আসাদুজ্জামান : আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে সাতক্ষীরায় দলীয় নেতা-কর্মীরাও বেশ উজ্জিবিত হয়ে উঠেছে। ইতিমধ্যে প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে সম্ভাব্য প্রার্থীরা। জেলার বিভিন্ন স্থানে সম্ভাব্য প্রার্থীরা তাদের রকমারী ব্যানার, পোস্টার ও প্যানা লাগিয়ে ভোটারদের মাঝে ইতিমধ্যে প্রচার-প্রচারণাও চালাচ্ছেন। তবে, জামায়াত ইসলামী বাদে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জাসদ ও ওয়ার্কার্স পার্টিসহ অন্যান্য দলগুলো প্রকাশ্যেই তৎপরতা চালাচ্ছে। তবে, এ জেলায় অনেক আগ থেকেই জামায়াতের একটি শক্ত অবস্থান রয়েছে। আর এ কারণে সাতক্ষীরার চারটি আসনের জয়-পরাজয়েই জামায়াতের প্রভাব থাকবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। আর মিত্র দল বিএনপির সঙ্গে আসন ভাগাভাগি না হলে জামায়াত স্বতন্ত্র নির্বাচন করতে পারেন বলেও প্রচার রয়েছে।
২০০১ সালের নির্বাচনে জেলার তিনটি আসনে জামায়াত প্রার্থীরা বিজয়ী হন। অবশ্য ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে জামায়াত কোনো আসনেই জিততে পারেনি। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতা-কর্মীরা সাংগঠনিক কর্মকা- চালানোর পাশাপাশি দলীয় কোন্দল মেটাতে ব্যস্ত। চারটি আসনে (সংসদীয় ১০৫, ১০৬, ১০৭ ও ১০৮) এ এখনই ব্যানার, পোস্টার, প্যানাসহ নানা ধরনের শুভেচ্ছাবার্তা সংবলিত প্রচারণা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
সাতক্ষীরা-১ আসন (তালা ও কলারোয়া) : এই আসনে ওয়ার্কার্স পার্টির বর্তমান এমপি মোস্তফা লুৎফুল্লাহ আবারও ১৪ দলীয় জোট থেকে মনোনয়ন চাইবেন। তবে, জোট সম্প্রসারিত হয়ে মহাজোট হলে এই আসনে মনোনয়ন পেতে পারেন জাতীয় পার্টির সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী সৈয়দ দিদার বখ্ত। এখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে মাঠে কাজ করছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও সাবেক এমপি প্রকৌশলী শেখ মুজিবুর রহমান, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ কামাল শুভ্র, সাবেক প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য শহীদ মুক্তিযোদ্ধা স.ম আলাউদ্দীনের কন্যা জেলা মহিলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক লায়লা পারভিন সেজুঁতি, সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের তরুন নেতা ও আঞ্চলিক যুদ্ধাপরাধ নির্মুল কমিটির কেন্দ্রীয় আহবায়ক কামরুজ্জামান সোহাগ, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ফিরোজ আহমেদ, কৃষিবিষয়ক সম্পাদক ও বঙ্গবন্ধু সৈনিক লীগের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি সরদার মুজিব, তালা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ নুরুল ইসলাম, কলারোয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফিরোজ আহমেদ স্বপনও মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন।
এ আসনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির প্রকাশনা সম্পাদক ও সাবেক এমপি হাবিবুল ইসলাম হাবিব নির্বাচন করবেন। জামায়াতে ইসলামী থেকে কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যাপক ইজ্জত উল্লাহ এ আসন থেকে নির্বাচন করতে পারেন। এ ছাড়া তালা উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি ও সাবেক চেয়ারম্যান এস এম নজরুল ইসলাম, জাসদের কেন্দ্রীয় সহ-সম্পাদক শেখ ওবায়েদুস সুলতান বাবলুও দলীয় সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।
সাতক্ষীরা সদর-২ আসন : একটি পৌরসভা ও ১৪টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত এ আসন থেকে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় রয়েছেন বর্তমান এমপি মীর মোস্তাক আহমেদ রবি, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান আলহাজ্ব নজরুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক ও সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান বাবু, সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতা আ.হ.ম তারেক উদ্দীন, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এস এম শওকত হোসেন, সাবেক যুগ্ম-সচিব শেখ শাফি আহমেদ ও ভোরের পাতা পত্রিকার সম্পাদক এরতেজা হাসান জজ।
এ ছাড়া বিএনপি থেকে মনোনয়ন চাইবেন জেলা বিএনপির সভাপতি রহমত উল্লাহ পলাশ, সাধারণ সম্পাদক শেখ তারিকুল হাসান, জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি আব্দুর রউফ, আলহাজ্ব এম.এ জলিল ও চেয়ারম্যান আব্দুল আলিম। এ ছাড়া জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়নের জন্য চেষ্টা করছেন কেন্দ্রীয় নেতা সাবেক এমপি আবদুল জব্বার, জেলা জাপার সভাপতি শেখ আজহার হোসেন, কেন্দ্রিয় নেতা শেখ মাতলুব হোসেন লিয়ন ও জেলা সাধারণ সম্পাদক শেখ আশরাফুজ্জামান আশু। ন্যাপের জেলা সম্পাদক কাজী সাঈদ, গণফোরাম থেকে জেলা সাধারণ সম্পাদক আলিনুর খান বাবুলও নির্বাচন করার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। এ আসন থেকে নির্বাচন করতে পারেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য মুহাদ্দিস আবদুল খালেক।
সাতক্ষীরা ৩ আসন : আশাশুনি, দেবহাটা এবং কালীগঞ্জ উপজেলার একাংশ নিয়ে গঠিত এ আসনে আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী অধ্যাপক আ.ফ.ম রুহুল হক এমপি। তিনি সম্প্রতি আ ’লীগের উপদেষ্টাম-লীর সদস্য এবং কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক উপ-কমিটির সভাপতির গুরুত্বপূর্ণ পদ পেয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ আস্থাভাজন নেতা হিসেবেও তার বিশেষ পরিচিতি রয়েছে। এ ছাড়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক এমপি মুনসুর আহমেদ, মুক্তিযোদ্ধা ও অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা লে. কর্নেল জামায়েত হোসেন, নর্দান ইউনিভার্সিটির ভিসি অধ্যাপক ড. ইউসুফ আবদুল্লাহ ও আশাশুনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান এ.বি.এম মোস্তাকিমও নির্বাচন করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
বিএনপি থেকে মাঠে রয়েছেন দলের নির্বাহী কমিটির সদস্য কালিগঞ্জ উপজেলার নলতা গ্রামের বাসিন্দা ডা. শহিদুল আলম ও সাবেক সংসদ সদস্য দলের নির্বাহী কমিটির সদস্য কাজী আলাউদ্দীন। এ ছাড়া জাতীয় পার্টির হয়ে কাজ করছেন দলের কেন্দ্রীয় নেতা সাবেক এমপি স.ম সালাউদ্দিন। এ আসনে জামায়াতে ইসলামী থেকে হাফেজ রবিউল বাশারও নির্বাচন করতে পারেন।
তবে, আসন সংখ্যা যদি পূর্বের ন্যায় ৫টি হয় তাহলে শুধুমাত্র আশাশুনি উপজেলা নিয়ে গঠিত সাবেক এই ৩ আসনে ক্লিন ইমেজের লোক হিসেবে পরিচিত আশাশুনি উপজেলার বড়দল গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা লেঃ কর্ণেল জামায়েত হোসেন আওয়ামীলীগ থেকে মনোয়ন পেতে পারেন। তিনি মনোয়ন পেলে আশাশুনি উপজেলা বাসী জনমত নির্বিশেষে তাকে নির্বাচিত করবেন বলেও প্রচার রয়েছে।
সাতক্ষীরা-৪ আসন : সুন্দরবন ঘেঁষা শ্যামনগর উপজেলা ও কালীগঞ্জ উপজেলার একাংশ নিয়ে গঠিত এ আসন থেকে শ্যামনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বর্তমান এমপি এস এম জগলুল হায়দার দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী। এ ছাড়াও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান জেলা আওয়ামী লীগের শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক শফিউল আজম লেলিন ও শ্যামনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতাউল হক দোলনও তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন।
বিএনপি থেকে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনী মাঠে রয়েছেন জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট সৈয়দ ইফতেখার আলী ও উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল ওয়াহেদ মাস্টার।
এ ছাড়া জাতীয় পার্টির মনোনয়ন পাওয়ার প্রত্যাশা করছেন, দলটির কেন্দ্রীয় নেতা ছাত্তার মোড়ল ও বহিষ্কৃত নেতা এইচ এম গোলাম রেজা। আর জামায়াত ইসলামী থেকে এখানে প্রার্থী হতে পারেন সাবেক এমপি গাজী নজরুল ইসলাম।