দেশের খবর: সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী শুক্রবার বাংলাদেশের ২৩তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে শপথ নিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বিকেল ৪টায় বঙ্গভবনের দরবার হলে এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানে তাঁকে শপথবাক্য পাঠ করান।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব মো. জয়নাল আবেদীন।
নবনিযুক্ত প্রধান বিচারপতির শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, রাষ্ট্রপতির স্ত্রী বেগম রাশিদা খানম, মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, সাবেক প্রধান বিচারপতি, আপিল ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতিরা, তিন বাহিনীর প্রধানরা, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব, অ্যাটর্নি জেনারেল, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীরাসহ আমন্ত্রিত অতিথিরা উপস্থিত ছিলেন।
বঙ্গভবনের দরবার হলে শপথ অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। পরে নিয়ম অনুযায়ী শপথনামায় সই করেন নতুন প্রধান বিচারপতি।
অনুষ্ঠানের শুরুতে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করা হয়। এরপর পবিত্র ধর্মগ্রন্থ থেকে পাঠ করা হয়।
এর আগে আপিল বিভাগের বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীকে দেশের ২৩তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। এ বিষয়ে গতকাল ৩০ ডিসেম্বর প্রজ্ঞাপন জারি করে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ৯৫(১) অনুচ্ছেদে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট, আপিল বিভাগের বিচারক হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীকে বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দিয়েছেন। তাঁর নিয়োগ শপথ গ্রহণের তারিখ থেকে কার্যকর হবে।
এর আগে দেশের ২২তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে ২০১৮ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি শপথ নেন বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন। ৪৭ মাস প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব পালন শেষে আজ শুক্রবার অবসরে যাচ্ছেন তিনি। সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের স্থলাভিষিক্ত হচ্ছেন বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। তিনি হচ্ছেন দেশের ২৩তম প্রধান বিচারপতি।
বর্তমান প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের বয়স ৬৭ বছর পূর্ণ হচ্ছে আজ। সে হিসেবে বছরের শেষ দিনে অবসরে যাচ্ছেন ২২তম প্রধান বিচারপতি। শুক্রবার হওয়ায় গতকাল বৃহস্পতিবার ছিল তাঁর শেষ কর্মদিবস।
সংবিধানের ৯৫ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতি প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দিয়ে থাকেন। সংবিধানের ৯৫ (১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘প্রধান বিচারপতি রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিযুক্ত হইবেন এবং প্রধান বিচারপতির সহিত পরামর্শ করিয়া রাষ্ট্রপতি অন্যান্য বিচারককে নিয়োগ করিবেন।’
তবে, দীর্ঘদিনের রীতি অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতি আপিল বিভাগের যে বিচারপতিকে প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেবেন, তাঁর বিষয়ে সম্মতি দিয়ে আইন মন্ত্রণালয়কে জানান। সে অনুযায়ী আইন মন্ত্রণালয় গেজেট প্রকাশ করে।
বর্তমানে আপিল বিভাগে পাঁচ বিচারপতির মধ্যে বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন অবসরে গেলে আপিল বিভাগে থাকছেন বিচারপতি ইমান আলী, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, বিচারপতি মো. নুরুজ্জামান ও বিচারপতি ওবায়দুল হাসান।
এর মধ্যে বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীকে প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দিলেন রাষ্ট্রপতি।
উচ্চ আদালতে বিচারপতি হিসেবে নিয়োগের আগে একজন সফল আইনজীবী হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। আইনজীবী হিসেবে তিনি খুলনা সিটি করপোরেশন, কুষ্টিয়া পৌরসভা, জালালাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন সংস্থা এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রধান আইন উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেন। এ ছাড়া তিনি বাংলাদেশের অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ৩০ এপ্রিল ২০১৫ সাল থেকে বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন।
আবদুর গফুর মোল্লা ও নূরজাহান বেগম দম্পতির সন্তান হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর জন্ম ১৯৫৬ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর কুষ্টিয়া জেলার খোকসা উপজেলার রমানাথপুর গ্রামে। তিনি ১৯৭২ সালে খোকসা জানিপুর পাইলট হাইস্কুল থেকে মাধ্যমিক পাস করেন। পরে ১৯৭৪ সালে সরকারি পিসি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। এরপর বিএ পাস করেন সাতক্ষীরা সরকারি কলেজ থেকে। তিনি এমএ পাস করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ থেকে। এলএলবি পাস করেন ধানমন্ডি ল’ কলেজ থেকে।
হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী আইনজীবী হিসেবে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের তালিকাভুক্ত হন ১৯৮১ সালে। জেলা আদালতে প্র্যাকটিস শুরু করেন ১৯৮১ সালের ২১ আগস্ট। ১৯৮৩ সালের ৪ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টের সনদ লাভ করেন। আপিল বিভাগের আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন ১৯৯৯ সালের ২৭ মে।
হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ২০০১ সালে হাইকোর্টে অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান। ২০০৯ সালের ২৫ মার্চ হাইকোর্ট বিভাগের স্থায়ী বিচারপতি হিসেবে এবং ২০১৩ সালের ৩১ মার্চ আপিল বিভাগের বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান। বিচারপতি হিসেবে শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান ও ভারতে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ নেন তিনি। এ ছাড়াও তিনি সৌদি আরব সফর করেছেন।
হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর বড় ভাই বিচারপতি আবু বকর সিদ্দিকী সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি থেকে অবসরে গেছেন। আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি আবু বকর সিদ্দিকী ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ইতিহাসে প্রথম দুই ভাই যাঁরা সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগে আসীনের নজির স্থাপন করেছেন।