নিজস্ব প্রতিনিধি :
সাতক্ষীরার শ্যামনগরে মহাজনের সুদের টাকা পরিশোধ করতে না পারায় এক মুন্ডা পরিবারের বসতবাড়ি দখল করে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে৷ গত বৃহস্পতিবার (১ ফেব্রুয়ারি) উপজেলার রমজাননগর ইউনিয়নের কালিঞ্চী গ্রামে এই ঘটনা ঘটে৷ এঘটনার পর থেকে পরিবারের চারজন সদস্যসহ নিখোঁজ রয়েছেন রনজিৎ মুন্ডা। তিনি ওই গ্রামের মৃত পূর্ন চরন মুন্ডার ছেলে। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর এলাকাজুড়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, করোনা কালীন সময়ে রনজিৎ মুন্ডা ২০২০ সালে টেংরাখালী গ্রামের মৃত মান্দার গাজীর ছেলে আনিছুর রহমানের নিকট থেকে ৭৬ হাজার ৫০০টাকা গ্রহণ করেন বাৎসরিক ৪ হাজার টাকা সুদ হিসাবে। আর এই টাকা গ্রহণের সময় আনিছুর সু-কৌশলে রনজিৎ মুন্ডার নিকট থেকে ১৫০ টাকার নন জুডিশিয়াল ফাঁকা স্ট্যাম্পে টিপ সহি নেওয়াসহ বন্দোবস্ত জমির দলিল গ্রহণ করেন। এরপর থেকে রনজিৎ মুন্ডা প্রতি বছর আনিছুর রহমানকে সুদের ৪ হাজার টাকা প্রদান করে আসছিল। কিন্তু বর্তমানে আনিছুর রহমান স্ট্যামের বলে রনজিৎ মুন্ডা তাকে ১১ কাটা জমি লিখে দিয়েছে বলে তার বসত ভিটা জবর দখলসহ সেখানে পুকুর খনন করতে থাকে। এ নিয়ে গত বৃহস্পতিবার স্থানীয় ইউপি সদস্য আলী আজগর বুলু , সাবেক ইউ,পি সদস্য আব্দুল গফ্ফার তরফদারসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে বিষয়টি নিয়ে গ্রাম্য সালিশসহ বসত ভিটার মাপ জরিপ করা হয়। মাপ জরিপ করে রনজিৎ মুন্ডার বসত ঘরের বারান্দায় খোটা মারেন আনিছুর। আর এঘটনার পর ওইদিন রাত থেকে রনজিৎ মুন্ডাসহ তার ছেলে সতীষ মুন্ডা , সতীষ মুন্ডার স্ত্রী সেফালী মুন্ডা, সতীষ মুন্ডার মেয়ে স্মৃতি মুন্ডা ও তার ছেলে অভিজিৎ মুন্ডা নিখোঁজ রয়েছেন। বর্তমানে তাদের কোন সন্ধান পাওয়া যাচ্ছেনা বলে জানান রনজিৎ মুন্ডার প্রতিবেশিরা।
স্থানীয় গ্রাম পুলিশ গোপাল মুন্ডা বলেন , রনজিৎ মুন্ডাসহ তার পরিবারের সদস্যরা নিখোঁজ হওয়ার পর হতে স্থানীয় সুদ ব্যবসায়ী আবুল কালাম, আকবার শেখ, নূরালী মোল্যা, মহরম কাগুচী, আব্দুল আজিজ সুদের টাকার জন্য রনজিৎ মুন্ডার বাড়িতে পায়তারা করছেন।
মনোরঞ্জন মুন্ডা, আবু নুর আলম মোল্যা নামে অপর দুই ব্যক্তি বলেন, বৃহস্পতিবার বিকালে রনজিৎ মুন্ডা, সতীষ মুন্ডাসহ তাদের পরিবারের সদস্যরা কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। এসময় কান্না জড়িত কন্ঠে তারা বলেন, ‘আনিছুর তাদের ভিটাবাড়ি জোরপূর্বক ভাবে নিয়ে নিয়েছে। পরিবার নিয়ে তারা কোথায় থাকবে?’ এরপর পরদিন সকাল হতে রনজিৎ মুন্ডাসহ তার পরিবারের কোন সদস্যের সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না বলে দাবি করেন তারা।
স্থানীয় ইউ,পি সদস্য আলী আজগর বুলু বলেন, চেয়ারম্যানের নির্দেশনায় আমিসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা রনজিৎ মুন্ডা- আনিছুরের সালিশে ছিলাম। তবে মাপ জড়িপের বিষয়টি রনজিৎ মুন্ডা মেনে না নেওয়ায় পরবর্তীতে আবাারও সালিশের দিন ধার্য্য করা হয়। আর এরপর থেকে ওই পরিবার নিখোঁজ হয়েছে বলে শুনেছি।
রমজাননগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব শেখ আল মামুন বলেন , বিষয়টি আমি শুনেছি। আমরা চেষ্টা করছি তাদের সন্ধান পাওয়ার জন্য।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত আনিছুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলেও কথা বলা সম্ভব হয়নি।
শ্যামনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম আজাদ বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নন তিনি। অভিযোগ পেলে তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।