যশোর প্রতিবেদক: যশোরের বেনাপোলের সাদিপুর সীমান্ত থেকে ‘উদ্ধার হওয়া’ সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম কাজলকে আদালত কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন। রোববার (৩ মে) বেলা ৩টার দিকে সাংবাদিক কাজলকে পিঠমোড়া করে হ্যান্ডকাফ পরিয়ে যশোর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মঞ্জুরুল ইসলামের আদালতে আনা হয়।
রাতে ‘উদ্ধারের’ পর কাজলের বিরুদ্ধে অবৈধ অনুপ্রবেশ আইনে একটি মামলা করে বিজিবি। আদালত সেই মামলায় কাজলের জামিন আবেদন মঞ্জুর করেন।
বিকাল চারটার পর আদালতে শুনানি শুরু হয়। তার বিরুদ্ধে ঢাকার শেরেবাংলা নগর, কামরাঙ্গীরচর ও হাজারীবাগ থানায় আইসিটি অ্যাক্টে মামলা থাকায় কোতোয়ালি থানা পুলিশ আটকাদেশ পেতে নতুন করে ৫৪ ধারায় মামলা দিয়ে গ্রেপ্তারের আবেদন জানান। পরে বিচারক এ মামলায় তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। কারাগারে তাকে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে।
যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার সুব্রত কুমার বালা জানান, ‘শুধু উনি (কাজল) নন, নতুন যারা কারাগারে আসছেন, করোনার সময় তাদের প্রত্যেককে আলাদা রাখা হচ্ছে।’
কাজলের ছেলে মনোরম পলক জানান, একটি মামলায় জামিন হয়েছে। আমরা বাবাকে ফিরে পেয়েছি এতেই অনেক খুশি। তিনি বেঁচে আছেন- এজন্য শুকরিয়া। তার বাবার খোঁজ-খবর রাখার জন্য সবাইকে অনুরোধ করেন। দেশবাসীর কাছে বাবার জন্য দোয়া চাই এবং বাবার দ্রুত জামিনের দাবি জানাই।
যশোর আদালতের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা (জিআরও) এএসআই সুবোধ ঘোষ জানান, সাংবাদিক কাজলকে জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. মঞ্জুরুল ইসলামের আদালতে হাজির করা হয়। সেখানে পুলিশ তার নামে রুজু হওয়া মামলাগুলোর কথা তুলে ধরে।
কাজলের আইনজীবী দেবাশীষ দাসকে উদ্ধৃত করে তার সহকারী শিক্ষানবিশ আইনজীবী সুদীপ্ত ঘোষ জানান, পুলিশ কাজলের বিরুদ্ধে অবৈধ অনুপ্রবেশের মামলা (বিজিবির রুজু করা) ছাড়াও রাজধানীর তিনটি থানায় আরো তিনটি মামলা থাকার কথা উল্লেখ করে। এই তিনটি মামলাই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে। গত ৯, ১০ ও ১১ মার্চ মামলা তিনটি হয় যথাক্রমে শেরেবাংলা নগর, হাজারীবাগ ও কামরাঙ্গির চর থানায়। আদালত এই মামলা তিনটি সম্বন্ধে কোনো আদেশ দেননি।
সদর আদালতের হাজতখানার ইনচার্জ পুলিশের এটিএসআই সন্তোষকুমার বিশ্বাস জানান, ৫৪ ধারায় রুজু করা মামলায় আদালত বিকেলে সাংবাদিক কাজলকে জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন। সেই অনুযায়ী সন্ধ্যার আগেই তাকে যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
বেনাপোল থানার ওসি মামুন খান বলেন, শফিকুল ইসলাম কাজলের বিরুদ্ধে ঢাকায় তিনটি আছে। এসব মামলার কথা আমরা এজাহারে উল্লেখ করেছি।
তবে আদালত সূত্র জানায়, ঢাকার তিন মামলার নথিপত্র না থাকায় আদালত ওই মামলাগুলো আমলে নেননি।
এর আগে শনিবার রাতে যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরের জিরো পয়েন্ট থেকে নিখোঁজ শফিকুল ইসলাম কাজলকে আটক করে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।
৪৯ বিজিবি ব্যাটালিয়নের রঘুনাতপুর ক্যাম্পের ইনচার্জ হাবিলদার আছের আলী জানান, রাত পৌনে একটার দিকে তিনি বেনাপোল আন্তর্জাতিক শূন্যরেখায় আসেন। পরে বিজিবি সদস্যরা তাকে আটক করে অবৈধ অনুপ্রবেশ আইনে মামলা দিয়ে বেনাপোল পোর্ট থানায় হস্তান্তর করে।
ফটোসাংবাদিকতার পাশাপাশি ‘পক্ষকাল’র সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করছিলেন শফিকুল ইসলাম কাজল। গত ১০ মার্চ বুধবার দুপুর সাড়ে তিনটার দিকে বাসা থেকে বের হন। আনুমানিক রাত ৮টার থেকে তার দু’টি মুঠোফোনই বন্ধ পাওয়া যায়। এরপর থেকে তিনি আর বাড়ি ফিরে আসেননি।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের হাতে থাকা সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, সেদিন বিকেল ৪টা ১৪ মিনিটে মোটরবাইকে শফিকুল ইসলাম কাজল রাজধানীর হাতিরপুলে মেহের টাওয়ারে তার অফিসে পৌঁছান। এরপর বাইকটির আশপাশে বেশ কয়েকজন অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিকে প্রায় ৩ ঘণ্টা ধরে সন্দেহজনকভাবে ঘোরাফেরা করতে দেখা যায়।
বিকেল ৫টা ৫৯ মিনিট থেকে সন্ধ্যা ৬টা ৫ মিনিটের মধ্যে তিনজন ব্যক্তি আলাদা আলাদাভাবে মোটরবাইকটির কাছে যায় এবং অযাচিত হস্তক্ষেপ করে। এরপর ৬টা ১৯ মিনিটে কাজলকে অন্য এক ব্যক্তির সঙ্গে অফিস থেকে বের হয়ে নিজের বাইকের পাশ দিয়ে হেঁটে যেতে দেখা যায়। পরে তিনি ফিরে আসেন এবং সন্ধ্যা ৬টা ৫১ মিনিটে একা বাইকে চড়ে চলে যান। তারপর থেকেই কাজলের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, একটি মহল তার পেশাগত কাজে ক্ষুব্ধ ছিলেন। এমনকি তার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগে মামলাও করা হয়।
ঘটনার পরের দিন ১১ মার্চ চকবাজার থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন তার স্ত্রী। পরে ১৮ মার্চ রাতে কাজলকে অপহরণ করা হয়েছে অভিযোগ এনে চকবাজার থানায় মামলা করেন তার ছেলে মনোরম পলক।
তবে নিখোঁজের ঠিক ৩০তম দিনে (৯ এপ্রিল) ফটোসাংবাদিক শফিকুল ইসলাম কাজলের ফোন নম্বরটি বেনাপোলেই চালু হয়েছিল। তখন কাজল নিখোঁজের বিষয়টির তদন্ত কর্মকর্তা চকবাজার থানার এসআই মুন্সী আবদুল লোকমান বলেছিলেন, নিখোঁজ সাংবাদিক কাজলের ফোন নম্বরটি চালু হয়েছিল। লোকেশন দেখিয়েছে বেনাপোল। তবে করোনা পরিস্থিতির কারণে ও নম্বরটি চালু থাকার সময় কম হওয়ায় বেনাপোলে কোনো অভিযান চালানো সম্ভব হয়নি।