নিজস্ব প্রতিবেদক :
সাতক্ষীরার নবারুণ উচ্চবিদ্যালয় কিংবা তামিলনাড়ুর সেথু এফসি—যখন যে দলের জার্সি পরে মাঠে নামেন না কেন—অপ্রতিরোধ্য সাবিনা খাতুন। দলকে জেতানোর গুরুভারটা যেন তাঁকেই কাঁধে তুলে নিতে হবে। সাতক্ষীরার মহিলা ফুটবল কোচ আকবর আলী তাই তো প্রথম দিন দেখেই জহুরির চোখে চিনেছিলেন সাবিনাকে।
আকবর আলী তখন সাতক্ষীরার কারিমা উচ্চবিদ্যালয়ের কোচ। আন্তস্কুল টুর্নামেন্টে কারিমা অন্য ম্যাচগুলো জিতলেও নবারুণের সঙ্গে কখনো পারত না। পুরো দলকে একাই টেনে নিয়ে যেতেন নবারুণের স্ট্রাইকার সাবিনা খাতুন। সাবিনার মুভমেন্ট, পাসিং, ড্রিবলিং—রীতিমতো মুগ্ধ আকবর আলী। এলাকায় নিজের ফুটবল একাডেমিতে অনুশীলনের প্রস্তাব দেন সাবিনাকে। কিন্তু স্কুলের শিক্ষিকারা সাবিনাকে অন্য কোথাও খেলার অনুমতিই দিলেন না। আকবর আলীও নাছোড়বান্দা। সাবিনার ঠিকানা জোগাড় করে চলে গেলেন পলাশপোল পাওয়ার হাউসের পেছনে। বাবা সৈয়দ আলী ও বড় বোন সালমা খাতুনকে বোঝালেন সাবিনার প্রতিভার কথা। সেদিন না করেননি পরিবারের কেউ। পলাশপোলের সাবিনার ফুটবল এখন মাতাচ্ছে পুরো দক্ষিণ এশিয়া।
বাংলাদেশের মহিলা ফুটবলে অনেক প্রথমের সঙ্গে জড়িয়ে সাবিনার নাম। বাংলাদেশের প্রথম মহিলা ফুটবলার হিসেবে বিদেশে পেশাদার লিগ খেলেছেন। মালদ্বীপেই খেলেছেন তিনবার।
সাত দলের নারী প্রিমিয়ার লিগ। জাতীয় দলের তারকাদের নিয়ে সেরা দল গঠন করে বসুন্ধরা কিংস। আর সেই সেরাদের সেরা সাতক্ষীরার মেয়ে জাতীয় দলের অধিনায়ক সাবিনা খাতুন। মেয়েদের লিগে শিরোপা জয় করার অন্যতম দাবিদারও ছিল তারা। কোনো অঘটন ছাড়াই নারী প্রিমিয়ার লিগের শিরোপা জিতেছে বসুন্ধরা কিংস। জামালপুর কাচারিপাড়াকে হারিয়ে আগের ম্যাচে শিরোপা নিশ্চিত করা কিংসের জন্য বুধবারের ম্যাচটি ছিল স্রেফ আনুষ্ঠানিকতা।
আনুষ্ঠানিকতার এই ম্যাচেও গোল উৎসব করেছে বসুন্ধরা কিংস। কমলাপুর বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহি মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে বুধবার লিগে নিজেদের শেষ ম্যাচে বসুন্ধরা কিংস ১৪-১ গোলে হারিয়েছে উত্তরবঙ্গ এফসিকে। এই ম্যাচে একাই পাঁচ গোল করেছেন অধিনায়ক সাবিনা খাতুন। আগের ম্যাচেও করেছিলেন পাঁচ গোল।
সবমিলিয়ে জাতীয় দলের অধিনায়কের লিগে মোট গোলসংখ্যা গিয়ে দাঁড়াল ৩৫টি। তার মোট হ্যাটট্রিক হলো আটটি। উত্তরবঙ্গের বিপক্ষে এদিন হ্যাটট্রিক করেছেন কৃষ্ণা রানী সরকার ও শিউলি। জোড়া গোল করেন তহুরা খাতুন। স্বপ্না করেন এক গোল। এফসি উত্তরবঙ্গের হয়ে এক মাত্র গোল সুলতানার।
ঘরোয়া ফুটবলে ২৫০ গোলের নতুন রেকর্ড আগেই করেছিলেন সাবিনা। লিগ শেষ হওয়ার পর এখন তার মোট গোল ২৬৬। দেশের কোনো ফুটবলার (পুরুষ-নারী) এর আগে ঘরোয়া আসরে ২০০ গোলই করতে পারেননি। সেখানে সাবিনার নামে পাশে ২৬৬। দেশে, ভারতে ও মালদ্বীপের ঘরোয়া ফুটবল খেলে এই অনন্য কীর্তি গড়েছেন সাতক্ষীরার এই গোলমেশিন।
বাংলাদেশের ছেলেমেয়ে মিলিয়ে কেউই ২০০ গোল করতে পারেননি, সেখানে সাবিনা গড়লেন এই কীর্তি। ভারত, মালদ্বীপের লিগ, ঘরোয়া লিগ ও দেশের জার্সিতে খেলে এত গোল করেছেন সাতক্ষীরার এই গোলমেশিন। রানার্সআপ হওয়া নাসরিন একাডেমি এদিন ৫-১ গোলে হারিয়েছে জামালপুর কাচারিপাড়া একাদশকে। নাসরিন একাডেমির সাজেদা দুই গোল করেন। একটি করে গোল করেন মার্জিয়া, রিতু ও সোহাগী। কাচারিপাড়ার হয়ে এক গোল পরিশোধ করেন শিরিনা।