নিজস্ব প্রতিনিধি:
পিতার নামে প্রতিষ্ঠিত নতুন কলেজের ৪২ জন শিক্ষার্থীর জন্য টয়লেট নির্মানে এডিপি প্রকল্প হতে ২৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। শ্যামনগর উপজেলার চেয়ারম্যান আতাউল দোলনের পিতার নামীয় কলেজ হওয়ায় এ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
২০২২-২০২৩ অর্থ বছরে বার্ষিক উন্নয়ন তহবিল এর আওতায় টেন্ডার ও পি আইসি’র মাধ্যমে বাস্তবায়নযোগ্য স্কীমের তালিকায় এই বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে। উপজেলা পরিষদের মাসিক সমন্বয় সভার তালিকায় শ্যামনগর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, উপজেলা আওয়ামীলীগ এর সাধারন সম্পাদক এস এম আতাউল হক দোলন তার পিতার নামীয় সদ্য প্রতিষ্ঠিত (নন এমপিও) এ কে ফজলুল হক এমসিএ কলেজের টয়লেট নির্মাণে ২৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেন। পরে তা মাসিক উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভায় পাশ করার পরে টেন্ডারও করিয়ে নিয়েছেন। তবে উন্নয়ন সমন্নয় কমিটির সভায় সদস্যরা বরাদ্দের বিষয়টি নিয়ে তাৎক্ষনিক প্রশ্ন তোলা হলেও উপজেলা চেয়ারম্যান আতাউল হক দোলন সকলকে জানান হয়ত টাইপ করতে ভুল হয়েছে পরে বিষয়টি দেখা যাবে বলে সভাটি শেষ করেন। পরবর্তীতে বরাদ্দের বিষয়টি একেবারে গোপন রেখে এডিপির টেন্ডার আহ্বান করা হয় ।
টেন্ডার অনুযায়ী শ্যামনগরে একটি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ফাহাদ এন্টারপ্রাইজ নামীয় প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী নুরুজ্জামান টুটুল বরাদ্দটি অনলাইনে লটারির মাধ্যমে টয়লেট নির্মান বাস্তবায়ন করার অনুমতি পায়। প্রকল্পটি টেন্ডার হওয়ার সাথে সাথে শ্যামনগরে বিভিন্ন মহলে বিষয়টি নিয়ে নানা গুন্জন ও আলোচনা এবং সমালোচনা শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে ঠিকাদার টয়লেট নির্মাণ কাজ শুরু করে দিয়েছেন।
শ্যামনগর উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব বাবু, রমজাননগর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণত সম্পাদক পতিত পাবন মন্ডল জানান, ১টি টয়লেট নির্মানে এত বড় বাজেট জীবনে কখনও তারা শোনেননি। টয়লেটের জন্য বরাদ্দকৃত ২৫ লক্ষ টাকা তো শ্যামনগরে আইলা দূর্গত এলাকার ৫০ টা গরীব অসহায় পরিবারের দুচালা ঘর বেঁধে বেঁচে থাকার জন্য যথেষ্ট। আর এতোগুলি টাকার বরাদ্দে মাত্র একটি টয়লেট? টয়লেট নির্মাণের নামে পরিষদের টাকা তছরুপের উদ্দেশ্যেই এ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে বলে তারা জানান।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ব্যক্তি জানান, টয়লেট এয়ারকন্ডিশন করা হলেও এত বড় বাজেট ব্যয় হওয়ার কথা না। অনেকেই মন্তব্য করে বলছেন উপজেলা চেয়ায়রম্যান নিজের বাবার প্রতিষ্ঠান এজন্য ক্ষমতাবলে নিজেই ইচ্ছামত বাজেট তৈরি করছেন। উপজেলা চেয়ারম্যান প্রকৌশলীর সাথে যোগসাজশে স্টিমেট তৈরি করে নিজের পিতার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এই বাজেট বরাদ্দ দিয়েছেন। কোন ব্যক্তি ও সাংবাদিক উপস্থিত ছিলনা, অনলাইন লটারীর স্বচ্ছতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন ঠিকাদাররা। একজন ঠিকাদার জানিয়েছেন, উপজেলা চেয়ারম্যান যে বরাদ্দ দিয়েছেন সেটি টেন্ডারের লটারিতে।
ঠিকাদাররা অনলাইনে লটারী নিয়েও শঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, উপজেলা চেয়ারম্যানের কক্ষে গোপনে যে অনলাইন লটারী হয়েছে সেখানে সাংবাদিকসহ বিশেষ কোন ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন না। টেন্ডারে চেয়ারম্যানের নিজস্ব কিছু ঠিকাদার সেট করে কাজ পেয়েছেন।
এ ব্যাপারে শ্যামনগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এস এম আতাউল হক দোলন বলেন, কলেজে প্রথম বছরে ৪৫ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে। সামনের বছরের আরো বাড়বে। এছাড়া সেখানে পুরুষদের জন্য তিনটা এবং নারীদের জন্য তিনটা মোট ছয়টি বাথরুম হচ্ছে। ভবিষ্যতে শিক্ষার্থী আরো বাড়বে তখন বাথরুম নিয়ে সমস্যা হতে পারে যে কারনে বড় করেন বাথরুম করা হচ্ছে। প্রয়োজনে সরেজমিনে বিষয়টি দেখে গেলে বিষয়টি বুঝতে পারবেন।
শ্যামনগর সদর ইউপি চেয়ারম্যান এড. জহুরুল হায়দার বাবু বলেন, উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভায় আমি উপস্থিত ছিলাম না। সভায় যখন বিষয়টি তুলে ধরা হয় উপস্থিত অনেকেই প্রতিবাদ করলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান। ২৫ লক্ষ টাকায় দুই তলা ভবন নির্মাণ করা যায়। অথচ তিনি বাথরুম নির্মাণ করবেন। আমরা প্রতিবাদ করলেও তিনি না শুনে নির্মান কাজ শুরু করেছেন।