অনলাইন ডেস্ক : উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং-উনের স্বাস্থ্য নিয়ে সন্দেহ-সংশয় বাড়তে থাকলেও তা উড়িয়ে দিচ্ছে প্রতিবেশী দক্ষিণ কোরিয়া। বলছে, তিনি সুস্থ ও জীবিত আছেন।
দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জেই-ইনের পররাষ্ট্র বিষয়ক শীর্ষ উপদেষ্টা মুন চুং-ইন বলেন, আমাদের সরকারের অবস্থান দৃঢ়। কিম জং-উন সুস্থ ও ভালো আছেন। গত ১৩ এপ্রিল থেকে তিনি ওনসন এলাকায় অবস্থান করছেন। কোনো সন্দেহজনক চলাচল চোখে পড়েনি।-খবর সিএনএনের
এদিকে জনসম্মুখে দুসপ্তাহ ধরে কিম জং-উনের অনুপস্থিতি এবং তার অসুস্থতা নিয়ে যে সব খবর পাওয়া যাচ্ছে সে ব্যাপারে দেশটির গণমাধ্যমগুলো নিশ্চুপ রয়েছে। এতে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তীব্র জল্পনা দেখা দিয়েছে।
উত্তর কোরিয়া থেকে সরাসরি কোনো খবর না মেলায় ভাসা ভাসা কিছু খবর এবং সামাজিকমাধ্যমে প্রকাশিত খবর থেকে নানারকম জল্পনা ডালপালা মেলছে। শোনা যাচ্ছে নানা কথা।
পায়ের গোড়ালির আঘাত থেকে ধীরে ধীরে কিমের সুস্থ হয়ে ওঠার মতো সামান্য বিষয় থেকে শুরু করে হৃদযন্ত্রে অস্ত্রোপচারের পর তার গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়া, চিকিৎসা করতে আসা কোনো চীনা ডাক্তারের কাছ থেকে কিমের কোভিড-১৯ আক্রান্ত হওয়া এমনকী তিনি মানসিকভাবে অবসন্ন হয়ে পড়েছেন, অচেতন হয়ে আছেন, কোমায় চলে গেছেন এবং মারা গেছেন বলেও গুজব ছড়িয়ে পড়েছে।
দক্ষিণ কোরিয়ার একটি ম্যসেজিং অ্যাপে এও বলা হচ্ছে যে, ফরাসি ডাক্তাররা কিমকে কোমা থেকে বের করে আনতে পারেননি। এ অবস্থায় দেশটির ক্ষমতা দখল করেছেন কিম জং উনের চাচা কিম পিয়ং ইল।
তবে কিমের অসুস্থতা নিয়ে দক্ষিণ কোরিয়া ও মার্কিন গণমাধ্যমের খবর নিয়ে সন্দেহ পোষণের কথা বলছেন মার্কিন গোয়েন্দা কার্যক্রম সম্পর্কে পরিচিত দক্ষিণ কোরিয়া ও চীনের কর্মকর্তারা।
কিম জং-উনের সুস্বাস্থ্য কামনা করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। কিন্তু এর বাইরে কিছু বলতে যাননি তিনি।
এর আগে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, চলতি মাসের শুরুতে উত্তর কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট কিম জং-উনের হার্টে অস্ত্রোপচার হয়েছে। এর পর নিজ বাড়িতেই তিনি চিকিৎসাধীন।
এ প্রসঙ্গে হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেন, এ ক্ষেত্রে আমি কেবল তার সুস্বাস্থ্য কামনা করতে পারি।
কিমের সঙ্গে ‘ভালো সম্পর্কের’ কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, তিনি সুস্থ হয়ে উঠবেন বলে আমি প্রত্যাশা করছি।
এ সময় কিমের স্বাস্থ্যের খোঁজখবর নিতে তার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টার কথাও বলেন তিনি। ট্রাম্প বলেন, খবরে যা বলা হয়েছে– তা যদি সত্যি হয়, তবে এটি খুবই গুরুতর অবস্থা।
কিন্তু কিমের স্বাস্থ্য নিয়ে তার কাছে সরাসরি কোনো তথ্য আছে কিনা; তা নিয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকার করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। বললেন, ওই প্রতিবেদন সত্যি কিনা; তা আমি জানি না।
এদিকে কিমের অস্ত্রোপচারের ঘটনা সত্যি হলে, ডেইলি এনকে ওয়েবসাইটের দাবি অনুসারে এবং তার দাদা ও দেশটির প্রতিষ্ঠাতা কিম ইল-সুংয়ের জন্মবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে তার অনুপস্থিত থাকার একটি ব্যাখ্যাও সামনে চলে আসবে।
গত ১২ এপ্রিল দেশটির পূর্ব উপকূলীয় হায়াংসান কাউন্টিতে একটি হাসপাতালে কিমের অস্ত্রোপচার হয়েছে। সিউলভিত্তিক ডেইলি এনকে নামের যে ওয়েবসাইট এমন খবর দিয়েছে, সেটি উত্তর কোরিয়ার পক্ষত্যাগীরা চালাচ্ছে।
খবরে বলা হয়, বর্তমানে মাউন্ট কুমগ্যাং রিসোর্টের একটি বাড়িতে ৩৬ বছর বয়সী এ রাষ্ট্রপ্রধান চিকিৎসা নিচ্ছেন। প্রতিবেদনে অজ্ঞাতনামা সূত্রের বরাত দেয়া হয়েছে।
এ ছাড়া এতে উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের কোনো আনুষ্ঠানিক মন্তব্য নেই।
আন্তঃসীমান্ত বিষয়াদি নিয়ে কাজ করা দক্ষিণ কোরিয়ার একত্রীকরণবিষয়ক মন্ত্রণালয়ও এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকার করেছে।
আর মার্কিন গণমাধ্যম সিএনএনের খবরে এ বিষয়ে সরাসরি অবগত মার্কিন কর্মকর্তাদের বরাতের উল্লেখ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, ওয়াশিংটনও বিষয়টি নজরদারিতে রেখেছে। অস্ত্রোপচারের পর মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে কিম জং-উন।
কিন্তু সিএনএনের প্রতিবেদনকে উড়িয়ে দিয়েছেন উত্তর কোরিয়ার খবরাখবর রাখা দক্ষিণ কোরিয়ার এক কর্মকর্তা।
ইয়োনহাপ সংবাদ সংস্থার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, সম্প্রতি বেশ কয়েকটি অনুষ্ঠানে কিমকে উপস্থিত হতে দেখা গেছে। এতে তার স্বাস্থ্যহানির বিষয়ে কোনো আভাস পাওয়া যায়নি।
দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ভবন ব্লু হাউস জানায়, উত্তর কোরিয়ায় কোনো অস্বাভাবিক ঘটনা তাদের নজরে আসেনি।
ডেইলি এনকের খবর বলছে, ব্যাপক ধূমপান, স্থূলতা ও অতিরিক্ত কাজের দরুণ সাম্প্রতিক মাসগুলোতে কিমের স্বাস্থ্যের মারাত্মক অবনতি ঘটেছে।
সেখানকার এক সূত্র জানায়, আমার মনে হচ্ছে– গত আগস্ট থেকে তিনি কার্ডিওভাসকুলার সমস্যায় ভুগছেন। কিন্তু পেকটু পাহাড়ে কয়েকবার ভ্রমণের পর তা আরও গুরুতর হয়েছে।
গত বছরের অক্টোবরে পেকটু পাহাড়ের বন ও তুষারে ঢাকা মাঠে কিমের সাদা ঘোড়ায় চড়া অবস্থায় একটি ছবি প্রকাশ করেছিল উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা কেসিএনএ।
খবর অনুসারে, গত ১১ এপ্রিল ক্ষমতাসীন ওয়ার্কার্স পার্টির পলিট ব্যুরোর একটি বৈঠকে সভাপতিত্ব করার পর হাসপাতালে ভর্তি হন কিম।
এর পর গত সপ্তাহের পিয়ংইয়ংয়ের স্বল্পপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার সময়ও তাকে দেখা যায়নি। এমনকি কিম ইল-সুংয়ের আড়ম্বরহীন জন্মবার্ষিকী উদযাপনেও তাকে দেখা যায়নি।