নিজস্ব প্রতিনিধি :
বাংলাদেশে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম লক্ষ্য ছিল এদেশের প্রতিটি নাগরিকের জন্য সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠা। মানুষে-মানুষে ভেদাভেদ ভুলে একটি শান্তি ও সম্প্রীতির বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন। সেলক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে চলেছি আমরা । বিশ্বের বুকে একটি উন্নত, সমৃদ্ধ ও মর্যাদাবান রাষ্ট্র হিসেবে আমরা আমাদের প্রিয় স্বদেশকে গড়ে তুলতে চাই। গড়তে চাই একটি মানবিক ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ। যেখানে প্রতিটি মানুষ থাকবে নিরাপদ, প্রত্যেকের ধর্ম, সংস্কৃতি বা বিশ্বাস অক্ষুন্ন রেখে মর্যাদার সাথে শাস্তিপূর্ণ জীবন যাপন নিশ্চিত হবে। সম্মিলিত উদ্যোগে সম্প্রীতির বাংলাদেশ গড়তে আমাদের অভিযাত্রা অব্যাহত থাকবে।সম্প্রীতিতে জাতি, ধর্ম, বর্ণ, গোত্র, ভাষা, লিঙ্গ, শ্রেণি, বিশ্বাস, আচরণ, সংস্কৃতি নির্বিশেষে মানুষের সাথে মানুষের সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক। এর একটি বড় অংশ সামাজিক সম্প্রীতি।
বৃহস্পতিবার (২৪ আগষ্ট) সকাল ১১টায় সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হল রুমে অনুষ্ঠিত সামাজিক সম্প্রীতি সংলাপে বক্তারা এসব কথা বলেন।
ইয়ুথ এন্ডিং হাঙ্গার, দি হাঙ্গার প্রজেক্ট বাংলাদেশের আয়োজনে ও ফ্রিডম অফ রিলিজিওন অর বিলিফ লিডারশিপ নেটওয়ার্কের সহযোগিতায় সাতক্ষীরা জেলা সচেতন নাগরিক কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা সাবেক অধ্যক্ষ সুভাষ সরকারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সামাজিক সম্প্রীতি সংলাপে প্রধান অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন, সাতক্ষীরা সদর-০২ আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর মোস্তাক আহমেদ রবি।
দি হাঙ্গার প্রজেক্ট বাংলাদেশ খুলনা অঞ্চলের সিনিয়র প্রোগ্রাম অফিসার রুবিনা আক্তারের সঞ্চালনায় সামাজিক সম্প্রীতি সংলাপে বিশেষ অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন, সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. শীতল কুমার, নারী নেত্রী জোৎস্না আরা, সামেক হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের প্রধান ডা. কাজী আরিফ আহমেদ, দি হাঙ্গার প্রজেক্ট বাংলাদেশের সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার শশাঙ্ক বরণ রায়, ইসলামি ফাউন্ডেশনের উপ-পরিচালক আবুল কালাম আজাদ, জাসদ নেতা সাবেক অধ্যক্ষ আশেক ই এলাহী, সাবেক অধ্যক্ষ এস এম আব্দুল ওয়াহেদুল, অধ্যক্ষ পবিত্র মোহন দাস, জেলা আওয়ামী লীগ নেতা শেখ হারুন উপর রশীদ, সাংস্কৃতিক সংগঠক হেনরী সরদার, সাংস্কৃতিক কর্মী মঈনুর রহমান মঈন, জেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক স্বপন শীল, কৃষক লীগ নেতা মন্জুর হোসেন, সনাতন ধর্মের শিবায়েত দীপঙ্কর ভট্টাচার্য প্রমুখ।
সামাজিক সম্প্রীতি সংলাপে বক্তারা আরও বলেন, সামাজিক সম্প্রীতি সমাজের মধ্যে ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর মধ্যে শান্তিপূর্ণ ও সম্মানজনক সহাবস্থান এবং মানুষের মধ্যকার বৈচিত্র্যময়তাকে স্বীকৃতি দেয়। নিরাপত্তা ও মর্যাদার সাথে ভিন্ন ভিন্ন পরিচয়ের মানুষের মিলে-মিশে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিশ্চিত করে। সমাজের বিকাশমান ধারাকে অব্যাহত রাখতে সম্প্রীতির কোনো বিকল্প নেই। যুথবদ্ধতার মধ্য দিয়েই সমাজের সৃষ্টি ও মানব সমাজের বিকাশ। আর মানুষ যুথবদ্ধ হয় সম্প্রীতির মাধ্যমে। মানুষ যুথবদ্ধ হয়ে সৃষ্টি করেছে নতুন দিগন্ত। সম্প্রীতির মধ্য দিয়েই গড়ে উঠেছে মানুষের আজকের এই সভ্যতা। একটি জাতির সামগ্রিক মঙ্গল এবং অগ্রগতির জন্য সম্প্রীতি অপরিহার্য, এটি বিভিন্ন পরিচয়ের মানুষের মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধা, বোঝাপড়া এবং সহানুভূতির সম্পর্ক সৃষ্টি করে।
তারা আরও বলেন, মানুষের সাথে মানুষের আন্তরিক ও কার্যকর সম্পর্কই পারে বর্তমান সময়ের সংকট থেকে মানব সভ্যতাকে নিরাপদ ও সুরক্ষিত রাখতে। এটি নিশ্চিত করা আমাদের ঐতিহাসিক ও নৈতিক দায়িত্ব। আগামী প্রজন্মের জন্য একটি বাসযোগ্য মানবিক বিশ্ব রেখে যেতে আমাদের সকলকে আজ ঐক্যবদ্ধ হয়ে সম্প্রীতির শপথ নিতে হবে। গড়ে তুলতে হবে সম্প্রীতি বাংলাদেশ তথা সম্প্রীতির বিশ্ব।
সামাজিক সম্প্রীতি সুরক্ষায় মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের আলোকে এ দেশের প্রতিটি নাগরিকের মর্যাদা ও নিরাপত্তার সাথে বসবাসের অধিকার মানবিক সৌহার্দ্যপূর্ণ সমাজ ও রাষ্ট্র গঠনে আমরা নিজ নিজ অবস্থান থেকে ভূমিকা রাখার অঙ্গীকার করেন। বাংলাদেশ বৈচিত্রপূর্ণ বহু জাতি-সংস্কৃতির দেশ। পরস্পরের প্রতি ঘৃণা-বিদ্বেষ দূর করে সামাজিক সম্প্রীতি সহিষ্ণুতার ভিত্তিতে বহুত্ববাদী সমাজ গড়ে তোলা লক্ষ্যে জাতি-ধর্ম-বর্ণ-পেশা-দল-মত-লিঙ্গ-ভাষা-বিশ্বাস নির্বিশেষে সকলের সম-অধিকার প্রতিষ্ঠায় আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ভিন্ন বিশ্বাস, চিন্তাধারা, সংস্কৃতি, পরিত্র স্থানসমূহের মর্যাদার প্রতি আমরা সবাই শ্রদ্ধাশীল।
সমাজে শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষায় উগ্রপন্থী মতবাদের বিস্তার, হিংসা, ঘৃণা-বিদ্বেষ এবং সহিংসতা সৃষ্টিকারী কার্যক্রম সামাজিক সম্প্রীতি ক্ষতিগ্রস্ত করার যেকোনও ধরনের উস্কানী প্রতিরোধে আমরা সচেতন ও সক্রিয় ভূমিকা রাখবো। উদার, সহিষ্ণু, নিরাপন, মুক্ত ও মানবিক সমাজ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে সামাজিক সম্প্রীতি সুরক্ষায় হোক আমাদের অঙ্গীকার।