নেতাকর্মীদের কাছে ভালো ইমেজ রয়েছে, রাজনীতিক হিসেবে এলাকায় সুপরিচিত, সংগঠক হিসেবে দক্ষ, সততা, নিষ্ঠা ও শিক্ষিত, এমন যোগ্যতা রয়েছে যাদের, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাবেন তারা। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব যোগ্যতা সম্পন্ন নেতাদের সারাদেশ থেকে বাছাই করে তালিকা করা শুরু করেছেন। বিভিন্ন মাধ্যমে সংগ্রহ করা এই তালিকা ইতোমধ্যে যাচাই-বাছাই করছেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ একাধিক সূত্র এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।
ওই সূত্রগুলো জানিয়েছে, শেখ হাসিনার দৃষ্টিতে এসব গুণাবলী যাদের রয়েছে, তারাই আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন পাওয়ার যোগ্য। দলীয় সভাপতি মনে করেন, আগামী নির্বাচন হবে অংশগ্রহণমূলক। এখানে দলীয় প্রতীকের পাশাপাশি প্রার্থীর ব্যক্তিগত ইমেজ-কারিশমাও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। তাই উল্লিখিত যোগ্যতা ও গুণাবলী যাদের রয়েছে, তাদের মনোনয়ন অনেকটা নিশ্চিত বলে নীতি-নির্ধারণী সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানিয়েছে, আগামী নির্বাচন নিয়ে নেত্রীর নিজস্ব চিন্তাভাবনা ও হিসাবনিকাশ শুরু হয়ে গেছে। কাকে মনোনয়ন দেওয়া হবে, কে মনোনয়ন পাওয়ার যোগ্য, এসব বিষয়গুলো গুরুত্ব দিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। নিয়মিত এগুলো নিয়ে স্ট্যাডি করছেন প্রধানমন্ত্রী এমন তথ্যও জানিয়েছে তার ঘনিষ্ঠ সূত্র। অন্য দুটি সূত্র জানায়, সভাপতি শেখ হাসিনা এবার দুইশ আসনে এমন প্রার্থী দিতে চান, যারা মনোনয়ন পাওয়া মানেই তাদের বিজয় নিশ্চিত। এ ধরনের প্রার্থী খুঁজে বের করতে কাজ করছেন তিনি। আর তাদের মধ্যে অবশ্যই উল্লিখিত গুণাবলী থাকতে হবে বলে ঘনিষ্ঠদের অবহিত করেছেন প্রধানমন্ত্রী। সেক্ষেত্রে ২০১৪ সালে মনোনয়ন পাওয়া অনেক এমপির কপাল পুড়তে পারে। সর্বশেষ সংসদীয় দলের সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলের সংসদ সদস্যদের ইঙ্গিত করে বলেছেন, ‘এবার কাউকে পাস করানোর দায়িত্ব আমি নিতে পারবো না। এবার যার যার জয় সে-ই ছিনিয়ে আনতে হবে।’ এজন্যে এমপিদের এলাকায় যেতে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। যার অবস্থা বেগতিক তার অবস্থা ভালো করার জন্যেও নির্দেশ দেন।
এর সঙ্গে নির্বাচন করার অভিজ্ঞতা থাকা নেতাদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। জানা গেছে, সর্বশেষ দলের কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা জানিয়েছেন, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে অনেকে এমপি হয়েছেন, যাদের নির্বাচন করার অভিজ্ঞতা নেই। নির্বাচন না করেই এমপি হয়েছেন। এবার মনোনয়নের ক্ষেত্রে নির্বাচন করার অভিজ্ঞতা যাদের রয়েছে, তাদের প্রাধান্য দেওয়া হবে। তবে নির্বাচন না করেও এমপি হওয়ার পর ভালো করেছেন, এমন এমপিদের বাদ না দেওয়ারও ইঙ্গিত পাওয়া গেছে প্রধানমন্ত্রী কাছ থেকে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘এবার দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নেতাকর্মীদের কাছে ভালো ইমেজ রয়েছে, রাজনীতিক হিসেবে স্থানীয়ভাবে এলাকায় সুপরিচিত, সংগঠক হিসেবে দক্ষ, সর্বোপরি শিক্ষা-সততা ও নিষ্ঠাবান এমন গুণসমৃদ্ধ প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন। সারাদেশ থেকে তিনি প্রার্থী তুলেও এনেছেন। বিভিন্ন মাধ্যম থেকে তুলে আনা এ তালিকা নিয়ে কাজও করছেন তিনি।’ আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘এবারের নির্বাচনে ইমেজসম্পন্ন প্রার্থীর মনোনয়ন নিশ্চিত।’
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবউল আলম হানিফ বলেন, ‘মনোনয়ন কাকে দেবেন বিষয়টি একেবারেই সভাপতি শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত। তবে গ্রহণযোগ্য, স্বচ্ছ, সৎ, আদর্শের রাজনীতির ক্ষেত্রে অবিচল নেতারাই মনোনয়ন পাবেন। শেখ হাসিনা এ ব্যাপারে ডিটারমাইন্ড।’
আরেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান এ বিষয়ে বলেন, ‘আগামী নির্বাচনে প্রার্থী দিয়েই বিজয় নিশ্চিত করতে চায় আওয়ামী লীগ। এর জন্যে এবার মনোনয়ন দেওয়া হবে অনেক যাছাই-বাছাই করে।’ তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী কাকে মনোনয়ন দেবেন, কাকে দেবেন না, তা নিয়ে তিনি কাজ করছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘নেতাকর্মীদের কাছে ভালো ইমেজ রয়েছে, রাজনীতিক হিসেবে এলাকায় পরিচিত, সংগঠক হিসাবে দক্ষ ও নিষ্ঠাবান নেতাদের দিকে ঝুঁকবেন শেখ হাসিনা।’
পূর্ববর্তী পোস্ট