অনলাইন ডেস্ক :
ঘূর্ণিঝড় রেমাল দুর্গত উপকূলের বর্তমান পরিস্থিতি সরজমিনে পরিদর্শন শেষে বিশিষ্ঠ বিশিষ্ট গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব মনজুরুল আহসান বুলবুল বলেন, টানা ৪ দিন উপকুলের ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা ঘুরে একটা বিষয় পরিস্কার সেটি হল মানুষ ত্রাণ চায় না। তারা চায় বসবাসের যোগ্য পরিবেশ। সুপেয় পানির নিশ্চিয়তা। প্রকৃতির সাথে যুদ্ধ করতে নিশ্চিত জীবনের নিশ্চিয়তা। তিনি আসন্ন জাতীয় বাজেটে বিশেষ বরাদ্দ ও সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণের আহ্বান জানান।
শনিবার ২২ জুন সকাল ১০টায় উন্নয়ন সংস্থা ‘লিডার্স’ এবং নাগরিক সংগঠন সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা আন্দোলন এবং সাতক্ষীরা জলবায়ু অধিপরামর্শ ফোরামের পক্ষ থেকে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে আয়োজিত মিট দ্যা প্রেস অনুষ্ঠানে তিনি এ আহবান জানান।
মিট দ্য প্রেসে মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল এর নেতৃত্বাধীন নাগরিক এবং সাংবাদিক প্রতিনিধি এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা বক্তব্য রাখেন। তারা বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে ও প্রবল জ্বলোচ্ছাসে দক্ষিণ-পশ্চিম (সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট) উপকূলে লক্ষ লক্ষ মানুষ বসতবাড়ি ও জীবিকা হারিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে, খাদ্য ও সুপেয় পানির সংকটে ভুগছে। এই অবস্থা থেকে উত্তরণে সরকার ও বেসরকারি সংস্থাগুলোকে সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে হবে এবং বাজেটে বিশেষ বরাদ্দ রাখতে হবে।
ঘূর্ণিঝড় রেমাল দুর্গত উপকূলের বর্তমান পরিস্থিতি সরজমিনে পরিদর্শন শীর্ষক অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক নিখিল চন্দ্র ভদ্র। আলোচনায় আরো অংশ নেন বাপার যুগ্ম সম্পাদক মো: আমিনুর রসুল, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের একোয়াকালচার বিভাগের চেয়ারম্যান মীর মোহাম্মদ আলী, কুয়েটের সহকারী অধ্যাপক আবুহেনা মোস্তফা কামাল, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব আমিনুল হক ভুইয়া প্রমূখ। সংক্ষিপ্ত শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন লিডার্সের নির্বাহী পরিচালক মোহন কুমার মন্ডল ।
জলবায়ু অধিপরামর্শ ফোরামের আহ্বায়ক প্রফেসর আব্দুল হামিদের সভাপতিত্বে মিট দ্য প্রেসে আরো বক্তব্য রাখেন চ্যানেল আইয়ের সাতক্ষীরা প্রতিনিধি আবুল কালাম আজাদ, প্রথম আলোর স্টাফ রিপোর্টার কল্যাণ ব্যানার্জি‘, দৈনিক সংযোগ প্রতিদিনের সাতক্ষীরা প্রতিনিধি অসীম বরণ চক্রবর্তী, নিউএইজ ও সময়ের খবরের নিজস্ব প্রতিবেদক রুহুল কুদ্দুস, মাছরাঙ্গা টেলিভিশনের সাংবাদিক মোস্তাফিজুর রহমান, সময় টিভির স্টাফ রিপোর্টার মমতাজ আহমেদ বাপি, ডিবিসি নিউজ এর জেলা প্রতিনিধি এম বেলাল হোসাইন, দৈনিক জনকণ্ঠের স্টাফ রিপোর্টার মিজানুর রহমান, দৈনিক দক্ষিণের মশালের অধ্যক্ষ আশেক ই এলাহী, বাংলাদেশ টেলিভিশনের জেলা প্রতিনিধি মোঃ মোজাফ্ফর রহমান, মোহনা টিভির আব্দুল জলিল, ইয়ারব হোসেন প্রমুখ।
মিট দ্য প্রেসে মনজুরুল আহসান বুলবুল বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে খুলনার পাইকগাছা ও কয়রা উপজেলা। সরজমিনে ২০ জুন এবং ২১ জুন সেখানে গিয়ে দেখা গেছে যে ঐখানের মানুষ বিশেষত নারীরা খুবই মানবেতর জীবনযাপন করছে। সেখানে বেড়িবাঁধ, ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, মৎস্য ঘের, ফসল ও সামাজিক প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সুপেয় পানির উৎসগুলো নষ্ট হয়ে গেছে। বিশ্বঐতিহ্য সুন্দরবনে পশুপাখির মৃত্যুসহ ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তিনি আরো বলেন, ইতোমধ্যে সরকার ও বেসরকারি সংস্থাগুলোর পক্ষ থেকে ত্রাণ ও পূনর্বাসনে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হলেও তা যথেষ্ট নয়। দুর্যোগ পরবর্তী পূনর্বাসন কাজে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি সংস্থাগুলোকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।
অধ্যাপক মীর মোহাম্মদ আলী বলেন, ভৌগলিক অবস্থান, ঘন ঘন প্রাকৃতিক দূর্যোগ, ভঙ্গুর অবকাঠামো, দারিদ্রতা, দীর্ঘমেয়াদী লবণাক্ততা, সংকটাপন্ন কৃষি প্রভৃতির কারণে দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় এলাকা সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ। ওই এলাকাকে বিশেষ জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা ঘোষণা করে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার উদ্যোগ নেওয়া দরকার। সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে জাতীয় বাজেটে বিশেষ বরাদ্দ রাখতে হবে।
উপকূলীয় এলাকায় উন্নয়ন কর্মকা- বাড়ানোর দাবি জানিয়ে অন্যান্য বক্তারা বলেন, ঘূণিঝড় রেমালে প্রকৃত ক্ষতি সরকারি হিসেবের চেয়েও কয়েকগুন বেশি। এই ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে ত্রাণের থেকে জরুরি লবণপানি নিয়ন্ত্রণ। লবণাক্ততা নিয়ন্ত্রণ করা গেলে কৃষিকাজ করেই উপকূলের মানুষ তার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবে। তারা আরো বলেন যে বর্তমান সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর দুর্যোগ মোকাবেলার সক্ষমতা বেড়েছে।
বক্তারা বলেন, দুর্যোগে সব থেকে বেশি দুর্ভোগের শিকার নারী ও শিশুরা। পূনর্বাসনে তাদেরকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ ও সুন্দরবনসহ পরিবেশ সুরক্ষায় নজর দিতে হবে। ঘূর্ণিঝড় রেমাল ধীরে ধীরে আঘাত করেছে এবং দীর্ঘ সময় ধরে তান্ডব চালিয়েছে। তাই মৃত্যু কম হলেও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বেশি। ক্ষতিগ্রস্থদের পুনবার্সনের জন্য সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। নদ-নদী ও পরিবেশ সুরক্ষা নিশ্চিত করে বিজ্ঞানসম্মত উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। উন্নয়ন কাজে সাধারণ মানুষ সম্পৃক্ত করতে হবে।