ডেস্ক রিপোর্ট : দৈনিক আজকের সাতক্ষীরা পত্রিকার অফিসে আলোচিত সাতক্ষীরা সদর এমপির ভাইদের নেতৃত্বে সন্ত্রাসী হামলা চালিয়ে ভাংচুর ও প্রাণনাশের হুমকি প্রদান করা হয়েছে। এ ঘটনা সাংসদের সহোদর দুই ভাইসহ ৩ জনের নাম উল্লেখ করে আর ৪/৫ জন অজ্ঞাতনামাকে আসামি করে সাতক্ষীরা সদর থানায় পত্রিকাটির সার্কুলেশন ম্যানেজার আমরি হোসনে খান চৌধুরী বাদি হয়ে মামলা দায়ের করেছেন।
অন্যদিকে এ ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রভাবিত করতে একের পর এক দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগের পাহাড় গড়ে ওঠা এমপি পরিবারের পক্ষ থেকে সাতক্ষীরা সদর থানায় পত্রিকাটির ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক এবং সাতক্ষীরা রিপোর্টার্স ইউনিটির সদস্য সচিব হাফিজুর রহমান মাসুমের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে।
সংগঠনের সদস্য সচিবের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও ষঢ়যন্ত্রমূলক মামলা দায়েরের তীব্র প্রতিবাদ এবং নিন্দা জানিয়েছে সাতক্ষীরা রিপোর্টার্স ইউনিটি। একই সাথে অবিলম্বে এই মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করা না হলে সাতক্ষীরা জেলায় কর্মরত সর্বস্তরের সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে বৃহত্তর আন্দোলনের কর্মসূচি দেয়া হবেও জানিয়েছে সংগঠনটি।
উল্লেখ্য, দৈনিক আজকের সাতক্ষীরা পত্রিকা অফিসে হামলা চালিয়ে কম্পিউটারসহ আসবাবপত্র ভাংচুর ও ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক হাফিজুর রহমান মাসুমকে শ্বাসরোধ করে হত্যা প্রচেষ্টার অভিযোগে সাতক্ষীরা সদর এমপির ভাই মীর মাহমুদ হাসান লাকী ও মীর মইনুল ইসলামসহ অজ্ঞাতনামা ৪/৫ জনের নামে থানায় একটি এজাহার দায়ের করা হয়েছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় পত্রিকাটির সার্কুলেশন ম্যানেজার আমির হোসেন খান চৌধুরী বাদি হয়ে উক্ত এজাহারটি দায়ের করেন। মামলাটি গতকাল রাতে রেকর্ড করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন সাতক্ষীরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) মারুফ আহম্মেদ। মামলা নং ৮৪, তাং ৩০/০৫/১৭
বাদি তার এজাহারে উল্লেখ করেন, মুনজিতপুর এলাকার মৃত মীর এশরাক আলীর দুই ছেলে মীর মাহমুদ হাসান লাকী (৬২) ও মীর ময়নুল ইসলাম (৫৫) এবং একই এলাকার সৈয়দ শরিফুল আলম (আপেল) এর ছেলে সৈয়দ শফিকুল আলম রাজ(৫২)সহ অজ্ঞাত নামা ৪/৫ জন গত ২৯/৫/২০১৭ তারিখ রাত অনুমান ১১.০০ ঘটিকার সময় আমাদের পত্রিকা অফিসের মধ্যে প্রবেশ করিয়া আমাকেসহ এই মামলার ১ নং স্বাক্ষী ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক হাফিজুর রহমান মাসুম এবং এই পত্রিকার পেস্টিংম্যান ও এই মামলার ২ নং স্বাক্ষী মো: আব্দুস সালাম দেখে হুমকি ও আস্ফলন করিয়া বলে যে, তোরা আমাদের ভাই এমপির বিরুদ্ধে পত্রিকায় নিউজ করিস বলিয়া আসামিরা অফিসের মধ্যে রক্ষিত একটা কম্পিউটার, একটা প্রিন্টার মেশিন, ঘরের টিনের চালের নিচে ককসিটের সিলিং, টিনের চাল ও একটা ল্যাপটপ ভাংচুর করিয়া অনুমান ১,৫০,০০০(এক লক্ষ পঞ্চাশ হাজার) টাকার ক্ষতি সাধন করে। এই মামলার ২ নং আসামি মীর মইনুল ইসলাম ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মোঃ হাফিজুর রহমান মাসুমের গলা দুই হাত দিয়া চাপিয়া শ্বাসরোধ করিয়া হত্যার চেষ্টা করে। একই সময়ে ১নং আসামি মীর মাহমুদ হাসান লাকী ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক হাফিজুর রহমান মাসুমের মাথায় পিস্তল ঠেকাইয়া বলে যে, তোরা যুদ্ধাপরাধ মামলা নিয়ে কাজ করিস। তোদের কাজ করা পিন্ডির মধ্যে দেব। যুদ্ধাপরাধী খালেক মন্ডলের পুত্র নাশকতা মামলার আসামিকে আমার ভাই ভালুকা চাঁদপুর আদর্শ কলেজের পূর্ণ বেতন দিয়েছে তাতে তোদের কি? তোদের বাপের টাকা দিয়েছে? তোদের জীবনে শেষ করার জন্য এই পিস্তলের দুটি গুলিই যথেষ্ট বলিয়া হুমকি দিলে, আমরা প্রাণ ভয়ে ডাক চিৎকার করি। আমাদের ডাক চিৎকার শুনিয়া স্বাক্ষী ৩. তহিদুর রহমান ডাবলু, পিতা- মৃত শেখ জিয়াউর রহমান, সাং-সুলতানপুর, ৪. মো: আমিরুল ইসলাম পিতা- আব্দুল মুজিদ, সাং- কামারডাঙ্গা, সর্ব থানা ও জেলা-সাতক্ষীরাগণ দ্রুত অফিসের মধ্যে আসিয়া আসামিদের কাজে বাধা দিলে আসামিগণ হুমকি দিয়ে বলে যে, লোকজন আসার কারণে তোরা এবারের মত জীবনে বেঁচে গেলি, এরপর যে কোনদিন এসে তোদের পত্রিকার অফিস ভাংচুর করিয়া ধুলিসাৎ করিয়া দেব। আর এই বিষয় লইয়া থানা পুলিশ করিলে তোদের মারপিট করিব, খুন জখম করিব, খুন করিয়া তোদের লাশ গুম করিব, মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানী করিব ইত্যাদি অপরাধমূলক ভীতি প্রদর্শন করিয়া আসামিগণ ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।
অবশ্য সাংসদের ভাই লাকী ভাংচুরের অভিযোগ অস্বীকার করে দাবি করেন, তাকে ডেকে নিয়ে পত্রিকা অফিসের ভিতরে মারপিট করা হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে দৈনিক আজকের সাতক্ষীরা’র ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক হাফিজুর রহমান মাসুম বলেন, এটি একটি পরিকল্পিত হামলা। সবাই জানে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ৪ যুদ্ধাপরাধীর মামলা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন। এ মামলার স্বাক্ষ্য-প্রমাণ যোগাড়ে আমি দীর্ঘদিন ধরে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থাকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করে আসছি। এর পাশাপাশি লেখলেখির মাধ্যমে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের স্বপক্ষে মতামত তৈরিতেও নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার এসব আসামিদের পরিবারের প্রতি সহানুভূতিশীল একটি ক্ষমতাধর গোষ্ঠী নানাভাবে আমাকে হুমকি-ধামকি প্রদানসহ হয়রানি করে আসছে। এই ঘটনা তারই অংশ। এ ঘটনাকে ভিন্নখাতে পরিচালিত করতে আসামিরা আমার নামে একটি মিথ্যা ও সাজানো মামলাও দায়ের করেছে। সংবাদপত্র অফিসে এসে ভাংচুর ও আমাকে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে আবার আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিচ্ছে। দেশটাকে এরা মগের মুল্লুক বানাতে চাইছে। কিন্তু তারা তা পারবে না।
এ বিষয়ে সাতক্ষীরা রিপোর্টার্স ইউনিটির আহবায়ক রামকৃষ্ণ চত্রবর্তী বলেন, “সংবাদপত্র অফিসে ঢুকে হামলা, ভাংচুর ও হুমকির মত ঘটনা মেনে নেয়া যায় না। আমরা সংবাদকর্মী হিসেবে এ ঘটনায় দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।
পূর্ববর্তী পোস্ট