মহামারী
-শেখ মফিজুর রহমান
জেলা ও দায়রা জজ, সাতক্ষীরা।
যেদিন থেকে শুরু হলো মহামারী
হাজার রকম কথা, হাজার রকম গুজব
হাজার রকম প্রশ্ন, হাজার রকম গবেষণা।
কেন এই রোগ হলো?
কিসের জন্য হলো?
কারা এর জন্য দায়ী?
সবশেষে বড় প্রশ্ন –
এর শেষ কোথায়?
এই মহামারীতে মানুষের প্রাণ
যে যাচ্ছে হাজারে হাজার
কল – কারখানা শিল্প সব বন্ধ
ক্ষতির পরিমাণ এখনো গণনার বাইরে
কিন্তু প্রশ্ন আমার এইখানেই
তবে কি এর আগে মানুষ মরেনি কখনো?
যুদ্ধে অন্ধ হয় নি দোর্দণ্ড প্রতাপশালী রাষ্ট্র গুলো?
বোমার আঘাতে ছিন্ন বিচ্ছিন্ন হয় নি
কোন শিশুর হাত?
এই সমুদ্রের তীর হতে ধাক্কা খেয়ে
মরে পড়ে থাকেনি আরেক উপকূলে?
বকেয়া বেতনের দাবীতে কল – কারখানা
কখনো থাকেনি বন্ধ?
না, না বন্ধ থাকবে কেন?
লাঠিয়াল বাহিনী দিয়ে ঠেঙিয়ে পিটিয়ে,
হাতে মেরে, ভাতে মেরে ঠিকই চলেছে সব।
সহজলভ্য শ্রমিকের নামে ছোট দেশের
অলিতে গলিতে হয়েছে কল – কারখানা
আগুনে পুড়েছে, ধ্বসে মরেছে।
পানির রং হয়েছে কালো
ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন আকাশে
শ্বাসকষ্টে ভুগে মরেছে মানুষ নামের
তৃতীয় বিশ্বের ছোট জাত।
আমার আঠার ঘন্টার পরিশ্রমে
তুমি পরেছো ব্রান্ডের মখমলে কাপড়
তোমার আকাশ নীল, খাবারের হাহাকার নেই
সমুদ্র তীরে ভালোবাসার মাখামাখি!
তবে করোনা না ভারী অন্ধ!
জাত – পাত বোঝে না
বড় – ছোট গা করে না
হিন্দু – মুসলিম, খ্রিস্টান দেখে চলে না!
বড় অট্টালিকা দেখে থমকে দাঁড়ায় না!
তাই বুঝি এতো ভয়?
এতো হাহাকার? এতো সতর্কতার ছড়াছড়ি?
শুধু যদি ছোট জাত মরতো
সে তো কতই মরে!
রাস্তায় দুর্ঘটনায় মরে, জলে লঞ্চ ডুবে মরে
প্রতি বছর ঝড়ে, বন্যায় মরে
আর কিছু না হোক দূষিত খাবারে মরে!
তাই বুঝি এদের মরণে ভয় নেই
ঘরে থাকে না রাস্তায় ছোটে!
ডান্ডা খায়, কানে ধরে দাঁড়ায়ে লজ্জায় মরে
তবুও ঘরে থাকে না
পথেই যাদের ঘর তাদের বুঝি
আপন আর কেউ নয়!
করোনায় মানুষ মরছে,
তবে বুঝি করোনা গেলে মানুষ মরবে না?
কোনো যুদ্ধ হবে না?
শোষণ হবে না?
দূষণ হবে না?
শ্রমিকরা ন্যায্য অধিকার পাবে?
কি নিশ্চয়তা নেই?
তবে তো একা করোনা মহামারী নয়!
শিল্পোন্নত দেশ মহামারী,
পুঁজিবাদী সমাজ মহামারী
শ্রমিকের রক্ত পানি করে যে, সে মহামারী
সুবিধাভোগী স্বার্থান্বেষী প্রতিটি মানুষ মহামারী..!!
( মে দিবস ২০২০ স্মরণে )