয়ে ডিভাইসগুলো স্প্রে করে মাইক্রোফাইবার কাপড় দিয়ে মুছে নিলেই পরিষ্কার হয়ে যাবে। কাপড়টি অবশ্যই পরে ফেলে দিতে হবে। ডিভাইসের কভারগুলোও একই উপায়ে পরিষ্কার করতে পারবেন। তবে কভারটি অবশ্যই পরিষ্কার করে শুকিয়ে নিয়ে এরপর ব্যবহার করুন।
হেডফোন বা ইয়ারফোন
ফোন বা ট্যাবের পর যদি কোনো গ্যাজেট সবচেয়ে বেশি প্রিয় এবং কাছের হয়, সেটা নিঃসন্দেহে এই হেডফোন বা ছোট্ট একটি ইয়ারফোন। ঘামের সঙ্গে এতে প্রচুর জীবাণুও আছে, যা সবসময়ই আপনার সঙ্গে চলছে। সচরাচর বলা হয়, একটি মাইক্রোফাইবার কাপড় সামান্য কাপড় দিয়ে ভিজিয়ে নিয়ে এই ডিভাইসগুলো পরিষ্কার করে নেওয়া যায়। কিন্তু দুই মাস আগে যে পরিস্থিতি ছিল, এখন আর সেই স্বাভাবিক অবস্থা নেই। তাই ডিভাইসগুলো জীবাণুমুক্ত রাখতে সেই একই অ্যালকোহল সলিউশন স্প্রে করে মাইক্রোফাইবার কাপড় দিয়ে পরিষ্কার করে নিলেই হবে। তারসহ পুরো ডিভাইসটি একইভাবে জীবাণুমুক্ত করুন।
যাপটপ
যেহেতু আপনি বাইরে চলাচল করছেন, সেই সঙ্গে আপনার ল্যাপটপও। তাই এই ল্যাপটপেও জীবাণু আক্রমণের সব রকম সুযোগ আছে। এজন্য প্রথমেই আপনার ল্যাপটপটি উল্টিয়ে কিবোর্ডের দিকটি একটু ঝাঁকি দিয়ে ভেতরের ময়লা বের করে নিন। এরপর সম্ভব হলে কমপ্রেশড এয়ার ডাস্টার দিয়ে বা জোরে ফুঁ দিয়ে ভেতরটা পরিষ্কার করতে পারেন। এরপর ল্যাপটপ আনপ্লাগ করে এবং ব্যাটারি খুলে একটি মাইক্রোফাইবার কাপড় সামান্য পানিতে ভিজিয়ে স্ক্রিন বাদে সম্পূর্ণ ল্যাপটপ মুছে নিতে হবে। এলসিডি স্ক্রিন পরিষ্কারের জন্য আলাদা স্ত্রিন ক্লিনার আছে। যেটা মাইক্রোফাইবার কাপড়ে নিয়ে স্ক্রিন পরিষ্কার করতে হবে। এই ধরনের ক্লিনারগুলোই এলসিডি স্ক্রিনের সূক্ষ্ণ দাগগুলো পরিষ্কার করতে সক্ষম, যা অন্য সাধারণ ক্লিনারগুলো করতে পারে না। টাচস্ক্রিন পরিষ্কার করতে পানি বা চশমার গ্লাস পরিষ্কার করার ক্লিনার ব্যবহার করতে হবে। এ ছাড়া নোটবুক এবং ট্যাবলেট ক্লিনিং ওয়াইপগুলোও ব্যবহার করতে পারবেন।
কম্পিউটার
ল্যাপটপ যেভাবে পরিষ্কার করছেন, একইভাবে আপনার ডেস্কটপ পিসিও পরিষ্কার করতে পারবেন। স্ক্রিনের বাইরের প্লাস্টিক অংশে পানি ছাড়াও যে কোনো উইন্ডো বা গ্লাস ক্লিনার ব্যবহার করতে পারবেন। কিবোর্ডটা ভালোমতো ঝাঁকি দিয়ে ভেতরের সব ময়লা বের করে হালকা পানিতে ভেজানো মাইক্রোফাইবার কাপড় দিয়ে মুছে নিলেই হবে। এ ছাড়া সমান পরিমাণ আইসোপ্রোপাইল অ্যালকোহল ও পানির মিশ্রণও ব্যবহার করতে পারেন। মাউসও একইভাবে ভীষণ জীবাণু আক্রান্ত হয়। আপনি একইভাবে আগের অ্যালকোহল পানির মিশ্রণ অনায়াসে ব্যবহার করতে পারবেন। তারগুলোও একইভাবে পরিষ্কার করুন।
টেলিভিশন
আপনার সাধের টিভিটির সামনে দাঁড়ালেন, সাধারণ গ্লাস ক্লিনার দিয়েই পরিষ্কার করলেন। আর হয়ে গেল পরিষ্কার। না, আপনার এতদিনের ধারণা ভুল ছিল সম্পূর্ণ। গ্লাস ক্লিনারগুলোতে অনেক ক্ষারদ্রব্য থাকতে পারে, যা আপনার বর্তমানে যে টিভিগুলো তৈরি হয়, তার স্ক্রিনের ওপরের অ্যান্টি রিফ্লেক্টিভ কোটিংয়ের জন্য ভীষণ পরিমাণে সংবেদনশীল। তাই মাইক্রোফাইবার কাপড় পানি দিয়ে ভিজিয়ে পরিষ্কার করলেই হবে। রিমোট অবশ্যই আগের অ্যালকোহল-পানির মিশ্রণ দিয়ে স্যানিটাইজ করে নেবেন। তুলা দিয়ে বাটনের কোনাগুলো অবশ্যই মুছে নিবেন।
স্মার্ট স্পিকার
বাসার অন্য গ্যাজেটগুলোর মতো আপনার আমাজন ইকো, অ্যাপল হোমপড এবং গুগল হোমের মতো স্মার্ট স্পিকারগুলোরও একটু ফ্রেশনেসের দরকার আছে। অ্যাপল হোমপডের কথা মনে আছে নিশ্চয়, সেটা টানা ২০-৩০ মিনিট ব্যবহার করলে আপনার পছন্দের ফার্নিচারে একটা গোলদাগ পড়ে যায়। এটা পরিত্রাণের উপায় হিসেবে আমাদের অ্যাপল এক্সপার্টরা জানিয়েছেন যে, এর স্ক্রিনটা সাধারণ স্ক্রিন ক্লিনিং ওয়াইপ দিয়ে এবং কাপড়ের অংশটুকু প্লেন মাইক্রোফাইবার কাপড় দিয়ে পরিষ্কার করলেই হয়ে যাবে। দাগ থাকলে সামান্য পানিতে ভিজিয়েও পরিষ্কার করা সম্ভব। একইভাবে গুগল নেস্ট হাব এবং আমাজন ইকো শো ৮ ডিসইনফেক্ট করা যাবে। আগের যে আমাজন ইকোগুলো আছে, সেগুলো সামান্য ভেজা মাইক্রোফাইবার কাপড় দিয়ে পরিষ্কার করতে পারবেন। এ ছাড়া ব্লু-ট্যাকও ব্যবহার করা যাবে।
গেম কনসোল ও কন্ট্রোলার
গেম খেলে করলেন লো স্কোর, আর দোষটা গিয়ে পড়ল সম্পূর্ণ আপনার হাতের গেম কনসোলের ওপর। বিষয়টি অবশ্যই কোনো ভালো খবর না। খারাপ খবর এটাই যে, গেম কন্ট্রোলারগুলো অনেক বেশি নোংরা হয়, তাদের বাহারি রকমের বাটনগুলোর কারণে। তাই কনসোলের ক্ষেত্রে প্রথমে শুকনো মাইক্রোফাইবার কাপড় দিয়ে কনসোলারটি ভালোমতো ঝেড়ে নিতে হবে। এরপর সামান্য পরিমাণ পানি দিয়ে মুছে নিতে হবে। আর কোনো রকম কোনা থাকলে একটি তুলার বলে অল্প পরিমাণ পানিতে ভিজিয়ে নিয়ে মুছে নিলেন।
কন্ট্রোলারের ক্ষেত্রে সমপরিমাণ পানি ও আইসোপ্রোপাইল অ্যালকোহলের মিশ্রণ একটি মাইক্রোফাইবার কাপড়ের সাহায্যে পরিষ্কার করতে হবে। আর তুলা দিয়ে ভিজিয়ে বাটন এবং কোনাগুলো ভালোমতো মুছে নিলেই জীবাণু ও ময়লা- দুটোই পরিষ্কার হয়ে যাবে।
ফিটনেস ট্র্যাকার ও স্মার্টওয়াচ
আপনার ফিটনেস ট্র্যাকার বা স্মার্ট ওয়াচ আপনাকে দিয়ে ওয়ার্কআউট করিয়ে নিচ্ছে ঠিকই, কিন্তু আপনার সঙ্গে সে নিজেও ঘেমে যাচ্ছে। রাবারের ব্যান্ডগুলো পানিতে ধুয়ে নিলেই হয়। দাগ থাকলে আপনার স্কুলের বাচ্চার ইরেজার বা রাবারটা ধার নিতে পারেন। তাতে কাজ না হলে সমপরিমাণ বেকিং শোডা ও পানির মিশিয়ে পেস্ট বানিয়ে সেটা দাগের ওপর লাগিয়ে নিন। এরপর একটা ভেজা নরম কাপড় দিয়ে মুছে নিন। এতেও কাজ না হলে এসব দাগ পরিষ্কারের জন্য কিছু ম্যাজিক ইরেজার পাওয়া যায়, যেটা ব্যবহার করতে পারেন, তবে সাবধানতা অবলম্বন করে। কারণ এর অতিরিক্ত ব্যবহারে আপনার শখের ব্যান্ডের ওপরের লেয়ারের ক্ষয় হতে পারে। নাইলনের ব্যান্ডগুলোতে গন্ধ হতে পারে। তাই কোনো লিকুইড ডিসওয়াশ ব্যবহার করতে পারেন। মেটাল ব্যান্ড হলে, লিন্ট ফ্রি-কাপড় দিয়ে মুছে নেবেন, প্রয়োজনে সামান্য পানি নেবেন। স্টেইনলেস স্টিলের ব্যান্ড হলে সামান্য স্টিলপলিশ ব্যবহার করবেন, তবে হাতে লাগানোর আগে অবশ্যই ধুয়ে নেবেন, যাতে পলিশের কারণে আপনার ত্বকে কোনো ক্ষতি না হয়। সিলভার প্লেটেড ব্যান্ডের জন্য সিলভার ক্লিনিং ক্লথ বা জুয়েলারি পলিশিং ক্লথ ব্যবহার করবেন। চামড়ার ব্যান্ডগুলো পানি দিয়ে ধুয়ে লেদার ক্লিনার দিয়ে মাইক্রোফাইবার কাপড়ের মাধ্যমে পরিষ্কার করবেন, এরপর এর কন্ডিশনার দিয়ে নেবেন।
হুয়াওয়ের সেবা
বিনামূল্যে স্মার্টফোন জীবাণুমুক্ত করার বিশেষ সেবা দিচ্ছে হুয়াওয়ে। প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানটির গ্রাহকরা এ সেবা উপভোগ করতে পারবেন হুয়াওয়ে অনুমোদিত বাংলাদেশের সব সার্ভিস সেন্টার থেকে। বিশেষ এই সেবাটি চলবে ৩১ মার্চ পর্যন্ত। প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, সারাদেশের ১৮টি সার্ভিস সেন্টারে হুয়াওয়ের স্মার্টফোন ব্যবহারকারীদের মোবাইল জীবাণুমুক্তকরণ সেবাটি বিনামূল্যে প্রদান করবে। ফোনকে ফাঙ্গাস ও ভাইরাসমুক্ত করতে জীবাণুমুক্ত বিশেষ একটি যন্ত্রের (ফোন ডিসইনফেকশন) অভ্যন্তরে স্মার্টফোন প্রবেশ করিয়ে নির্দিষ্ট সময় পর ফোনকে জীবাণুমুক্ত করা হবে ফলে গ্রাহকরা নির্বিঘ্নে আরও বেশিদিন হুয়াওয়ের স্মার্টফোন ব্যবহার করতে পারবেন এবং নিজেদের নিরাপদ রাখতে পারবেন।