খেলার খবর : পাল্লেকেলের উইকেটে বোলাররা সুবিধা পাবে না, প্রথম দিনই সেটার আভাস মিলেছিল। এরপর উইকেটশূন্য চতুর্থ দিন পার করে বাংলাদেশও বুঝেছে মরা উইকেটে বিনোদনের খোরাক কেবল ব্যাটসম্যনারাই দিতে পারেন। হয়েছেও তাই! বাংলাদেশের দুজন পেয়েছেন সেঞ্চুরি। শ্রীলঙ্কার একজন ডাবল সেঞ্চুরি, আরেকজন হাঁকালেন দেড়শ। রান উৎসবের ম্যাচটিতে শেষ পর্যন্ত ড্র করেছে বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা।
এই ড্রয়ের সুবাদে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে পয়েন্টের খাতা খুলল বাংলাদেশ। লঙ্কানদের বিপক্ষে ড্র করে ২০ পয়েন্ট পেল মুমিনুল হকের দল। এর আগের পাঁচ ম্যাচের সবকটিতেই হেরেছিল বাংলাদেশ। সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্ট আগামী ২৯ এপ্রিল শুরু হবে।
গতকাল শনিবার চতুর্থদিন গতি, বাউন্স ও লাইন-লেংথ ঠিক করে বল করেও সাফল্য পায়নি বাংলাদেশ। তবে আজ রোববার পঞ্চমদিন উইকেট পেয়েছেন বাংলাদেশি বোলাররা। দিনের শুরুতেই লঙ্কান দুই সেঞ্চুরিয়ানকে সাজঘরে পাঠান তাসকিন আহমেদ।
২৪৪ রানে থামেন লঙ্কান ওপেনার দিমুথ করানারত্নে। ৪৩৭ বলে তাঁর ইনিংসে ছিল ২৬টি বাউন্ডারি। অন্যদিকে আরেক সেঞ্চুরিয়ান ধনঞ্জয়া ডি সিলভা করেছেন ১৬৬ রান। ২৯১ বলে ২২টি বাউন্ডারি হাঁকিয়েছেন তিনি। দুই টপ অর্ডারের শক্ত জুটি ভাঙার পর বাকিদের ব্যাটে চড়ে আট উইকেটে ৬৪৮ রানে প্রথম ইনিংস ঘোষণা করে শ্রীলঙ্কা। প্রথম ইনিংসে লিড পায় ১০৭ রানের।
পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই জোড়া উইকেট হারায় বাংলাদেশ। ইনিংসের শুরুতেই আউট হন তরুণ ওপেনার সাইফ। প্রথম ইনিংসে সেঞ্চুরি হাঁকানো নাজমুল হোসেন শান্তও ফিরেছেন শূন্য রানে। দলীয় ২৭ রান তুলতেই জোড়া উইকেট হারিয়েছে মুমিনুল হকের দল। তবে দুই সতীর্থ ভুল করলেও তাড়াহুড়ো করেননি তামিম ইকবাল।
প্রথম ইনিংসের আগ্রাসী তামিম এই ইনিংসেও একই রূপে ধরা দিলেন। নান্দনিক সব শটে তুলে নিয়েছেন ক্যারিয়ারের ৩০তম হাফসেঞ্চুরি। পঞ্চাশ ছোঁয়ার পর সেঞ্চুরির পথে হাঁটছিলেন এই বাঁহাতি ওপেনার। কিন্তু তামিমের সেঞ্চুরির পথেই বাধা হয়ে দাঁড়ায় বৃষ্টি। তামিমকে ৭৪ রানে অপরাজিত রেখে শেষ হয় দ্বিতীয় সেশন। এর মাঝে ক্যান্ডিতে বৃষ্টির বাড়লে তৃতীয় সেশনের খেলা মাঠে গড়ায়নি। শেষ পর্যন্ত লঙ্কানদের স্থানীয় সময় বিকেল ৪টার পর দুই অধিনায়ক মিলে ম্যাচের ফল ড্র মেনে নেন।
গতকাল শনিবার চতুর্থদিন তিন উইকেটে ৫১২ রান নিয়ে দিন শেষ করে শ্রীলঙ্কা। তিন উইকেটে ২২৯ রানে কাল দিন শুরু করে শ্রীলঙ্কা। প্রথম ঘণ্টায় কোনো সুবিধাই তৈরি করতে পারেননি সফরকারী বোলাররা। বরং আগের দিন ৮৫ রানে অপরাজিত থাকা দিমুথ করুনারত্নে সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন। ২৪৭ বলে ক্যারিয়ারের ১১তম সেঞ্চুরি করেছেন তিনি।
ওই সেঞ্চুরিকেই দিনের শেষ সেশনে ডাবল সেঞ্চুরিতে রূপ দেন লঙ্কান ওপেনার। ৩৮৭ বল খেলে ২১ চারে ডাবল সেঞ্চুরির ঘর স্পর্শ করেন করুনারত্নে। যদিও ডাবল সেঞ্চুরির বলটি মোকাবিলা করার সময়েই আউট হতে পারতেন তিনি। তাসকিনের বলে কাট করতে গিয়ে তাঁর ব্যাটের কানায় লেগে উপরে উঠে যায়। সহজ ক্যাচ নিতে পারতেন কিপার লিটন। কিন্তু সেটা আর হলো না। বল চলে যায় বাউন্ডারিতে। করুনারত্নেও পৌঁছে যান দ্বিশতকের ঘরে।
পুরো দিনে করুনারত্নের সঙ্গে দারুণভাবে ব্যাট করেছেন ধনঞ্জয়াও। এই জুটিতে নিজেদের লক্ষ্যে ছুটছিল শ্রীলঙ্কা। কিন্তু আজ আর সেটা সম্ভব হয়নি। আলোর স্বল্পতার কারণে দিনের ২২ ওভারে খেলা বাকি থাকতেই শেষ হয় চতুর্থ দিন।
এর আগে গতকাল স্কোরবোর্ডে ৫৪১ রানের বিশাল রান নিয়েই ইনিংস ঘোষণা করেছিলেন বাংলাদেশের অধিনায়ক মুমিনুল হক। সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছেন বাংলাদেশের দুই ব্যাটসম্যান নাজমুল হোসেন শান্ত ও অধিনায়ক মুমিনুল হক। ৩৭৮ বলে ১৬৩ রান করেছেন শান্ত। আর ৩০৪ বলে ১২৭ রান এসেছে অধিনায়ক মুমিনুলের ব্যাট থেকে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ : ৫৪১/৭, ৩৩ ওভারে ১০০/২ ( তামিম ৭৪*, সাইফ ১, শান্ত ০, মুমিনুল ২৩ ; লাকমল ৮-২-২১-২, ফার্নান্দো ৫-২-১৮-০, ডি সিলভা ১১-১-৪৬-০)।
শ্রীলঙ্কা ১ম ইনিংস: ১৭৯ ওভারে ৬৪৮/৮ (আগের দিন ৫১২/৩) (করুনারত্নে ২৪৪, ধনাঞ্জয়া ১৬৬, নিসানকা ১২, ডিকভেলা ৩১, হাসারাঙ্গা ৪৩, লাকমল ২২*, বিশ্ব ০*; আবু জায়েদ ১৯-২-৭৬-০, তাসকিন ৩০-৬-১১২-৩, ইবাদত ২১-১-৯৯-১, মিরাজ ৫৮-৬-১৬১-১, তাইজুল ৪৫-৯-১৬৪-২, মুমিনুল ৪-০-১৮-০, সাইফ ২-০-৫-০)।
ফল : ম্যাচ ড্র