ভিন্ন স্বাদের খবর : তিন হাজার ৬০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগে বিদেশে পালিয়ে থাকা প্রশান্ত কুমার (পিকে) হালদারের ৭০ থেকে ৮০ জন গার্লফ্রেন্ডের সন্ধান পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
রোববার (২০ ডিসেম্বর) এক প্রশ্নের জবাবে এ তথ্য জানান দুদকের আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান। তিনি বলেন, তদন্তে প্রমাণিত হলে তাদেরও (গার্লফ্রেন্ডদের) আসামি করা হবে। কেননা পিকে হালদারের এসব গার্লফ্রেন্ডের অ্যাকাউন্টে কোটি কোটি টাকা লেনদেনের তথ্য মিলেছে। তাই বিষয়টি তদন্ত করার জন্য তদন্ত কর্মকর্তার (আইও) কাছে পাঠানো হবে। আর পরে হাইকোর্টের নির্ধারিত তারিখে বিষয়টি আদালতে উপস্থাপন করা হবে।
এসব নারীর তালিকায় কারা আছেন জানতে চাইলে দুদকের আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান বলেন, ‘এই মুহূর্তে কারো নাম প্রকাশ করতে চাচ্ছি না আমি। কারণ এদের বিষয়ে অনুসন্ধান করা হবে।’
দুদকের আইনজীবী জানান, পিকে হালদারকে ধরতে এরই মধ্যে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ইন্টারপোলের কাছে পাঠানো হয়েছে। এর আগে পিকে হালদার দেশে ফিরতে চেয়েও ফিরেননি। এমনকি তার অবস্থান নিয়েও নিশ্চিত নন কেউ।
প্রশান্ত কুমার হালদার ব্যাংকপাড়ায় পিকে হালদার নামে পরিচিত। তিনি বিভিন্ন আর্থিকপ্রতিষ্ঠান থেকে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করে লাপাত্তা রয়েছেন। এরমধ্যে একবার টাকা ফেরতের শর্তে দেশে ফিরতে চাইলেও দেশে ফিরলে গ্রেপ্তার হতে হবে হাইকোর্টের এমন আদেশের পর অসুস্থতার কথা বলে আর ফেরেননি তিনি। জানা গেছে, কানাডার বেগমপাড়ায় বাড়ি করে রাজকীয় জীবনযাপন করছেন তিনি।
বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, পিকে হালদার বিভিন্ন আর্থিকপ্রতিষ্ঠানের দায়িত্বে থেকে লোপাট করেছেন অন্তত তিন হাজার ৬০০ কোটি টাকা। পিকে হালদার প্রথমে রিলায়েন্স ফাইন্যান্স এবং পরে এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ (এমডি) বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। এমন আরো কিছু প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড ও বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি (বিআইএফসি) ইত্যাদি।
অভিযোগ রয়েছে, ওই সব প্রতিষ্ঠানে গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন এবং নতুন আরো কিছু কাগুজে প্রতিষ্ঠান তৈরির মাধ্যমে প্রায় তিন হাজার ৬০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ ও বিদেশে পাচার করেছেন পিকে হালদার। নিজেও পাড়ি জমিয়েছেন বিদেশে।
ক্যাসিনো অভিযানের ধারাবাহিকতায় পিকে হালদারের বিরুদ্ধে এরই মধ্যে প্রায় ২৭৫ কোটি টাকা অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়। এ ঘটনায় দুদকের সহকারী পরিচালক মামুনুর রশীদ বাদী হয়ে মামলা করেন। তবে মামলা করার আগেই লাপাত্তা হন পিকে হালদার।
এদিকে, আদালতের পূর্ব নির্দেশনা অনুসারে পিকে হালদারের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানার অগ্রগতি প্রতিবেদন, মামলার এফআইআর ও সম্পত্তি-অর্থ জব্দের আদেশ হাইকোর্টে উপস্থাপন করা হয়। পিকে হালদারের আত্মীয় পিপলস লিজিংয়ের সাবেক পরিচালক অমিতাভ অধিকারী এবং পিকে হালদারের সাবেক সহকর্মী ও পিপলস লিজিংয়ের সাবেক চেয়ারম্যান উজ্জ্বল কুমার নন্দীকে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ মামলায় পক্ষভুক্ত করা হয়। এরপর আদালত মামলার পরবর্তী আদেশের জন্য আগামী ৩ জানুয়ারি শুনানির দিন নির্ধারণ করেন।
গত ৯ ডিসেম্বর বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের সমন্বয়ে গঠিত ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ শুনানির ওই দিন নির্ধারণ করেন।