দেশের খবর: করোনাভাইরাসের প্রভাবে দেশে চরম দারিদ্র্য অবস্থা আগের তুলনায় ৬০ শতাংশ বেড়েছে, আর খাবার নেই প্রায় ১৪ ভাগ মানুষের ঘরে। করোনা পরিস্থিতিতে পরিচালিত এক জরিপ শেষে এমনটাই জানিয়েছে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাক। জরিপের তথ্য তুলে ধরে ব্র্যাক বলছে, করোনাভাইরাস প্রতিরোধ বিষয়ে পরিষ্কার ধারণাই নেই ৩৬ শতাংশ উত্তরদাতার।
ব্র্যাক জানায়, করোনা মহামারিতে সরকারি ছুটি বা সামাজিক দূরত্বের কারণে ৭২ শতাংশ মানুষ কাজ হারিয়েছেন অথবা তাদের কাজ কমে গেছে। আর ৮ শতাংশ মানুষের কাজ থাকলেও এখনও বেতন পাননি। অন্যদিকে মানুষের পারিবারিক আয় ৭৫ শতাংশের মতো কমে এসেছে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম ৮৪ শতাংশ, রংপুর ৮১ শতাংশ এবং সিলেট বিভাগের ৮০ শতাংশ মানুষের আয় কমেছে সবচেয়ে বেশি। আর করোনা প্রাদুর্ভাবে ১৪ ভাগ মানুষের ঘরে কোনও খাবারই নেই এবং ২৯ শতাংশের ঘরে আছে ১ থেকে ৩ দিনের খাবার।
দেশের ৬৪ জেলার দুই হাজার ৬৭৫ জন নিম্ন আয়ের উত্তরদাতার মধ্যে পরিচালিত জরিপে এমন তথ্য উঠে এসেছে। গত ৩১ মার্চ থেকে ৫ এপ্রিলের মধ্যে পরিচালিত হয় এ জরিপটি। করোনাভাইরাসের স্বাস্থ্যগত দিকগুলো সম্পর্কে নিম্ন আয়ের মানুষের উপলব্ধি এবং এর অর্থনৈতিক সংকট সম্পর্কে ধারণা পেতে ব্র্যাক এ জরিপ চালায়।
শুক্রবার (১০ এপ্রিল) সংবাদ মাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়। সংবাদ বিজ্ঞপ্তিটি পাঠান ব্র্যাকের হেড অব মিডিয়া অ্যান্ড এক্সটারনাল অ্যাফেয়ার্স কমিউনিকেশনস রাফে সাদনান আদেল।
ব্র্যাক আরও জানায়, জরিপের তথ্যের ভিত্তিতে দেশের শতকরা ৯৯.৬ ভাগ মানুষ করোনাভাইরাস সম্পর্কে শুনেছেন। ৪৮ শতাংশ মানুষ মনে করেন সরকারি হাসপাতালে কোভিড-১৯-এর রোগীর চিকিৎসা হয় না। আর ৯ শতাংশ মানুষ বর্তমান পরিস্থিতিতে করণীয় বিষয়ে জানেনই না।
সরকারের পদক্ষেপ নিয়ে জনগণের প্রতিক্রিয়া তুলে ধরে ব্র্যাক জানায়, ৬৮ শতাংশ মানুষ করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে সরকারের সাধারণ ছুটির ঘোষণাকে সমর্থন করেন, শতকরা ৭ ভাগ সমর্থন করেননি। মহামারি ঠেকাতে সরকারের ভূমিকা যথেষ্ট বলে মনে করেন ৬৪ শতাংশ মানুষ। বাকিদের মধ্যে ৩১ শতাংশ গ্রামের মানুষ এবং ৪০ ভাগ শহরের মানুষ এই ধারণাকে সমর্থন করেননি।
এদিকে ৫ এপ্রিল পর্যন্ত মাত্র ৪ শতাংশ মানুষ (যাদের বেশির ভাগের বাস শহরে) জরুরি ত্রাণ পেয়েছেন। আর ৪৭ শতাংশ মানুষ মনে করেন এ পরিস্থিতিতে সরকারের খাদ্য সহায়তা জরুরি, যেখানে শতকরা ২০ ভাগ চান নগদ অর্থ সহায়তা। অন্যদিকে শহরের মানুষের (৪৪ শতাংশ) চেয়ে গ্রামের মানুষেরাই (৫০ শতাংশ) খাদ্য সহায়তার পক্ষে বেশি আগ্রহী বলেও জানানো হয়।
করোনা পরিস্থিতি মানিয়ে নিতে ৩৬ শতাংশ মানুষ জানেন না অর্থনৈতিক সংকটের সঙ্গে তারা কীভাবে মানিয়ে নেবেন। ২৩ শতাংশ আশা করেন (যার মধ্যে নারী ৩৮ শতাংশ) পরিস্থিতি আরও দীর্ঘায়িত হলে সরকার তাদেরকে সহায়তা করবে। যদি পরিস্থিতি খুব সহসাই স্বাভাবিক না হয়, তাহলে ধার-দেনার চিন্তা করছেন শতকরা ১৯ ভাগ মানুষ।