অনলাইন ডেস্ক : মৌসুমী বায়ু বাংলাদেশ থেকে বিদায় নিতে শুরু করেছে। এতে বৃষ্টি কমে আসার কথা। তবে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে উপকূলীয় এলাকায় ঝড়ো হাওয়াসহ ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হচ্ছে। এ কারণে সমুদ্র বন্দরে ৪ নম্বর হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে নদী বন্দরের মধ্যে কিছু এলাকায় ২ এবং কিছু এলাকায় ১ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদফতর জানায়, উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া গভীর নিম্নচাপটি আরও ঘনীভূত হয়ে উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে একই এলাকায় অবস্থান করছে। এটি আরও ঘনীভূত হতে পারে। গভীর নিম্নচাপ কেন্দ্রের কাছে সাগর উত্তাল আছে।
আবহাওয়াবিদ আব্দুর রহমান বলেন, ‘গভীর নিম্নচাপ আরও ঘনীভূত হলে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়। তবে আমরা এখনও ঘূর্ণিঝড়ের আশঙ্কা করছি না। এটি গভীর নিম্নচাপ আকারেই বাংলাদেশের উপকূলে উঠে আসবে বলে আশঙ্কা করছি। এতে ঝড়ো হাওয়াসহ ভারী বৃষ্টি হতে পারে। ফলে সমুদ্র বন্দরে ও নদী বন্দরে হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।’
পূর্বাভাসে বলা হয়, মৌসুমী বায়ু বাংলাদেশের পশ্চিমাংশ থেকে বিদায় নিয়েছে। অন্য অংশ থেকে বিদায় নেওয়ার পথে। কিন্তু গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং রংপুর বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রবৃষ্টি হতে পারে। সেইসঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে।
ভারী বৃষ্টির সতর্কতায় বলা হয়, গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, ময়মনসিংহ এবং সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও ভারী, অর্থাৎ ৪০ থেকে ৮৮ মিলিমিটার থেকে অতি ভারী, অর্থাৎ ৮৯ মিলিমিটারের চেয়েও বেশি বৃষ্টি হতে পারে। তাপমাত্রা কমতে পারে ১ থেকে ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত।
এদিকে সতর্কবার্তায় বলা হয়, নিম্নচাপটি গতকাল বৃহস্পতিবার ছিল চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ৬৬০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, শুক্রবার সকালে তা আছে ৪৪৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে। একইভাবে কক্সবাজার সমুদ্র বন্দর থেকে ছিল ৬৪৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, এখন আছে ৪৪৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে। মোংলা সমুদ্র বন্দর থেকে ছিল ৪৭৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, এখন ২৪০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে। পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে ছিল ৫০৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, এখন ২৮০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছে।
নিম্নচাপের কেন্দ্রের ৪৮ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের গতিবেগ একটানা ঘণ্টায় ৫০ কিলোমিটার যা দমকা বা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। নিম্নচাপের কেন্দ্রের কাছে সাগর উত্তাল। এ কারণে দেশের চার সমুদ্রবন্দর চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রাকে ৪ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত নামিয়ে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার ট্রলার ও নৌকাগুলোকে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বলা হয়েছে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে। সেইসঙ্গে গভীর সাগরে বিচরণ করতে না করা হয়েছে।
সাগর উত্তাল (ফাইল ছবি)
এদিকে আজ দুপুর ১টা পর্যন্ত নদী বন্দরগুলোর আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়, ময়মনসিংহ, ঢাকা, ফরিদপুর, টাঙ্গাইল, মাদারিপুর, কুষ্টিয়া, যশোর, খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম, ককক্সবাজার ও সিলেট অঞ্চলের ওপর দিয়ে দক্ষিণ ও দক্ষিণ পূর্ব দিকে থেকে ঘণ্টায় ৬০ থেকে ৮০ কিলোমিটার বেগে ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এসব এলাকার নদীবন্দরকে ২ নম্বর নৌ হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
এছাড়া দেশের অন্য এলাকায় দক্ষিণ ও দক্ষিণ পূর্ব দিকে থেকে ঘণ্টায় ৪৫ থেকে ৬০ কিলোমিটার বেগে ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এসব এলাকার নদীবন্দরকে ১ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের সর্বোচ্চ বৃষ্টি হয়েছে বরিশাল বিভাগের খেপুপাড়ায় ২৭৯ মিলিমিটার। এছাড়া ঢাকা বিভাগের মধ্যে সর্বোচ্চ বৃষ্টি হয়েছে মাদারিপুরে ৫১, ময়মনসিংহ বিভাগের মধ্যে নেত্রকোনায় ৪৭, চট্টগ্রাম বিভাগের মধ্যে হাতিয়ায় ১৫৭, সিলেটে ৯৪, রাজশাহী বিভাগের মধ্যে ঈশ্বরদিতে ৩৬, রংপুর বিভাগের মধ্যে ১৬ এবং খুলনা বিভাগের মধ্যে মোংলায় ৪৭ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে।