দেশের খবর: সাধারণ ছুটি ও ‘লকডাউনে’ রাজধানীতে প্রবেশ ও ছেড়ে যাওয়ায় নিষেধাজ্ঞা থাকলেও ঈদের আগে ঢাকা ছাড়ার হিড়িক পড়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর অবস্থানের মধ্যেও সড়ক ও নৌপথে স্রোতের বেগে ঢাকা ছেড়ে যাচ্ছে মানুষ। কেউই সরকারি বিধিনিষেধের তোয়াক্কা করছেন না। এর ফলে মহামারী করোনা প্রতিরোধে ‘সামাজিক দূরত্ব’ প্রতিপালন ও নাগরিকদের ঘরে থাকা বা রাখার সিদ্ধান্তও ভেস্তে যাচ্ছে। এতে ব্যাপকভাবে করোনার সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
গণপরিবহন বন্ধ থাকায় বিকল্প উপায়ে পিকআপ ভ্যান, ট্রাক, অ্যাম্বুলেন্স, প্রাইভেট গাড়ি, মোটরসাইকেল, ইজিবাইক, মাইক্রোবাস, অটোরিকশায় করে গ্রামমুখী হচ্ছে মানুষ। সোমবার (১৮ মে) দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ও শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ী নৌরুটে ফেরি চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এতে পাটুরিয়া ফেরি ঘাটের ৫ নম্বর কাউন্টার ভাংচুর করেছে বিক্ষুব্ধ ঈদযাত্রীরা।
বাস, ট্রেন ও লঞ্চ বন্ধ থাকায় ভেঙে ভেঙে বাড়ি যাওয়ার জন্য শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ী ফেরিঘাটে জড়ো হয়েছে হাজার হাজার মানুষ। সামাজিক দূরত্ব উপেক্ষা করে গাদাগাদি করে নদী পার হয়ে ভ্যান, পিকআপ, মোটরযানে একটু একটু করে পথ পারি দিচ্ছে তারা। প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা বাড়লেও ঘাটে যানবাহনের চাপ বেড়েছে অধিক হারে। যা নিয়ন্ত্রণ করতে হিমশিম খাচ্ছে প্রশাসন। কোনো ভাবেই যেনো ঘরে বেধে রাখা যাচ্ছে না তাদের।
এদিকে ঢাকাতেই করোনায় আক্রান্ত হয়েছে নয় হাজার ৮৫৫ জন। যা অন্যান্য শহরগুলো থেকে সর্বাধিক। জ্যামিতিক হারে রাজধানীতও বাড়ছে করোনা রোগীর সংখ্যা। যেখানে এখনো নিরাপদে রয়েছে বহু গ্রাম। তাই আতঙ্ক নিয়েও বাড়ির পথে পাড়ি জমাচ্ছেন তারা।
করোনার কারণে বন্ধ রয়েছে অফিস-আদালত। এতে বেশি বিপাকে পরেছে নিম্ন-মধ্যবিত্ত ও অসহায় মানুষ। খাবারের খোঁজে ঘর থেকে বাহির হতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। অফিস বন্ধ থাকায় পাচ্ছে না মাসিক বেতন। ঘর ভাড়া পরিশোধের জন্য বারবার নোটিশ দেয়া হচ্ছে বাড়িওয়ালাদের কাছ থেকে। তাই অনেকে পরিবার গুটিয়ে চিলে যাচ্ছে গ্রামের বাড়িতে। যেখানে অন্তত ঘর ভাড়া থেকে বাঁচতে পারবে তারা।
আবার অনেকে লকডাউনের জন্য অনেকদিন দেখা করতে পারেনি তাদের বাবা-মা, স্ত্রী-সন্তান, ভাই-বোনদের সেঙ্গে। তাই আত্মার টানেও বাড়ি পথে ছুটছেন তারা।বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) শিমুলিয়া ঘাটের উপমহাব্যবস্থাপক (এজিএম) মো. শফিকুল ইসলাম জানান, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় ও প্রশাসনের নির্দেশে বেলা তিনটা থেকে ফেরি বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে, ঘাটে এখনো আড়াইশ’ পণ্যবাহী যান আছে।
আরিচা অঞ্চলের উপ-মহাব্যবস্থাপক জিল্লুর রহমান বলেন, ফেরিচলাচল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত গ্রহণের পর উভয় ঘাটে থাকা ফেরিগুলোকে মাঝ নদীতে রাখা হয়েছে। ফেরি চলাচল স্বাভাবিক হওয়ার সিদ্ধান্ত হলে, ফেরিগুলোকে আবার ঘাটে আনা হবে।
মানিকগঞ্জের পুলিশ সুপার রিফাত রহমান শামীম বলেন, নির্দেশনা অনুযায়ী গণপরিবহন চলাচল বন্ধ থাকার কথা থাকলেও যাত্রীসাধারণকে কোনোভাবেই মানানো যাচ্ছিল না। পরে বাধ্য হয়ে, রবিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে, ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের মানিকগঞ্জের গোলড়া এলাকায় চেকপোস্ট বসানো হয়। জরুরি পণ্যবহনকারী গাড়ি ছাড়া সব ধরনের গণপরিবহন সেখানে আটকে দেওয়া হয় এবং সেগুলোকে ফেরত পাঠানো হয়। কিন্তু এত চেষ্টার পরেও মানুষ বিকল্প পথে পাটুরিয়া অভিমুখে বিভিন্ন গাড়িতে যাচ্ছিল। এতে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যাওয়ায় বিআইডব্লিউটিসিকে ফেরিচলাচল বন্ধ রাখতে অনুরোধ করা হয়।
বিআইডব্লিউটিসি আরিচা কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপ-মহাব্যবস্থাপক জিল্লুর রহমান বলেন, পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে ছোট বড় ১৫টি ফেরি রয়েছে। এর মধ্যে জরুরি পণ্যবাহী ট্রাক পারাপারের জন্য ৫-৭ টি ফেরি চলাচল করছে। তবে প্রাইভেটকার ও যাত্রী পারাপার বন্ধ করে দিলে চালক ও যাত্রীরা মিলে ঘাট এলাকার ৫ নম্বর কাউন্টারে ভাংচুর করেছে।নিষেধাজ্ঞার মধ্যেই ঝুঁকি নিয়ে মানুষের গ্রামমুখী প্রবণতার কারণে করোনার সংক্রমণ ভয়াবহ রূপ নিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেন, দেশের করোনা আক্রান্তদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি রাজধানী ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের। এই শহর থেকেই অনেকেই নিজ নিজ গ্রামের বাড়িতে যাচ্ছেন। এতে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলেও করোনার প্রকোপ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।আগামী ২৫ মে ঈদ হতে পারে। ঈদকে সামনে রেখে ইতোমধ্যে ৩০ মে পর্যন্ত চলমান সাধারণ ছুটির মেয়াদ বৃদ্ধি করেছে সরকার। এ সংক্রান্ত সরকারি আদেশে বলা হয়েছিল, সাধারণ ছুটি এবং চলাচল নিষেধাজ্ঞাকালে এক জেলা থেকে অন্য জেলা বা এক উপজেলা থেকে অন্য উপজেলায় জনসাধারণের চলাচল কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত থাকবে। জেলা প্রশাসন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় এ নিয়ন্ত্রণ সতর্কভাবে বাস্তবায়ন করবে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধকল্পে জনগণকে অবশ্যই ঘরে অবস্থান করতে হবে। রাত ৮টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত অতীব জরুরি প্রয়োজন ছাড়া (প্রয়োজনীয় কেনাকাটা, ওষুধ কেনা, চিকিৎসা নেয়া, মৃতদেহ দাফন বা সৎকার করা, ইত্যাদি) কোনভাবেই বাড়ির বাইরে আসা যাবে না। এই নিষেধাজ্ঞা থাকাকালে জনসাধারণ ও সব কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই স্বাস্থ্য বিভাগ কর্তৃক জারিকৃত নির্দেশমালা কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে।