দেশের খবর : রাজধানীতে করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশের দেহেই ডেলটা ভ্যারিয়েন্টের সন্ধান পেয়েছেন আইসিডিডিআর,বি-এর একদল গবেষক।
আইসিডিডিআর,বির মিডিয়া ম্যানেজার এ কে এম তারিফুল ইসলাম খান বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের বলেন, আমাদের ল্যাবে এসব নমুনা পরীক্ষা করে ৬৮ শতাংশ ডেলটা ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া গেছে।
তিনি জানান, গত মে মাসের শেষ এবং জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে ঢাকায় করোনাভাইরাস আক্রান্ত ৬০ জনের নমুনার জেনোম সিকোয়েন্স বিশ্লেষণ করে ৬৮ শতাংশের দেহে ডেলটার সংক্রমণ পেয়েছে আইসিডিডিআর,বি।
ডেল্টার ভ্যারিয়েন্টের বাইরে ২২ জনের নমুনায় সাউথ আফ্রিকান ভ্যারিয়েন্ট, দুই জনের নাইজেরিয়ান ভ্যারিয়েন্ট, একজনের উহান ভ্যারিয়েন্ট ও একজনের নমুনায় অজানা একটি ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়।
ভারতে উদ্ভূত করোনাভাইরাসের এ ধরনটি দ্রুত ছড়ায় বলে এটা একটা উদ্বেগের বিষয় বলে মনে করছেন সরকারি সংস্থা আইইডিসিআরের উপদেষ্টা ও সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মুশতাক হোসেন।
দেড় বছর আগে মানুষে সংক্রমিত হওয়া নতুন করোনাভাইরাস রূপ বদল করে চলছে। এর মধ্যে গত বছর ভারতে এর যে পরিবর্তিত রূপ শনাক্ত হয়েছে, তা নাম পেয়েছে ডেলটা। এই ধরন বা ভ্যারিয়েন্টটি (বি.১.৬১৭.২) অতি সংক্রামক হওয়ায় একে ‘বিশ্বের উদ্বেগ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।
ভারতের মহামারীতে বিপর্যস্ত হওয়ার জন্য এই ধরনটিকে দায়ী করা হচ্ছে।
ডা. মুশতাক বলেন, এর আগে আইইডিসিআরের পরীক্ষায়ও ৫০টি নমুনার মধ্যে ৪০টিতে ডেলটা ভেরিয়েন্ট পাওয়া গিয়েছিল। এটা মোটামুটি অনুমিতই ছিল। ৬৮ শতাংশ ডেলটা ধরন পাওয়া মানে এই ধরনটি আমাদের এখানে প্রাধান্য বিস্তার করছে। এটা অবশ্যই ঝুঁকির বিষয়। কারণ এই ধরন খুব দ্রুত ছড়ায়। আক্রান্ত মানুষকে দীর্ঘদিন হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হয়। ধরন যাই হোক, করোনাভাইরাস থেকে প্রতিরোধের একটাই উপায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা।
গত ৮ মে দেশে প্রথম ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়েছিল। ভারতের দ্রুত সংক্রামক ভ্যারিয়েন্টের প্রবেশ ঠেকাতে সরকার ২৬ এপ্রিল দেশটির সঙ্গে সীমান্ত বন্ধ করে দেয়। এরপরও সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হওয়ার কথা জানা যায়। এরকম বেশ কয়েকটি জেলায় শনাক্তের হার সম্প্রতি ৫০ শতাংশও ছাড়িয়েছে।
এর আগে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) এর জিনোম সিকোয়েন্সেও ভারতীয় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়েছিল। ৫০টি নমুনার মধ্যে ৪০টিতেই তখন ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া যায়। তবে এর মধ্যে মাত্র দুটি নমুনা ছিল ঢাকার। বাকি নমুনাগুলো ছিল দিনাজপুর, গাইবান্ধা, বাগেরহাট, ঝিনাইদহ, পিরোজপুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, গোপালগঞ্জ ও খুলনা জেলার। ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের সামাজিক সংক্রমণ শুরু হওয়ার কথা জানানো হয়েছিল তখনই।
বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়ায় ঢাকা শহরের করোনা পরিস্থিতি খুলনা ও রাজশাহী বিভাগের মতো হয়ে যেতে পারে।