প্রেস বিজ্ঞপ্তি : সাতক্ষীরার প্রথিতযশা সাংবাদিক আবদুল মোতালেব একটি অদর্শের নাম, একটি স্মরণীয় নাম। আবদুল মোতালেব একটি অনুকরনীয় দৃষ্টান্ত, আমাদের চলার পথের এক আলোকরশ্মির নাম আবদুল মোতালেব। প্রয়াত এই সাংবাদিক তার কর্মের মধ্য দিয়ে চিরঞ্জীব হয়ে থাকবেন। তাকে স্মরণে রেখেই আমাদের পথচলা । প্রয়াত এই গুনী সাংবাদিক আবদুল মোতালেব তার জীবদ্দশায় যে সমাজকর্ম করে গেছেন তার মধ্যেই তিনি বেঁচে থাকবেন। তার আদর্শ ও চলার পথ অনুসরন করে নতুন প্রজন্মকে শিক্ষা গ্রহন করতে হবে।
শুক্রবার সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত আবদুল মোতালেব স্মরণ সভায় এ কথা বলেন আয়োজকরা। তার ১৫ তম মৃত্যু বার্ষিক উপলক্ষে এই সভার আয়োজন করা হয়। এর আগে প্রয়াত এই সাংবাদিকের মাজার জিয়ারত করেন সাতক্ষীরার সাংবাদিকরা। তারা সেখানে তার জন্য দোয়া করেন। অপরদিকে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাব হলরুমে আয়োজিত স্মরণ সভায় তার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
অনুষ্ঠানে সাংবাদিক বক্তারা বলেন তিনি একাধারে বাংলাদেশ সাংবাদিক সমিতির সভাপতি, সাতক্ষীরার প্রথম দৈনিক কাফেলার সম্পাদক এবং সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি ছিলেন বাংলাদেশ অবজারভার ও বাংলাদেশ টেলিভিশনের সাতক্ষীরা জেলা প্রতিনিধি। জাতীয় কমিটির সদস্য ও কমিশনার হিসাবে তিনি রেড ক্রিসেন্ট ও বাংলাদেশ স্কাউট ব্যক্তিত্ব হিসাবেও সারা দেশে সুনাম অর্জন করেন। সংস্কৃতি চর্চায় মুক্ত উদার এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনাধারনকারী ব্যক্তি হিসাবে আবদুল মোতালেব সারা জেলা চষে বেড়িয়েছেন। জাতীয় ক্ষেত্রে সাতক্ষীরাকে বারবার উপস্থাপন করে তিনি অবহেলিত এই জেলাকে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করতে বিরামহীন প্রচেষ্টা চালিয়েছেন্ । একজন শিক্ষানুরাগী হিসাবে আবদুল মোতালেব নারী শিক্ষা সম্প্রসারণ ও স্কুল কলেজ প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করেছেন। জেলা ও জেলার বাইরেও তিনি নিজ হাতে গড়ে তুলেছেন অগনিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। তিনি ছিলেন সাতক্ষীরার সাংবাদিক গড়ার অন্যতম কারিগর। সাতক্ষীরার কোনো সাংবাদিক তার সহযোগিতা ছাড়া নিজেদের পরিচিতি বাড়াতে পারেন নি। তিনি ছিলেন সাতক্ষীরার উন্নয়নের রূপকার। আবদুল মোতালেব ছিলেন একজন পরিশ্রমী ও নিষ্ঠাবান সমাজসেবক। সমাজের এমন কোনো দিক নেই যেদিকে তিনি হাত দেন নি।্ আর তিনি যেখানে হাত দিয়েছেন সেখানেই তিনি ফলিয়েছেন সোনার ফসল। সমাজকর্মের বিরল স্বীকৃতি হিসাবে তিনি বারবার পুরস্কার লাভ করেছেন। তিনি বিভিন্ন সময়ে জেলার প্রত্যন্ত এলাকায় এমনিভাবে গড়ে তুলেছেন অগনিত স্কুল কলেজ মাদ্রাসা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য তিনি সরকারের কাছ থেকে জমি আদায় করেছেন। আর এতে চাকুরির সংস্থান করেছেন অগনিত মানুষের। তার কাছ থেকে সুবিধা নিয়ে আজও চাকুরি করে চলেছেন অনেক মানুষ। তিনি ছিলেন সমাজের নিপীড়িত নিগৃহীত এবং দুর্যোগ কবলিত মানুষের বন্ধু। দুর্যোগপ্রবণ জেলা সাতক্ষীরায় ঝড় বৃষ্টি, জলোচ্ছ্বাস হলেই আবদুল মোতালেব তার ত্রাণ বহর নিয়ে ছুটতেন সেখানে। ক্ষতিগ্রস্থ মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের খাবার , বস্ত্র, ওষুধ ও বাস্স্থানের ব্যবস্থা করে দিতেন। রেড ক্রিসেন্টের আদর্শ ও লক্ষ্যকে আবদুল মোতালেবই ফুটিয়ে তোলেন সাধারন মানুষের কাছে। তিনি ছিলেন সকলের কাছে অতি প্রিয় মোতালেব ভাই। পান সুপারিতে লাল হয়ে থাকা তারা সদা হাস্যময় মুখমন্ডল মানুষের মনের সব কষ্ট দুর করে দিতো। তিনি ছিলেন সাহসী, উদ্যমী এবং সকল ক্ষেত্রে অগ্রগামী এক পুরুষ। তার দৃষ্টান্ত তিনি নিজেই।
প্রেসক্লাব সভাপতি এড. আবুল কালাম আজাদের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক আবদুল বারীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত স্মরণ সভায় দৈনিক কালের চিত্র সম্পাদক আবু আহমেদ বলেন আবদুল মোতালেব ছিলেন আমাদের পথ প্রদর্শক। তিনি মানুষের কল্যাণে কাজ করে গেছেন। সাবেক সভাপতি সুভাষ চৌধুরী বলেন আবদুল মোতালেব শুধু সাংবাদিক নন তিনি ছিলেন সমাজের অগ্রদূত। তিনি তার কাজের মধ্যে বেঁচে থাকবেন চিরদিন। প্রথম আলোর কল্যাণ ব্যানার্জি বলেন সাংবাদিক আবদুল মোতালেব সাংবাদিক গড়ার কারিগর হিসাবে কাজ করে গেছেন। তার দৃষ্টান্ত তিনি নিজেই। সাবেক সভাপতি জিএম মনিরুল ইসলাম মিনি বলেন আবদুল মোতালেব ছিলেন একজন নিঃস্বার্থ সমাজদরদী মানুষ। তার সংস্পর্শে যিনি গেছেন তিনিই তার আপন হয়ে উঠতেন। দৈনিক দক্ষিনের মশাল সম্পাদক অধ্যক্ষ আশেক ই এলাহি বলেন তার সাথে আমরা মিলিত হয়ে চারণিক শিল্পী গোষ্ঠী গড়ে তুলেছিলাম। এভাবে তিনি সংস্কৃতির সেবা করে গেছেন। সাবেক সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান বলেন তিনি সাংবাদিকদের দুঃসময়ে এগিয়ে এসে তাকে সাহস যুগিয়েছেন। তিনি ছিলেন আমাদের পথপ্রদর্শক। সাবেক সাধারণ সম্পাদক মমতাজ আহমেদ বাপী বলেন আবদুল মোতালেবের দুরদর্শীতার কারণে সাতক্ষীরার সাংবাদিকদের ঠিকানা হয়েছে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাব। আমরা তার জন্য দোয়া করি। সাবেক সাধারণ সম্পাদক এম কামরুজ্জামান বলেন, আবদুল মোতালেব অনুন্নত পিছিয়ে পড়া অচেনা এলাকায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে দেশে শিক্ষার আলো ছড়িয়েছেন। সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইউপি চেয়ারম্যান মোজাফফর রহমান বলেন আবদুল মোতালেব আমাদের এলাকায় যেয়ে স্কুল কলেজ গড়ে তুলতে মানুষকে আগ্রহী করতেন। নিজ হাতে বহু স্কুল কলেজের গোড়া পত্তন করেছেন তিনি। দেশ টিভির শরিফুল্লাহ কায়সার সুমন বলেন তিনি ছিলেন আমাদের সমাজের আলোকবর্তিকা বাহক। ছিলেন মৌলবাদী দৃষ্টিভঙ্গির বিপক্ষে। প্রয়াত সাংবাদিক নেতা আবদুল মোতালেবের জ্যেষ্ঠ ছেলে ডা. রফিকুজ্জামান উজ্জ্বল বলেন আমি একজন সন্তান হিসাবে বলতে পারি তিনি ছিলেন এমন একজন বাবা যিনি কেবলমাত্র তার পরিবার নিয়ে ব্যস্ত থাকেন নি। পরিবারের সুখ দুঃখের সব কথা পেছনে ফেলে তিনি কাজ করেছেন সমাজের জন্য, মানুষের জন্য, শিক্ষার জন্য। দুঃস্থদের সেবা দিয়েছেন উদার হস্তে। ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভির আবুল কাসেম বলেন তিনি ছিলেন শিক্ষানুরাগী মানুষ। জীবনব্যাপী তিনি শিক্ষায় সেবা দিয়ে অমর হয়ে থাকবেন। দৈনিক যশোরের সেলিম রেজা মুকুল বলেন মোতালেব সাহেব ছিলেন জনদরদী ও নিঃস্বার্থ ব্যক্তি। তিনি জীবনভর শুধু কল্যাণকর কাজই করে গেছেন । দৈনিক মানব কন্ঠের অসীম চক্রবর্তী বলেন আবদুল মোতালেব ছিলেন সাতক্ষীরার উন্নয়নের রূপকার। দৈনিক কাফেলার এম ঈদুজ্জামান ইদ্রিস বলেন আবদুল মোতালেব ছিলেন সাংবাদিকদের গুরু। তিনি হাতে কলমে সাংবাদিকতা শিখিয়েছেন। তার নামে প্রেসক্লাব ভবনের নামকরন করা হোক। বাংলা টিভির আমেনা বিলকিস ময়না বলেন আবদুল মোতালেব নারী শিক্ষায় যে অবদান রেখে গেছেন তার কোনো তুলনা নেই। বাংলা নিউজ টুয়েন্টিফোর ডট কম শেখ তানজির আহমেদ বলেন আবদুল মোতালেবের সাথে ছিল আমাদের পারিবারিক সম্পর্ক। তিনি আজীবন মানুষের জন্য কাজ করে গেছেন।
স্মরণ সভার সভাপতি সাতক্ষীরা প্রেসক্লাব সভাপতি এড. আবুল কালাম আজাদ বলেন, আবদুল মোতালেব সাতক্ষীরার মানুষের কাছে একটি অতিপ্রিয় নাম। তার কর্মের ব্যাপ্তি ছিল বহদুর পর্যন্ত। তিনি মানুষের জন্য কাজ করেছেন হৃদয় দিয়ে। তার ভালবাসায় আমরা সবাই সিক্ত। তিনি রেড ক্রিসেন্ট, বাংলাদেশ স্কাউট আন্দোলনের মধ্য দিয়ে দেশ জুড়ে পরিচিতি লাভ করেছিলেন। প্রথিতযশা সাংবাদিক ও সাতক্ষীরার প্রথম দৈনিক কাফেলার সম্পাদক, বাংলাদেশ অবজারভার ও বাংলাদেশ টেলিভিশনের জেলা প্রতিনিধি হিসাবেও তিনি নিজে ছিলেন সুপ্রতিষ্ঠিত এক পুরুষ। তার দৃষ্টান্ত তিনি নিজেই বলে উল্লেখ করেন তিনি।
পূর্ববর্তী পোস্ট