বিনোদন সংবাদ : কারাবন্দী চলচ্চিত্র অভিনেত্রী পরীমনির মুক্তির দাবিতে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিক্ষুব্ধ নাগরিকজনের ব্যানারে মানববন্ধন করা হয়েছে। শনিবার (১৪ আগস্ট) বিকেল চারটায় শুরু হওয়া এই মানববন্ধনে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে একাত্মতা প্রকাশ করেন লন্ডন অবস্থানরত বিশিষ্ট সাংবাদিক, সাহিত্যিক ও কলামিস্ট আবদুল গাফফার চৌধুরী। চলচ্চিত্র, রাজনৈতিক ও সংস্কৃতি অঙ্গনসহ সাধারণ মানুষ এই মানববন্ধনে অংশ নেন।
পরীমনির মুক্তির দাবি জানিয়ে গাফফার চৌধুরী বলেন, পরীমনির সঙ্গে যেটা করা হয়েছে সেটা অন্যায়। নারী বলে তাকে হেনস্তার শিকার হতে হচ্ছে। অবিলম্বে তার মুক্তির দাবি জানাই আমি।
লেখক ও মানবাধিকার কর্মী শাশ্বতী বিপ্লব বলেন, দেশে এখন নষ্ট মেয়ে বানাবার চল শুরু হয়েছে। যাকে যখন ভালো লাগবে না তাকে তখন নষ্ট মেয়ের তকমা লাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এটা হতে পারে না। নষ্ট মেয়ের তকমা লাগানো খুবই সহজ। প্রতিটি প্রতিবাদী নারীকে নষ্টা মেয়ে তকমা লাগাতে পারেন। কারা এই মেয়েদের নষ্ট করেছে? নষ্ট মেয়ে ঠিক করা তো আপনাদের কাজ না। মোল্লাদের মতো কিছু কিছু সংবাদমাধ্যমও নারীদের চরিত্র হননে ব্যস্ত হয়ে গেছেন। এটা বন্ধ হওয়া উচিত।
বিক্ষুব্ধ নাগরিকজনের আহ্বায়ক ও শ্রাবণ প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী রবিন আহসান বলেন, আমরা আজ শুধু পরীমনির জন্য দাঁড়াইনি, আমরা দেশের সমগ্র নারী সমাজের জন্য দাঁড়িয়েছি। তালেবানের আফগানিস্তানের মতো নারীদের পাথর ছুঁড়ে মারার প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছে। মাত্র কয়েক বোতল মদের জন্য ৬ দিন রিমান্ড। অথচ গুলশান বনানী সব জায়গায় মদ আছে, সেগুলোর খোঁজ কে রাখে। কিন্তু মদ পাওয়ায় পরীমনিকে আটকে রাখা হয়েছে। এ থেকেই বোঝা যায় এর পেছনে অন্য কিছু আছে। এমন চলতে থাকলে এমন দিন আসবে যেদিন নারী সংবাদ পাঠক পাব না, চলচ্চিত্রে প্রতিভাবান নায়িকা পাব না। গণমাধ্যম দীর্ঘসময় পরীমনিকে নিয়ে নেতিবাচক সংবাদ প্রকাশ করেছে। পুলিশ যেভাবে উপস্থাপন করেছে, সংবাদমাধ্যম সেভাবেই কাজ করেছে। স্বাধীনতার ৫০ বছর পরে এই প্রথম এভাবে নারী নিপীড়নের সংবাদ প্রচার হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বোট ক্লাবের ঘটনার পরই কেন পরীমনির বাসায় অভিযান। আপনারা কেন প্রশ্ন করেন না যে, একটা বোট ক্লাব কেন পুলিশ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা চালাবে? পরীমনিকে দ্রুত মুক্তি না দিলে সাংস্কৃতিক সমাজকে নিয়ে বড় আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। কেউ আমাদের সঙ্গে না থাকলেও সামাজিক গণমাধ্যম আমাদের সঙ্গে আছে। শুধু পরীমনি নয়, আমরা সবাই নারী সমাজের পাশে দাঁড়াবো।
রাজনীতিবিদ বীর মুক্তিযোদ্ধা কমরেড আবুল হোসেন বলেন, জাতীয় শোক দিবসের প্রাক্কালে এই ধরনের বিক্ষুব্ধ কথা বলতে হবে এটা আমরা চিন্তা করিনি। এই সমাজ পুরুষতান্ত্রিক সমাজ। পুরুষতান্ত্রিক সমাজের কাজ হলো নারীকে অবদমন করা ৷ পরীমনির সঙ্গে সেটাই করা হচ্ছে। আমরা সরকারের কাছে কোনো বাড়তি সুবিধা চাই না। পরীমনি একজন বাংলাদেশের নাগরিক। তার ন্যায় বিচার পাওয়ার অধিকার আছে। সরকারের কাছে আমরা সেই দাবিটুকুই জানাচ্ছি।
সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন সাংবাদিক রঞ্জু চৌধুরী, মানবাধিকারকর্মী মুশফিকা লাইজু, নির্মাতা রাশিদ পলাশ, নির্মাতা সংগীতা ঘোষ, প্রকাশক দেলোওয়ার হোসেন, যুব ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক খান আসাদুজ্জামান মাসুম, গণজাগরণ মঞ্চের উদ্যোক্তা আকরামুল হক প্রমুখ।