বিদেশের খবর : হিমালয় পর্বতমালায় চীন-ভারতের বিরোধপূর্ণ সীমান্ত অঞ্চলে দুই দেশের সৈন্যদের মধ্যে গত কয়েকদিন রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়েছে। দুই পক্ষ থেকেই হতাহতের দাবি করা হচ্ছে।
সোমবার রাতের ঘটনায় অন্তত ২০ জন ভারতীয় সেনা নিহত হয়েছে। বিরোধপূর্ণ লাদাখ অঞ্চলের গালওয়ান উপত্যকায় এই হতাহতের ঘটনা ঘটে।
ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অভিযোগ করছে, গালওয়ান উপত্যকায় প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা (এলওএসি) মেনে চলার জন্য গত সপ্তাহে দু’পক্ষের মধ্যে যে ঐকমত্য হয়েছিল চীন তা ভঙ্গ করেছে।
চীনের অভিযোগ, ভারত সোমবার দু’দফায় ‘সীমান্ত লংঘন করে, উস্কানি দেয় এবং চীনের সৈন্যদের আক্রমণ’ করে, যার ফলশ্রুতিতে দুদেশের সীমান্ত রক্ষীদের মধ্যে হাতাহাতি হয়।
দুই পক্ষই বলছে এই সংঘর্ষে কোনো আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহৃত হয়নি। ভারতের কর্তৃপক্ষ বলছে খালি হাতে, লোহার রড ও পাথর দিয়ে সংঘর্ষ হয়েছে।
সংঘর্ষে চীনের সৈন্যদের মারা যাওয়ার খবর পাওয়া গেলেও আনুষ্ঠানিকভাবে তা নিশ্চিত করা যায়নি।
দুই দেশের সেনা কর্মকর্তারা ‘পরিস্থিতি শান্ত করতে’ পরে বৈঠকে বসে বলে জানায় ভারতীয় সেনাবাহিনী।
কেন যুদ্ধ করছে সেনারা?
চীন এবং ভারত দু’টি দেশই সামরিক শক্তিতে বিশ্বের অন্যতম। লাদাখ অঞ্চলের উঁচু, অপেক্ষাকৃত জনবসতিহীন এলাকার সীমান্ত নিয়ে কয়েক দশক ধরেই এই দুই দেশের মধ্যে বিরোধ চলে আসছে।
এর আগে দুই দেশের ৩,৪৪০ কিলোমিটার সীমান্তের বিভিন্ন অংশে সৈন্যরা সংঘাতে লিপ্ত হয়েছে। এর আগে বেশ কয়েকবারই তারা সীমান্তে মুখোমুখি সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েছে।
সাম্প্রতিক সংঘাতের কারণ লাদাখে ভারতের তৈরি করা একটি রাস্তা, যেটি দুই দেশের মধ্যকার প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা – লাইন অব অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোল (এলওএসি) – বরাবর অবস্থিত।
ভারতের এই পদক্ষেপে চীনকে ক্ষুদ্ধ্ব করে। প্রতিক্রিয়া হিসেবে চীন বিরোধপূর্ণ অঞ্চলে সেনা মোতায়েন করে এবং অবকাঠামো তৈরি করে। এর ফলে দুই দেশের সৈন্যদের অবস্থান আরো কাছাকাছি হয় এবং সংঘর্ষের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।
কেন এই ঘটনা গুরুত্বপূর্ণ?
ভারত ও চীন দুই দেশই বিরোধপূর্ণ সীমান্ত অঞ্চলকে কৌশলগতভাবে, সামরিকভাবে ও অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করে।
এখন কোনও পক্ষই যদি নিজ নিজ অবস্থান থেকে ছাড় না দেয়, তাহলে এই সামরিক অবস্থান ঐ অঞ্চলের পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে। এর মধ্যে প্রাণহানির ঘটনা পরিস্থিতিকে আরো জটিল করে তুলেছে।
ধারণা করা হচ্ছে, গত ৪৫ বছরে ভারত-চীন সীমান্ত সংঘাতে এই প্রথম প্রাণহানির ঘটনা ঘটলো। দুই দেশ ১৯৬২ সালে একবারই নিজেদের মধ্যে যুদ্ধ করেছিল, যেখানে ভারত শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়।
পরিস্থিতি কতটা ভয়াবহ হতে পারে?
চলমান উত্তেজনা স্তিমিত করার আলোচনা সফল না হলে পরিস্থিতি খুবই আশঙ্কাজনক মোড় নিতে পারে।
সীমান্তে বিরোধ নিরসনের উদ্দেশ্যে চীন ও ভারতের সেনাবাহিনীর জেনারেলরা সম্প্রতি আলোচনায় অংশ নিয়েছেন। তবে অতীতে এ ধরণের আলোচনা কার্যকর হয়নি।
আলোচনা সফল না হলে পারমাবিক শক্তিসম্পন্ন দুই দেশের – যারা পৃথিবীর সবচেয়ে জনবহুল দু’টি দেশ – মধ্যে বৈরিতা আরো বাড়তে পারে।
ভারতের সেনাবাহিনীর সাবেক কমান্ডার ডিএস হুদা সোমবারের সংঘর্ষ সম্পর্কে বলেন, এটি খুবই, খুবই গুরুতর। এই ধরণের সংঘাত যে কোনো ধরণের আলোচনা ব্যর্থ করে দিতে পারে। খবর: বিবিসি বাংলা।