অনলাইন ডেস্ক : প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের থাবায় আয় কম ও কাজ হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে নিম্ন-মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের মানুষ। জীবিকার এমন সংকটে ঢাকা ছাড়তে শুরু করেছে অনেকে।
সারা দেশের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার ২ হাজার ৩৭১ জনের সাক্ষাৎকার নিয়ে ব্র্যাক মে মাসে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল। এতে দেখা যায়, ৩৬ শতাংশ লোক চাকরি বা কাজের সুযোগ হারিয়েছেন। ৩ শতাংশ লোক চাকরি থাকলেও বেতন পাননি। আর দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে যারা কাজ করেন, তাদের ৬২ ভাগই কাজের সুযোগ হারিয়েছেন। করোনার কারণে ১০টি জেলার মানুষের আয় কমে গেছে। ঢাকা জেলার মানুষের আয় কমেছে ৬০ ভাগ।
সাভারে স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে বসবাস করা গৌতম কুমার শীল একটি কোম্পানিতে চাকরি করতেন। তিনি বলেন, করোনার সংক্রমণ শুরু হলে প্রথম মাসে তাকে অর্ধেক বেতন দেওয়া হয়। তারপরের মাসে অর্ধেকের অর্ধেক বেতন দেওয়া হয়। এই টাকায় বাড়িভাড়া দেওয়ার পর পরিবার নিয়ে চলতে কষ্ট হচ্ছিল। ধার-দেনা করে এতদিন চললেও এখন পিঠ দেওয়ালে ঠেকে গেছে। তাই গ্রামের বাড়ি রাজবাড়ীর বেলগাছিতে ফিরে যাচ্ছেন।
ঢাকার মিরপুরের রূপনগরে বসবাস করতেন আশরাফ হোসেন। একটি কোম্পানিতে করতেন চালকের কাজ। এখন তার কাজ পুরোটাই বন্ধ। প্রতিমাসে ১১ হাজার টাকা বাড়ি ভাড়া দিতে হয়। কিন্তু এখন সেই পরিমাণ অর্থ উপার্জন করা প্রায় অসাধ্য হয়ে গেছে। তাই তিনিও পরিবার নিয়ে ফরিদপুরের আটরশিতে গ্রামের বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন। গ্রামে থাকলে প্রতিমাসে বাড়ি ভাড়ার টাকা নিয়ে অন্তত দুশ্চিন্তা করতে হবে না।
আবার কবে ঢাকায় ফিরবেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, কবে ফিরবো কিংবা আদৌ ফিরতে পারবো কি-না সেটাও জানি না। এসময় চোখ ঝাপসা হয়ে না উঠলেও একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলেন আশরাফ হোসেন। মুখমণ্ডলে তার ভেসে ওঠে এক অনিশ্চয়তার ছাপ।
শুধু গৌতম কিংবা আশরাফ নয়, এমন আরও শত শত মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বর্তমানে চরম হতাশা আর অভাবের মধ্যে দিয়ে দিন কাটছে। আর সেই অভাব থেকে কিছুটা হলেও মুক্তির আশায় গ্রামমুখী হচ্ছেন।
এদিকে বছরের মাঝখানে রাজধানী ছাড়ায় তাদের সন্তানদের লেখাপড়াও অনিশ্চয়তার মধ্যে চলে যাচ্ছে। গ্রামে গিয়ে কোনও স্কুলে ভর্তি হতে গেলেও অন্তত আগামী বছর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। শহরে বেড়ে ওঠা এসব বাচ্চারা গ্রামের পরিবেশে কতটুকু মানিয়ে নিতে পারবে, সেটাও ভাবিয়ে তুলছে তাদের।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের (বিলস) পরিচালক (প্রোগ্রাম ও ইনফরমেশন) কোহিনূর মাহমুদ বলেন, করোনার প্রভাবে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কর্মরত সারা দেশের প্রায় এক কোটি লোক কাজ হারিয়েছেন। আর তৈরি পোশাক খাতে কাজ হারিয়েছেন এক লাখ লোক।