ড. মুহম্মদ ইউনুসের বিরুদ্ধে মামলায় হিলারি ক্লিনটন কোন হস্তক্ষেপ করেছেন কি না তা তদন্ত করতে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টকে চিঠি দিয়েছে মার্কিন সিনেট।
বৃহস্পতিবার মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসনকে এক চিঠিতে মার্কিন সিনেট বিষয়টি জানতে চেয়েছে।
এতে বলা হয়, ক্লিনটন গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভের একজন ডোনার ও হিলারির বন্ধু ড. মুহম্মদ ইউনুসকে নিয়ে বাংলাদেশে বেশ কিছু দুর্নীতির মামলা চলছিল। সেই মামলা পরিচালনায় মার্কিন সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন হস্তক্ষেপ করেছেন- এমন অভিযোগ মার্কিন সিনেটের কাছে রয়েছে।
এই অভিযোগের বিষয়টি খতিয়ে দেখতে স্টেট ডিপার্টমেন্টকে চিঠি দিয়েছে সিনেট।
চিঠিতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার পুত্র সজীব ওয়াজেদের সঙ্গে এ বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী থাকাকালীন হিলারির কোন কথা হয়েছে কি না সে বিষয়েও খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে।
ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র মিশনের সাবেক উপ-প্রধান জন ডানিলোভিচকে জিজ্ঞাসাবাদও করতে চেয়েছে সিনেট কমিটি।
সিনেট কমিটির চেয়ারম্যান চাক গ্রাসলির এই চিঠিতে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির বাইরে গিয়ে শুধু ব্যক্তিগত ও ক্লিনটন ফাউন্ডেশনের সাথে আর্থিক সম্পর্কের কারণে একটি সার্বভৌম সরকারের স্বাধীন তদন্তে হস্তক্ষেপে পররাষ্ট্রমন্ত্রী (হিলারি) যদি তার ক্ষমতা ব্যবহার করে থাকেন, তাহলে সেটা অগ্রহণযোগ্য।
চিঠিতে গ্রাসলি বলেন, বিল ক্লিনটন আরকানসাসের গভর্নর থাকাকালেই হিলারির সঙ্গে ইউনূসের ব্যক্তিগত সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তারপর থেকে কয়েক দশক ধরে ক্লিনটন ফাউন্ডেশনের প্রচারক ছিলেন ইউনূস। তাকে ফাউন্ডেশনের অনেক অনুষ্ঠানে প্রচারে অংশ নিতে দেখা গেছে। বিল ক্লিনটন ব্যক্তিগতভাবে নোবেল কমিটির কাছে ইউনূসের পক্ষে লবিং করেন এবং ২০০৬ সালে ইউনূস নোবেল শান্তি পুরস্কার পান।
বিভিন্ন প্রতিবেদনের উল্লেখ করে গ্রাসলি বলেন, ইউনূসের বিভিন্ন কোম্পানি ক্লিনটন গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভকে এক লাখ থেকে আড়াই লাখ ডলার পর্যন্ত অনুদান দিয়েছে। ইউনূসের কোম্পানিগুলো ক্লিনটন ফাউন্ডেশনকে ২৫ হাজার ডলার থেকে ৫০ হাজার ডলার পর্যন্ত অনুদান দিয়েছে।
হিলারি মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিযুক্ত হওয়ার পর হিলারি ও ইউনূসের মধ্যে সম্পর্ক গভীরতর হয়। হিলারি ক্লিনটনের পররাষ্ট্র দফতর জনগণের ট্যাক্সের এক কোটি ৩০ লাখ ডলারের বেশি তহবিল ইউনূসের ব্যবসায় দিয়েছে।
গ্রাসলি তার চিঠিতে আর উল্লেখ করেন যে, কিছু আইনি লঙ্ঘণ এবং বয়সের সীমাবদ্ধতার কারণে বাংলাদেশ সরকার ইউনূসকে গ্রামীণ ব্যাংক বোর্ড অব ডাইরেক্টরের পদ থেকে অপসারণ করে। ওই সময়ে ইউনূসের সহযোগী- ক্লিনটন ফাউন্ডেশন, হিলারি ক্লিনটন, শেরিল মিলস এবং পররাষ্ট্র দফতরের অন্য স্টাফদের মধ্যে যে ই-মেইল চালাচালি হয়েছে তাতে স্পষ্ট যে, ইউনূসের তদন্তে মধ্যস্থতা করার মিলিত চেষ্টা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে চাপে রাখতে এবং ইউনূসের বিরুদ্ধে তদন্ত আটকাতে হিলারির কর্মকর্তারা সজীব ওয়াজেদ জয়কেও হুমকি দিয়েছিল বলে অভিযোগ রয়েছে। শেখ হাসিনার পুত্র ও তার তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী জয় অভিযোগ করেন, ইউনূসকে গ্রামীণ ব্যাংক থেকে সরানোর পর ওই সময় পররাষ্ট্র দপ্তরের কর্মকর্তারা তার বিরুদ্ধে কর ফাঁকির অভিযোগ এনে তদন্ত শুরুর হুমকি দিয়েছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলছেন, গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ থেকে ইউনূসকে সরানোর পর নিয়মিত হুমকি দিতো করত যুক্তরাষ্ট্র।
বয়সসীমা অতিক্রান্ত হওয়ার কারণ দেখিয়ে ২০১১ সালে ইউনূসকে যখন গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ থেকে সরানো হয়। সেসময় যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন হিলারি ক্লিনটন। গত ১১ মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিশ্চিত করেন যে, ২০১১ সালের মার্চে হিলারি ক্লিনটন তার অফিসে ফোন করে ইউনূসকে গ্রামীণ ব্যাংকের চেয়ারম্যান পদে পুনর্বহাল করার দাবি জানান।
বাংলাদেশি ওই তদন্তের বিষয়ে রাজস্ব বিভাগের নিরীক্ষার কথা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে পররাষ্ট্র দপ্তরের কোনো কর্মকর্তা বলেছিলেন কি না এবং বিষয়টি পররাষ্ট্র দপ্তরের মহাপরিদর্শক বা বিচার বিভাগের পর্যালোচনার জন্য পাঠানো হয়েছিল কি না, তা পররাষ্ট্র দপ্তরের কাছে জানতে চেয়েছেন সিনেটর গ্রাসলি; চিঠিতে সংযুক্ত পররাষ্ট্র দপ্তরের সব ই-মেইলের অবিকৃত কপিও চেয়েছেন।
সেইসঙ্গে ইউনূসের ঘটনায় হস্তক্ষেপ করতে ব্যর্থ হলে সজীব ওয়াজেদকে নিয়ে রাজস্ব বিভাগের তদন্তের কথা বলার অভিযোগে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য জন ডানিলোভিচকে কমিটির মুখোমুখি করার বিষয়ে পররাষ্ট্র দপ্তরকে প্রস্তুত থাকতে বলেছেন তিনি।
চিঠিতে বলা হয়েছে, জয়ের বক্তব্য অনুযায়ী ২০১০-১২ সময়ে পররাষ্ট্র দপ্তরের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে তার বেশ কয়েকবার কথা হয়েছিল। প্রায় প্রতিটি বৈঠকেই ইউনূস তদন্তের বিষয়টি সামনে এনে তা বন্ধ করতে তার উপর চাপ দেওয়া হত বলে তিনি বলছেন।
ওই কর্মকর্তাদের মধ্যে ঢাকায় সাবেক রাষ্ট্রদূত জেমস মরিয়ার্টি ও ড্যান মজীনা, সাবেক মিশন উপ-প্রধান জন ডানিলোভিচ ও ইউএসএআইডির প্রশাসক রাজিব শাহের নাম রয়েছে।
ডানিলোভিচের সঙ্গে দুই বারের সাক্ষাতের কথা স্মরণ করেছেন জয়, যেখানে মায়ের প্রভাব খাটিয়ে ইউনূসের বিষয়ে তদন্ত বন্ধ করতে ব্যর্থ হলে জয়ের বিরুদ্ধে রাজস্ব বিভাগের নিরীক্ষা হতে পারে বলে উল্লেখ করেছিলেন ডানিলোভিচ।
জয়কে উদ্ধৃত করে চিঠিতে বলা হয়, ইউনূসের বিষয়ে বারবার উদ্বেগ জানিয়ে বার্তা পাঠানোর সময় পররাষ্ট্র দপ্তরের কর্মকর্তারা প্রায়েই দুঃখ প্রকাশ করতেন। তারা যে শুধু শীর্ষ পর্যায়ের কর্তাদের বার্তাবাহক হিসেবে কাজ করতেন তা স্পষ্ট করতেন।