অনলাইন ডেস্ক : উপমহাদেশের অন্যতম প্রাচীন রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িয়ে থাকা রাজনৈতিক দলটির ৭১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত হবে মঙ্গলবার।
১৯৪৯ সালের এই দিনে পুরান ঢাকার রোজ গার্ডেনে (হুমায়ুন সাহেবের বাড়ি) এক ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে জন্ম হয় ক্ষমতাসীন দলটির। প্রতিষ্ঠার শুরুতে দলটির নেতৃত্বে ছিলেন মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও শামসুল হক।
প্রতিষ্ঠার সময়ে ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ’ নাম ধারণ করলেও ১৯৫৫ সালে এই দল ধর্মনিরপেক্ষতাকে আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করে। দলের নামকরণ করা হয় ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ’। এরপর জাতি গঠনের প্রতিটি সোপানে-স্বাধিকার আন্দোলনের প্রতিটি ধাপে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে আওয়ামী লীগ।
আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ৬৬-এর ৬ দফা, ৬৯-এর গণআন্দোলনসহ দীর্ঘ সংগ্রামের পর ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা লাভ করে বাঙালি জাতি। পৃথিবীর মানচিত্রে অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর দলের নামকরণ করা হয় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ যখন অর্থনৈতিক মুক্তির সংগ্রামে এগিয়ে চলছিল, ঠিক তখনই আঘাত হানে ঘাতকেরা। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করা হয়।
১৯৮১ সালে বিদেশে অবস্থানকালে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত করেন নেতা–কর্মীরা। এরপর ওই বছর ১৭ মে তিনি দেশে ফিরে আসেন এবং দুঃসময়ে আওয়ামী লীগের হাল ধরেন। এরপর থেকে তিনি শক্ত হাতে দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। সর্বশেষ ২০১৯ সালে দলের ২১তম জাতীয় কাউন্সিলেও তাকেই সভাপতি পদে বহাল রাখা হয়।
১৯৯৬ সালে ২১ বছর পর শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে। মাঝখানে এক মেয়াদ ক্ষমতার বাইরে থাকা অবস্থায় শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও দলের অনেক নেতা নিহত ও আহত হন। এরপর ২০০৯ সাল থেকে টানা তিন মেয়াদে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়, প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন শেখ হাসিনা।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে প্রতি বছর দলটি বিভিন্ন বর্ণাঢ্য কর্মসূচি পালন করলেও এবার সীমিত আয়োজনে আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করা হবে। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে জনসমাগমের কর্মসূচি এড়িয়ে ডিজিটাল মাধ্যমে কিছু অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে পালিত হতে যাচ্ছে এবারের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।
আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে বাণী দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাণীতে তিনি সংগঠনের অগণিত নেতাকর্মী, সমর্থক ও শুভানুধ্যায়ীসহ দেশবাসীকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান। শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ অন্য জাতীয় নেতাদের।
কর্মসূচি:
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের যথাযথ মর্যাদায় দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করার জন্য সবস্তরের নেতাকর্মী, সমর্থক ও দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। করোনাভাইরাসের কারণে সীমিত পরিসরে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে সূর্যোদয়ের সময় কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও দেশব্যাপী দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন। ঢাকার ধানমন্ডিতে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে দলের শীর্ষ নেতাদের শ্রদ্ধা নিবেদন। এছাড়া স্বাস্থ্যবিধি মেনে দলের স্বল্পসংখ্যক সদস্যের প্রতিনিধিদল টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করবেন। বিকালে দোয়া ও মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে। রাত সাড়ে ৮টায় ‘গণমানুষের দল আওয়ামী লীগ’ শীর্ষক ওয়েবিনার অনুষ্ঠিত হবে। আওয়ামী লীগের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজ (https://www.facebook.com/awamileague.1949/) ও ইউটিউব চ্যানেলে (https://www.youtube.com/user/myalbd/) সরাসরি ওয়েবিনারটি দেখা যাবে।