সেন্ট্রাল হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় রোগী মৃত্যুর অভিযোগে হাসপাতালে ভাঙচুর ও চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে মামলার প্রতিবাদে আজ মঙ্গলবার (২৩ মে) সারাদেশে প্রাইভেট প্র্যাকটিস বন্ধ রেখেছেন চিকিৎসকরা। বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) ঘোষণা অনুযায়ী এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এদিকে প্রাইভেট প্রাকটিস বন্ধ থাকায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন রোগীরা।
রোগীদের দুর্ভোগের কথা স্বীকার করে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক চিকিৎসক জানিয়েছেন, রোগীদের এই দুর্ভোগের জন্য তারা আন্তরিকভাবে দুঃখিত। কিন্তু নিজেদের নিরাপত্তার জন্য একুটু (প্রাকটিস বন্ধ রাখা) করতে বাধ্য হয়েছেন। তারা আরও জানান, বহির্বিভাগের চিকিৎসা বন্ধ রাখা হলেও জরুরি বিভাগের চিকিৎসা চলছে।
মঙ্গলবার সকালে গ্রিনরোডের সেন্ট্রাল হাসপাতাল, ল্যাবএইড, গ্রিন লাইফসহ আরও কয়েকটি হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে, সেখানে থাকা চিকিৎসকরা বিএমএ’র সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জরুরি চিকিৎসা ছাড়া রোগী দেখছেন না।
সেন্ট্রাল হাসপাতালে রংপুর থেকে আসা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নারী জানান, তিনি গত পরশু (রবিবার) রাত ১১টা পর্যন্ত হাসপাতালে থেকে আজকের (মঙ্গলবার) সিরিয়াল দিয়ে গেছেন দেশের নাম করা একজন গাইনি চিকিৎসকের কাছে। কিন্তু আজ এসে শুনেন যে, ডাক্তার বসবেন না। এটা হয়রানি ছাড়া কিছু না। তিনি আরও জানান, ডাক্তার দেখাতে রংপুর থেকে ঢাকায় আসা এত সহজ না। তাকে কর্মক্ষেত্র থেকে ছুটি নিয়ে আসতে হয়েছে।
গ্রিনরোডের গ্রিন লাইফ হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, এক ব্যক্তি রিসিপশনে গিয়ে মেডিসিন বিভাগের এক চিকিৎসকের অ্যাপয়েন্টমেন্ট চাচ্ছেন। কিন্তু রিসিপশন থেকে তাকে বলা হয়, সারাদেশে আজ চিকিৎসকরা চেম্বারে বসবেন না। আজকে কোনও ডাক্তার দেখানো যাবে না।
এ হাসপাতালেই ছোট বোনকে নিয়ে আসা মামুন বলেন, ‘নিজের ক্লাস বাদ দিয়ে বোনকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে এসেছিলাম। কিন্তু ডাক্তার দেখাতে পারিনি। জানি না কিসের জন্য ডাক্তাররা ধর্মঘট ডেকেছেন। তবে অন্যান্য সব পেশার মানুষদের মতো ডাক্তাররাও ধর্মঘট ডেকে পরিচয় দিলেন যে, তারা আর মহৎ পেশায় নিয়োজিত নেই। ডাক্তারি এখন আর নোবেল প্রফেশন নয়। চিকিৎসকরা রোগী না দেখে তাদের শপথ ভঙ্গ করছেন।’
সেন্ট্রাল হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় রোগী মৃত্যুর অভিযোগে হাসপাতালে ভাঙচুর ও চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে মামলার প্রতিবাদে গত ২০ মে বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) এর কার্যনির্বাহী পরিষদ সারাদেশের চিকিৎসকদের প্রাইভেট প্র্যাকটিস বন্ধ রাখার এই ঘোষণা দেয়। এছাড়াও গত ২১ মে থেকে আগামী ২৫ মে পর্যন্ত তারা সকাল ৮ টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত কালো ব্যাজ ধারণের সিদ্ধান্ত নেন।
রাজধানীর গ্রিন রোডে সেন্ট্রাল হাসপাতালে ঢাবি শিক্ষার্থী আফিয়া জাহিন চৈতি মৃত্যুর ঘটনায় গত ১৮ মে ধানমন্ডি থানায় মামলা দায়ের করেন ঢাবি প্রক্টর আমজাদ আলী। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিক্যাল অনুষদের ডিন ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহকে এক নম্বর আসামি করে ১০ জনের বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করা হয়। এর পরপরই সেন্ট্রাল হাসপাতালের পরিচালক ডা. এম এ কাশেম ও ডা. সাজিদ হোসেনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এর মধ্যে সব চিকিৎসকরাই জামিন নিয়েছেন।
উল্লেখ্য, আফিয়া জাহিন চৈতি ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে বুধবার (১৭ মে) সেন্ট্রাল হাসপাতালে ভর্তি হলেও তাকে ক্যান্সারের চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে। পরদিন বৃহস্পতিবার তার মৃত্যু হয়। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে নিহতের সহপাঠীরা ওই হাসপাতালে এসে ভাঙচুর করেন।