ডেস্ক রিপোর্ট : সুন্দরবনের কাঁকড়া এখন যাচ্ছে বিশ্ব বাজারে। আন্তর্জাতিক বাজারে ব্যাপক চাহিদা থাকায় কাঁকড়া চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন মংলাসহ সুন্দরবনের আশপাশ এলাকার চাষিরা। এ অঞ্চলের চাষিরা তাদের পুকুর, ডোবা ও খালে ব্যাপক হারে কাঁকড়া চাষ করতে শুরু করেছেন। ইতোমধ্যে এ কাঁকড়া চাষে ব্যাপক সফলতাও পেয়েছেন তারা। সুন্দরবনের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ও কাঁকড়া চাষিদের সঙ্গে আলাপকালে এই তথ্য জানা গেছে।
রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো সূত্রে জানা গেছে, সুন্দরবনের কাঁকড়া চাষিদের পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দেওয়াসহ প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে পারলে প্রতি বছর এ খাত থেকে কয়েকশ’ কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, প্রতি বছর আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁকড়ার চাহিদা বাড়ার পাশাপাশি দামও বাড়ছে। আষাঢ় থেকে কার্তিক মাস পর্যন্ত কাঁকড়ার মৌসুম। এসময় সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকার সহস্রাধিক জেলে বনবিভাগ থেকে নির্দিষ্ট রাজস্বের বিনিময়ে পারমিট সংগ্রহ করে সুন্দরবনে কাঁকড়া সংগ্রহ করতে যান।
গহীন সুন্দরবনসহ সাগর মোহনা থেকে জেলেরা কাঁকড়া সংগ্রহ করেন। এছাড়া উপকূলীয় মংলা, খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরার দেড় লক্ষাধিক হেক্টর চিংড়ি ঘেরে প্রাকৃতিকভাবেই কাঁকড়া উৎপন্ন হয়।
পূর্ব সুন্দরবনের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘সুন্দরবন সংলগ্ন উপকূলীয় এলাকায় ১১ প্রজাতির কাঁকড়া পাওয়া যায়। এর মধ্যে মাইলা, হাব্বা, সিলা ও সেটরা কাঁকড়ায় প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন থাকে বলে জানা গেছে।’
মংলার ট্রান্সপোর্ট ব্যবসায়ী জামাল হোসেন বলেন, ‘রফতানিতে চীন, মীয়ানমার, জাপান, যুক্তরাষ্ট্র, মালেয়শিয়া, শ্রীলংকা, কোরিয়া, সিঙ্গাপুর, তাইওয়ান, হংকংসহ বিভিন্ন দেশে সুন্দরবনের কাঁকড়ার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।’
রফতানি উন্নয়ন সূত্রে জানা যায়, ১৯৭৭-৭৮ অর্থ বছরে বিদেশে প্রথম কাঁকড়া রফতানি শুরু হয়। এরপর প্রায় তিন বছর বন্ধ থাকার পর ১৯৮২-৮৩ অর্থ বছরে আবারও বিদেশে কাঁকড়া রফতানি শুরু হয়েছে। পর্যায়ক্রমে বিশ্ব বাজারে এর চাহিদা বাড়তে থাকে। পাশাপাশি বাড়তে থাকে এ খাত থেকে বৈদেশিক মুদ্রার আয়।
১৯৯৮-৯৯ অর্থ বছরে কাকড়া রফতানি হয় ১২৫ কোটি ২২ লাখ ৩৯ হাজার টাকার। ১৯৯৯-২০০০ অর্থ বছরে রফতানি করা হয় ১৪১ কোটি ৬৬ লাখ ৬ হাজার টাকার। ২০০১-০২ অর্থ বছরে এ খাত থেকে আয় হয় ৫৩০ কোটি টাকা।
২০০২-০৩ অর্থ বছরে কাঁকড়া রফতানি হয়েছে ২ দশমিক ৫২ মিলিয়ন ডলারের ৬৩০ মেট্রিক টন, ২০০৩-০৪ অর্থ বছরে আয় গিয়ে দাঁড়ায় ১৪৬ মিলিয়ন ডলারে। এভাবে পর্যায়ক্রমে ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে এর আয় পাঁচ থেকে ছয় গুণ বেড়ে য়ায়।
মংলার জয়মনি এলাকার কাঁকড়া চাষি ও ব্যবসায়ী কাজল, রায়হান, মালেকসহ আরও অনেকের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, সুন্দরবন সংলগ্ন সাগর ও নদীগুলোতে যে পরিমাণ কাঁকড়া ধরা পড়ে তা প্রাকৃতিকভাবে পাওয়া রেনু পোনা থেকে অনেক বেশি।
তারা আরও জানান, এ অঞ্চলে ১২ মাস কাঁকড়ার চাহিদা রয়েছে। তাছাড়া চিংড়ি চাষের জন্য প্রচুর জমি ও অর্থের প্রয়োজন হলেও কাঁকড়া চাষের জন্য জমি ও অর্থ দু’টিই কম লাগে। ফলে অনেকেই কাঁকড়া চাষে ঝুঁকছেন।