নিজস্ব প্রতিনিধি :
মহান মুক্তিযুদ্ধের গৌরব উজ্জল ইতিহাস নতুন প্রজন্মকে জানানোর জন্য ৮০ হাজার জীবিত বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বীরাঙ্গনাদের নিয়ে ভিডিও সাক্ষাতকার গ্রহন কার্যক্রম শুরু করেছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। মন্ত্রনালয়ের
সার্বিক ব্যবস্থাপনায় “বীরের কন্ঠে বীরগাঁথা” এই প্রকল্পের আওতায় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সাক্ষাৎকার নিয়ে ১৬টি ডকুমেন্টরি ও আর্কাইভ কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে সাতক্ষীরা সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সে সদর উপজেলার বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে এই কার্যক্রম শুরু হয়। সাতক্ষীরার সদর উপজেলার মোট ১৯০ জন জীবিত বীর
মুক্তিযুদ্ধাদের ভিডিও সাক্ষৎকার গ্রহন করা হবে। পর্যায় ক্রমে জেলার মোট ৭টি উপজেলার ১১৬৮ জন জীবিত বীর মুক্তিযুদ্ধার সাক্ষাৎকার গ্রহন করবেন প্রকল্পের কর্মকর্তারা। এক বছর মেয়াদের এই প্রকল্পের আওতায় ১০দিন ব্যাপী চলবে সাতক্ষীরা জেলার এই কার্যক্রম। এখানে বীর মুক্তিযোদ্ধারা ১৯৭১ সালে
মহান মুক্তিযুদ্ধে কে কোন সেক্টরে যুদ্ধ করেছিলেন, কার নির্দেশে এবং
প্রথম কোথায় সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহন করেছিলেন, মুক্তিযুদ্ধের স্মরনীয় ঘটনা, পাকবাহিনীর সাথে যুদ্ধ করতে গিয়ে কি ধরনের প্রতিবন্ধকতার স্বীকার হয়েছিলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের
ঐতিহাসিক ভাষন কিভাবে প্রভাবিত ও অনুপ্রানিত করেছিল,৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে অবিস্মরণীয় অবদানের কথাসহ মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন ইতিহাসের উপর সাক্ষাৎকার ভিডিও ক্যামেরায় ধারণ করা হয়। সকাল থেকে মুক্তিযোদ্ধা
কমপ্লেক্সে উপস্থিত বীর মুক্তিযোদ্ধারা একে একে উপস্থিত হয়ে পর্যায় ক্রমে
মুক্তিযুদ্ধের সঠিক গৌরব গাঁথা ইতিহাস তুলে ধরে বক্তব্য ও স্মৃতিচারণ
করেন। ৭টি ভিডিও ক্যামেরায় প্রকল্পের কর্মকর্তারা ভিডিও সাক্ষাৎকার ধারণ
করেন। এসময় মুক্তিযুদ্ধারের উপস্থিতিতে সাতক্ষীরা সিটি কলেজ সংলগ্ন নব
নির্মিত সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবনটি বীর মুক্তিযোদ্ধাদের এক
মিলন মেলায় পরিনত হয়।
এ ব্যাপারে উপস্থিত সাবেক জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা
মশিউর রহমান মশু ও বীর মুক্তিযোদ্ধা মোস্তফা নূরুল আলম জানান, মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস নতুন প্রজন্মকে জানানোর জন্য ও মুক্তিযুদ্ধে গৌরব উজ্জল সঠিক তথ্য সম্বলিত ইতিহাস সংরক্ষণ করে তা আর্কাইভ করার জন্য
বীর মুক্তিযুদ্ধাদের নিয়ে যে ভিডিও সাক্ষাৎকার গ্রহন কার্যক্রম শুরু করেছে তার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ও তার
সরকারের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়কে কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
তাঁরা আরও বলেন আমাদের মৃত্যুর পর নতুন প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস
জানার জন্য এই ভিডিও সাক্ষৎকার ও ডকুমেন্টরি খুবি জরুরী। ১৯৭১ সালের মহান
মুক্তিযুদ্ধের ৫৩ বছর পরে হলেও সরকারের এই যুগান্তকারী উদ্যোগকে স্বাগত
জানাচ্ছি।
বীরের কন্ঠে বীরগাঁথা এই প্রকল্পের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ম্যানেজমেন্ট এন্ড ট্রেনিং ইন্টারন্যাশনাল লিঃ কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডাক্তার মোঃ মনিরুল ইসলাম খান বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস নতুন প্রজন্মের কাছে
তুলে ধরা ও জানানোর জন্য জীবিত মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাঁস,পটভূমি,সম্মুখ
যুদ্ধসহ ইতিহাস ঐতিহ্য নিয়ে মুক্তিযোদ্ধারে বক্তব্য ও সাক্ষাৎকার ভিডিও
ক্যামেরায় ধারন করে তা সংরক্ষন ,আর্কাইভ ও ডকুমেন্টরি করার জন্য
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় ১ বছর মেয়দি “বীরের কন্ঠে বীরগাঁথা” প্রকল্পের আওতায় এই কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। গত এক মাস আগে থেকে এই প্রকল্পের কার্যক্রম শুরু হলেও আনুষ্ঠানিক ভাবে আজ (২৭ জুলাই) থেকে ৮ ও ৯
সেক্টরের অধীনে জীবিত বীর মুক্তিযুদ্ধাদের নিয়ে সাতক্ষীরা জেলা থেকে এই
কার্যক্রম শুরু হলো।
তিনি আরও জানান ২৭ জুলাই থেকে ২৯ জুলাই সদর উপজেলার ১৯০ জন বীর মুক্তিযুদ্ধার সাক্ষাৎকার গ্রহন করা হবে। এছাড়া ৩০ জুলাই কলারোয়া উপজেলার ১০৬ জন বীর মুক্তিযোদ্ধার, ৩১ জুলাই তালা উপজেলার ১৬১ জন, ১ও ২ আগষ্ট আশাশুনির ২২৬ জন, ৩ আগষ্ট দেবহাটা উপজেলার ১৪৫ জন, ৫ আগষ্ট শ্যামনগর উপজেলার ১৩৪ জন এবং ৬ ও ৭ আগষ্ট কালিগঞ্জ উপজেলার ২০৪ জন বীর মুক্তিযোদ্ধার সাক্ষাৎকার গ্রহন করা হবে। ১০ দিন ব্যাপী চলবে সাতক্ষীরা জেলার এই কার্যক্রম। জেলার মোট ১১৬৮ জন জীবিত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের
সাক্ষাৎকার গ্রহন করা হবে। #