নিজস্ব প্রতিবেদক : সাতক্ষীরার সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ শেখ মফিজুর রহমানের আদালত আবারও দৃষ্টান্ত স্থান করেছেন। আদালত এমন একজন আসামিকে জামিন দিয়েছেন যিনি বিচারককেই হুমকি দিয়েছিলেন।
সংবিধানে বলা হয়েছে সব নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান এবং আইনের সমান আশ্রয় লাভের অধিকারী। সাধারণত কোনো ব্যক্তিকে আটকের পর আদালত আইন ও বিবেচনামূলক ক্ষমতা প্রয়োগের মাধ্যমে আটককৃত ব্যক্তিকে আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী নির্দিষ্ট স্থানে এবং নির্দিষ্ট সময়ে হাজির হওয়ার শর্তে সাময়িক মুক্তির ব্যবস্থা করাকে জামিন বলা হয়। শর্তসাপেক্ষে মামলার যে-কোনো পর্যায়ে জামিন মঞ্জুর করা যায়। এটি একটি পদ্ধতি, যা মানবিক মূল্যবোধের দুটি প্রাথমিক ধারণার মধ্যে সমন্বয় রক্ষার জন্য বিবর্তিত হয়েছে। মূল্যবোধ দুটি হলো অভিযুক্ত ব্যক্তির ব্যক্তিগত স্বাধীনতা ও জনস্বার্থ, যার ওপর একজন ব্যক্তির মুক্তি বা দণ্ড নির্ভর করে। সংবিধানের আওতায় যে ব্যক্তিগত স্বাধীনতার নিশ্চয়তা রয়েছে, তা অবশ্যই সাধারণ আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করতে হবে, যেখানে সমাজের অন্যান্য ব্যক্তিরও অধিকার রয়েছে। নির্দোষত্ব অনুমানের নীতির ওপর ভিত্তি করে কোনো অভিযুক্ত ব্যক্তিকে জামিন দেয়া হয় যুক্তিসংগত সন্দেহের বাইরে দোষী সাব্যস্ত না হওয়া পর্যন্ত। জামিনের উদ্দেশ্য হলো নিরপরাধ ব্যক্তিকে শাসিত্ম প্রদান করা থেকে রক্ষা করা এবং তার আত্মপক্ষ সমর্থন করার জন্য উত্সাহিত করা। বাংলাদেশের ফৌজদারি কার্যবিধি, ১৮৯৮-এর ৩৯তম অধ্যায়ে জামিন সম্পর্কে বলা হয়েছে। এ ছাড়াও কার্যবিধির বিভিন্ন ধারা এবং অন্যান্য আইনে জামিন সম্পর্কে উল্লেখ করা হয়েছে।
বিচারকের হাত পা যেমন আইনের মারপ্যাচে যেমন বাঁধা থাকে, অনুরুপ কোন কোন বিচারকের মাঝে সদা জাগ্রত থাকে মানবিকতা, মানবতা, উদারতা, মহানুভবতা, সুকুমার প্রবৃত্তি। আইনের চুলচেরা বিশ্লেষন, ব্যাখা, বিধি বিধান, ঘটনা, ঘটনার আদিঅন্ত, অপরাধ, যেমন বিচারকের বিবেচ্য বিষয়, তেমনই বিচারকের উদারতা, বিবেক, বিবেচনা, মানবতা ও কখনও কখনও দৃষ্টান্ত, আর মানুষের প্রতি মানুষের অপরাধী, অপরাধের ক্ষেত্র ও বিবেচ্য বিষয়ে সম্পৃক্ত হয়। এমনই এক জামিন আদেশ দিয়ে সাতক্ষীরার বিজ্ঞ সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ শেখ মফিজুর রহমানের আদালত মানবিক আচরণের অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন। এক্ষত্রে জামিনপ্রাপ্ত আসামি হলেন প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে ভূয়া সচিব সেজে মোবাইল ফোনে বিজ্ঞ সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ শেখ মফিজুর রহমানকে হুমকি দেওয়াসহ এলাকার উন্নয়নের জন্য চাঁদা দাবিকারী ব্যক্তি।
গত ৪/১১/২০ তাং শ্যামনগর যাদবপুর কৈখালী গ্রামের মনোরঞ্জন মন্ডলের পুত্র গোবিন্দ কুমার মন্ডল বিজ্ঞ সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজের ব্যক্তিগত মোবাইল নম্বরে ফোন দিয়ে চাঁদা দাবিসহ হুমকি দিলে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের নাজির আঃ কাদের গাজী বাদি হয়ে মামলা করলে ৩০/১১/২০২০ তারিখে রাতে শ্যামনগর থেকে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতার পরবর্তী প্রায় দুই মাস কারাগারে অন্তরীণ থাকাবস্থায় সাতক্ষীরা আইনজীবী সমিতির কোন সদস্য (আইনজীবী) বন্দী গোবিন্দ কুমার মন্ডলের মামলা পরিচালনায় যুক্ত না হওয়ায় এবং জামিনের চেষ্টা না করায় কারাগারে অন্তরীন ছিল। অবশেষে মানবিক বিচারক স্ব-প্রণোদিত হয়ে নিজ উদ্যোগে জেলখানার মাধ্যমে বন্দী গোবিন্দ মন্ডলের জামিনের আবেদন সংগ্রহত করেন এবং তাকে লিগ্যাল এইড প্রদানের নির্দেশ দেন।
উল্লেখ্য, ইতিপূর্বে ম্যাজিষ্ট্রেট আদালত তার জামিন আবেদন নাকচ করেন। মানবিক বিচারক বিজ্ঞ সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ শেখ মফিজুর রহমানের আদালতে আসামি পক্ষ জামিনের আবেদন জানালে গতকাল তাকে জামিনে মুক্তির নির্দেশ দেন। যিনি জামিন দিলেন তাকেই হুমকি, তার কাছেই চাঁদাদাবি : অথচ সেই বিচারকই জামিন দিলেন, এখানেই শেষ নয়, জামিন উত্তর ও পরবর্তীতে ব্যবস্থাগুলো উদার বিচারক নিজেই সম্পন্ন করলেন।