ডেস্ক রিপোর্ট : দেশে সাম্প্রদায়িকতার বিস্তার ঘটছে। সমাজ প্রতিবাদহীন হয়ে পড়ছে। এই অবস্থার পরিবর্তনে তরুণ সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে।
আজ শুক্রবার বিকেলে রাজধানীতে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর মিলনায়তনে আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। ‘কোন পথে বাংলাদেশ’ শিরোনামে এ আলোচনার আয়োজন করা হয়।
সভায় শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও লেখক মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, ‘আমাদের হায়েস্ট প্রায়োরিটি (সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার) হচ্ছে আমাদের দেশে একধরনের অ্যাটমসফেয়ার (পরিবেশ) তৈরি করা। যেখানে আমরা সব ধর্মের সকল ধরনের মানুষ পাশাপাশি বেঁচে থাকব। ইকোনমিক্যালি (অর্থনৈতিকভাবে) তারা ভালো হলো না খারাপ হলো, সেটা পরের ব্যাপার। সম্মান নিয়ে এই দেশে আমার ভাই হিসেবে, বোন হিসেবে থাকতে পারবে।’
জাফর ইকবাল বলেন, ‘তাহলে সুলতানা কামাল আর হেফাজতের একজন নেতাকে পাশাপাশি বসানো হলো কেন? এটা আমি জানতে চাই। আপনাদের টেলিভিশনের প্রচার বাড়ানোর জন্য এই কাজগুলি খুব রগরগে জিনিস করলে মানুষ টেলিভিশন দেখে। এটাই যদি উদ্দেশ্য হয়ে থাকে, তাহলে তো হলো না। আপনারা আপনাদের দায়িত্বটা পালন করবেন, আপনাদের আমি সেই অনুরোধ করছি।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. অজয় রায় বলেন, ‘এই তরুণ সমাজের প্রতি আবার আহ্বান জানাব, আপনারা রাজপথে নেমে আসুন। বিপ্লব ছাড়া, আন্দোলন ছাড়া কোনো অর্জন গঠিত হয় না। যে অন্যায়গুলো হচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া। প্রয়োজন হলে আরেকটি গণজাগরণ মঞ্চ গড়ে তুলুন।’
‘সংলাপ সূত্র’ আয়োজিত আলোচনা সভায় হেফাজত ইসলামের দাবির মুখে সুপ্রিম কোর্টের সামনে থেকে ভাস্কর্য সরিয়ে নেওয়া, পাঠ্যপুস্তকে পরিবর্তন, সাবেক ত্ত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা সুলতানা কামালকে হুমকি এবং ধর্মীয় সংখ্যালঘু ও ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর ওপর সাম্প্রতিক হামলা ও নির্যাতনের কথা তুলে ধরেন বক্তারা। দেশে সাম্প্রদায়িক শক্তি ক্রমেই তাদের অবস্থান শক্ত করতে সক্ষম হচ্ছে জানিয়ে এ জন্য সরকারেরও সমালোচনা করেন তাঁরা।
সভায় মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি ড. সারোয়ার আলী বলেন, ‘এটি একেবারেই নির্বাচনী কৌশল। এই কথা ভাবতে খুব কষ্ট হয়, যে দলের নেতৃত্বে দেশটি স্বাধীন হয়েছিল, তারা এমন কৌশলটি গ্রহণ করেছে। সাম্প্রদায়িকতার বিস্তার ঘটেছে এবং উগ্রবাদী ব্যাখ্যা যাঁরা করছেন, তাঁদের দ্বারা তরুণসমাজ আচ্ছন্ন হচ্ছে।’
ভাষাসৈনিক আহমেদ রফিক বলেন, ‘আজকের সমাজকে আমরা যারা লক্ষ করছি, যেটা প্রতিবাদহীন সমাজ। এত ঘটনা ঘটছে, এগুলো কিন্তু প্রমাণ করে যে বাংলাদেশ একটি অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র নয়।’
বক্তারা বলেন, এসব কারণে সংখ্যালঘুদের পাশাপাশি মুক্তবুদ্ধির চর্চাকারীদের অনেকেই দেশ ছাড়ছেন, অনেকে ছাড়তে চাচ্ছেন। সাম্প্রদায়িক শক্তির বিস্তারের কারণ অনুসন্ধানের পাশাপাশি এর বিরুদ্ধে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলন গড়ে তৃণমূল পর্যায়ে ছড়িয়ে দেওয়ার পরামর্শ আসে। পাশাপাশি অসচেতন রাজনীতিবিদদের সচেতনতা বাড়ানোর তাগিদ দেন অনেক বক্তা।