অর্থনীতির খবর: করোনা দুর্যোগের সময় যে জেলায় দরিদ্র মানুষের হার যত বেশি, সেই জেলায় চাল ও অর্থ বরাদ্দ তত কম বলে অভিযোগ তুলেছে দুর্যোগ সহায়তা মনিটরিং কমিটি। বৃহস্পতিবার (৩০ এপ্রিল) এক অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করা হয়। ত্রাণ বিতরণের বিভিন্ন বিষয়ে অনুসন্ধান করেছে দুর্যোগ সহায়তা মনিটরিং কমিটি। তাদের অভিযোগ, ২০১৬ সালে কয়েকশ’ কোটি টাকা খরচ করে যে খানা জরিপ করা হয়েছিল, তাতে যে জেলাওয়ারি দরিদ্র ও চরম দরিদ্র মানুষের হার পাওয়া গিয়েছিল, তা ত্রাণ ও অর্থ বরাদ্দের সময় সম্পূর্ণ উপেক্ষা করা হয়েছে। যে জেলায় দরিদ্র মানুষের হার যত বেশি, সেই জেলায় চাল ও অর্থ বরাদ্দ তত কম দেওয়া হয়েছে।
উদাহরণ হিসেবে বলা হয়, বর্তমানে দরিদ্র মানুষের হার সবচেয়ে বেশি কুড়িগ্রাম জেলায় এবং সবচেয়ে কম নারায়ণগঞ্জ জেলায়। কিন্তু কুড়িগ্রামে মোট দরিদ্র জনসংখ্যার মাথাপিছু চাল বরাদ্দ ৮৭৪ গ্রাম এবং মাথাপিছু অর্থ বরাদ্দ ৩ টাকা ৮৫ পয়সা। অন্যদিকে নারায়ণগঞ্জে দরিদ্র জনসংখ্যার মাথাপিছু চাল বরাদ্দ ২২ কেজি ৫৫৫ গ্রাম এবং মাথাপিছু অর্থ বরাদ্দ ৮৮ টাকা ১৭ পয়সা। অন্যদিকে কুড়িগ্রামের পর দরিদ্র হার বেশি দিনাজপুর জেলায়। সেখানে দরিদ্রদের মাথাপিছু চাল ও টাকা বরাদ্দের পরিমাণ যথাক্রমে ৬৭২ গ্রাম ও ৩ টাকা। অন্যদিকে নারায়ণগঞ্জের পর দরিদ্র হার কম হচ্ছে মুন্সীগঞ্জ জেলায়। সেখানে দরিদ্রদের মাথাপিছু চাল ও টাকা বরাদ্দের পরিমাণ যথাক্রমে ২১ কেজি ৫১৭ গ্রাম ও ৯৫ টাকা ৮৩ পয়সা।
দুর্যোগ সহায়তা মনিটরিং কমিটির সমন্বয়ক জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, আজ ৩০ এপ্রিল বাংলাদেশের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার কিছু মানুষ, যারা বিভিন্ন সময়ে মানুষের নানা সংকট ও দুর্যোগে কথা বলেন ও পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেন, তারা মিলে ‘দুর্যোগ সহায়তা মনিটরিং কমিটি’ নামে একটি কমিটি গঠন করা হলো। প্রাথমিকভাবে লেখক রাখাল রাহা সদস্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। যারা যুক্ত হয়েছেন তাদের বাইরেও সবার মতামতের ভিত্তিতে এই কমিটির সদস্যরা যুক্ত হবেন। এই কমিটি করোনা দুর্যোগ অব্যাহত থাকা পর্যন্ত কাজ করবে।
জ্যোতির্ময় বড়ুয়া আরও বলেন, সরকার কাদের জন্য, কতটুকু ত্রাণ বরাদ্দ করছে, তার খোঁজ-খবর রাখবে এ কমিটি। পাশাপাশি ত্রাণের পরিমাণ পর্যাপ্ত কিনা বা প্রয়োজনের তীব্রতার ভিত্তিতে সারা দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় বরাদ্দ বণ্টন করা হচ্ছে কিনা তা তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে বিশ্লেষণ করা এবং এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় সুপারিশ করবে কমিটি। ত্রাণ বিতরণে অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা ও তছরুপ থামাতে স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবকদের আইনি ও অন্যান্য পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করা হবে।
কমিটি ত্রাণ বিষয়ে পাঁচটি সুপারিশ তুলে ধরে। সেগুলো হলো, বিবিএস-এর খানা জরিপের ভিত্তিতে দরিদ্র এবং কর্মহীন প্রতিটি পরিবারকে একবারে ৩০ কেজি চাল এবং নগদ ১০ হাজার টাকা মোবাইলের মাধ্যমে পৌঁছে দিতে হবে। যতদিন দুর্যোগ অবস্থা থাকবে, প্রত্যেক মাসে এটা অব্যাহত রাখতে হবে। প্রান্তিক জনগোষ্ঠী, ভাসমান মানুষ, উপকূলীয় জনগোষ্ঠী, যাদের অনেকেরই জাতীয় পরিচয়পত্র নেই, যাদের তথ্য খানা জরিপেও নেই, তাদের কথা বিশেষভাবে ভাবতে হবে। ত্রাণ সহায়তা বিতরণে সব ধরনের অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি দূর করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে অনলাইনে যুক্ত ছিলেন হাসনাত কাইয়ূম, অধ্যাপক সাঈদ ফেরদৌস, শহীদুল আলম, হাসিব উদ্দিন হোসেন, কাজী জাহেদ ইকবাল, অধ্যাপক নাছির আহমেদ, জাকির হোসেন, মুক্তিযোদ্ধা নঈম জাহাঙ্গীর, নঈম ওয়ারা, মোহাম্মদ তানজিম উদ্দিন খান, দীপক কুমার গোস্বামী, মাহা মির্জা, আর রাজী, নুরুল হক নুর, আক্তার হোসেন, বাকী বিল্লাহ, দিদারুল ভূঁইয়া, চারু হক, নাহিদ হাসান নলেজ, ফাইয়াজ আহমদ।