শিক্ষা ডেস্ক : করোনাভাইরাসের কারণে এগারো মাস ধরে বন্ধ থাকা হলগুলো খুলে দেওয়ার দাবিতে দিনভর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আন্দোলনের উত্তাপ ছড়িয়েছেন শিক্ষার্থীরা। বিক্ষোভ মিছিল, স্মারকলিপি পেশ ছাড়াও জোর করে হলে ওঠার ঘটনাও ঘটেছে। একই দাবিতে প্রশাসনকে ৭২ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।
সার্বিক বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে মঙ্গলবার বসবে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলের সভা। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে, জাতীয় সিদ্ধান্ত, শিক্ষার্থীদের ভ্যাক্সিনেশনের আওতায় আনা, তাদের হলে উঠানো এবং পরীক্ষার তারিখগুলো নিয়ে সভায় আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এর আগে সোমবার দুপুরে জোর করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদুল্লাহ হলে প্রবেশ করেন অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী। জানতে চাইলে কক্ষে ওঠে যাওয়া কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, হলের গেট খোলা ছিল। তাই তারা প্রবেশ করেছেন। এতে তাদের কেউ বাধা দেয়নি।
তারা বলেন, ‘শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো ছাড়া অফিস-আদালত সবকিছুই চলছে। যানবাহনের দিকে তাকালেই বিষয়টা বোঝা যায়। তাহলে আমরা আর কিসের জন্য অপেক্ষা করব? স্থায়ীভাবে থাকার পরিকল্পনা নিয়েই এসেছি।’
একই সময় রুমে উঠতে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী অমর একুশে হলের সামনে ভিড় জমান। এ সময় তারা হলের মূল প্রবেশপথ পেরিয়ে হল খুলে দেওয়ার দাবিতে শ্লোগানও দেন। তবে, বিকেল হতে হতে হল থেকে নেমে যান শহীদুল্লাহ হলে ওঠা শিক্ষার্থীরা।
তাদের একজন দাবি করেন, ‘হল সংসদের সাবেক ভিপি ও ঢাবি ছাত্রলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক হোসাইন আহমেদ সোহানের কথায় তারা হলে উঠেছিলেন। পরে হয়ত তার ওপরে চাপ এসেছে। উনিই আমাদের নেমে যেতে বলেছেন।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সোহান বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় এখনও হল খোলার সিদ্ধান্ত নেয়নি। এখন কেউ আমাকে জিজ্ঞেস করলে আমি তো তাকে হলে থাকতে বলতে পারি না। সেই এখতিয়ার আমার নেই।’
এদিকে শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য প্রত্যাহার করে হল খুলতে ৭২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। দুপুরে হল খোলার দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে আয়োজিত এক বিক্ষোভ সমাবেশে এ আল্টিমেটাম দেন শিক্ষার্থীরা।
সমাবেশে আন্দোলনকারীদের মুখপাত্র জুনাইদ হুসেইন খান বলেন, ‘সেশনজট যাতে আর দীর্ঘায়িত না হয়, সেজন্য মার্চ থেকেই হল খুলে দেওয়া হয় যেন। আমরা মার্চ থেকে হলে উঠতে চাই। করোনার কোনো আতঙ্ক আমাদের এখন নাই। প্রশাসন বসে একটি সিদ্ধান্ত নিক। আমরা ৭২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিচ্ছি, এর মধ্যে মার্চে হল খোলার বিষয়ে লিখিতভাবে নোটিশ দিতে হবে।’
সমাবেশ শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে উপাচার্য কার্যালয়ে যান আন্দোলনকারীরা। পরে তাদের পাঁচ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের কাছে হল খোলার দাবি সংবলিত স্মারকলিপি পেশ করেন। সেখান থেকে ফিরে তারা সাংবাদিকদের বলেন, উপাচার্য তাদের দাবির বিষয়ে (আজকের) একাডেমিক কাউন্সিলে কথা বলবেন। একাডেমিক কাউন্সিল যদি হল খোলার সিদ্ধান্ত না নেয় তাহলে তারা পরবর্তী কর্মসূচিতে যাবেন।
পরে সার্বিক বিষয় নিয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘একটি পরিপ্রেক্ষিতে একাডেমিক কাউন্সিল সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ১৩ মার্চ থেকে অনার্স ও মাস্টার্সের পরিক্ষার্থীদের হলে রেখে পরীক্ষা নেওয়ার। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আমরা আগামীকাল (মঙ্গলবার) জরুরি ভিত্তিতে একাডেমিক কাউন্সিলের সভা ডেকেছি। সেখানে আমাদের জাতীয় সিদ্ধান্ত, শিক্ষার্থীদের ভ্যাক্সিনেশনের আওতায় আনা, তাদের হলে উঠানো এবং পরীক্ষার তারিখগুলো নিয়ে আলোচনা হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্যান্ডেমিকের মধ্যে জাতীয়ভাবে সিদ্ধান্ত আসতে হয়, সমন্বিত হতে হয়। না হলে অনেক সময় মহামারির ঝুঁকি বাড়ে। সেগুলো বিবেচনায় নিয়েই একাডেমিক কাউন্সিল সভা করবে।’
শিক্ষার্থীদের জোর করে হলে উঠে যাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা দায়িত্বশীল। এর ব্যতিক্রম আমাদের চোখে পড়ে না। আশা করি তারা তাদের বিবেকপ্রসূত সিদ্ধান্ত নেবে। শিক্ষার্থীদেরও কিন্তু চাপ অনেক। তারা ধৈর্য ধরেছে। তাদের কথা চিন্তা করে যেখানে যে সিদ্ধান্ত প্রয়োজন একাডেমিক কাউন্সিল তা নেবে।’