নিজস্ব প্রতিবেদক : ২০০২ সালের ৩০ অগাস্ট সাতক্ষীরায় কলারোয়ায় তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গাড়ি বহরে হামলা মামলায় বৃহষ্পতিবার আরো দু’জন সাক্ষী আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি সাবেক সাংসদ প্রকৌশলী শেখ মুজিবুর রহমান ও জজ কোর্টের অতিরিক্ত পিপি অ্যাড. শেখ আজাহারুল ইসলাম এ সাক্ষ্য দেন। এ নিয়ে সাতজন এ মামলায় সাক্ষী দিলেন। তবে বৃহষ্পতিবার প্রকৌশলী শেখ মুজিবুর রহমান ও অ্যাড. আজাহারুল ইসলাম যে সাক্ষী দিয়েছেন তা বিচার কার্যক্রমে মাইল ফলক হিসেবে কার্যকরী ভূমিকা রাখবে। মামলার বিররণে জানা যায়, ২০০২ সালের ৩০ অগাস্ট সকাল ১০টায় তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা উপজেলার চন্দনপুর ইউনিয়নের হিজলি গ্রামের এক মুক্তিযোদ্ধার ধর্ষিতা স্ত্রীকে দেখতে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে আসেন। সেখান থেকে যশোরে ফিরে যাওয়ার পথে সকাল ১১টা ৪০ মিনিটের দিকে কলারোয়া উপজেলা বিএনপি অফিসের সামনে রাস্তার উপর জেলা বিএনপি’র সভাপতি ও তৎকালিন সাংসদ হাবিবুল ইসলামের হাবিব ও বিএনপি নেতা রঞ্জুর নির্দেশে বিএনপি ও যুবদলের নেতা কর্মীরা দলীয় অফিসের সামনে একটি যাত্রীবাহি বাস(সাতক্ষীরা-জ-০৪-০০২৯) রাস্তার উপরে আড় করে দিয়ে তার গাড়ি বহরে হামলা চালায়। হামলায় জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রকৌশলী শেখ মুজিবুর রহমান ও সাংবাদিকসহ কমপক্ষে এক ডজন দলীয় নেতা কর্মী আহত হয়। এ ঘটনায় থানা মামলা না নেওয়ায় ২ সেপ্টেম্বর কলারোয়া মুক্তিযোদ্ধা কমা-ার মোসলেমউদ্দিন বাদি হয়ে যুবদল নেতা আশরাফ হোসেন, আব্দুল কাদের বাচ্চুসহ ২৭ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ৭০/৭৫ জনকে সাতক্ষীরা নালিশী আদালত ‘ক’ অঞ্চলে একটি মামলা(সিআরপি-১১৭১/০২) দায়ের করেন। মামলায় ১৮ জনকে সাক্ষী করা হয়। বিচারক এম আই ছিদ্দিকী তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য কলারোয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এসএম গোলাম কিবরিয়াকে নির্দেশ দেন। ২০০৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর ঘটনা মিথ্যা বলে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন। বারবার তদন্তকারি কর্মকর্তার কাছে যেয়েও তিনি জবানবন্দি না নিয়ে নিজের মনগড়া কথা ১৬১ ধারার জবানবন্দি হিসেবে উল্লেখ করেছেন বলে থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এফিডেফিড দিয়ে আদালতের কাঠগড়ায় হাজির হয়ে বিচারককে অবহিত করেন সাক্ষী ফিরোজ আহম্মেদ স্বপন, শওকত হোসেন, শহীদুল ইসলাম, প্রভাষক জাভিদ হাসান, আমিনুল ইসলাম লাল্টু ও আলতাফ হোসেন লালু। বাদি মোসলেমউদ্দিন পুলিশ প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে আদালতে ২০০৪ সালের ২২ জানুয়ারি আদালতে নারাজির আবেদন জানালে শুনানী শেষে তা খারিজ হয়ে যায়। এ খারিজ আবেদনের বিরুদ্ধে বাদি ২০০৪ সালের ১১ এপ্রিল জেলা ও দায়রা জজ আদালতে রিভিশন মামলা ( ১৭/০৪) দায়ের করেন। ২২ এপ্রিল শুনানী শেষে বিচারক এ রিভিশন আবেদন খারিজ করে দেন। ২০০৪ সালের ৪ অগাস্ট বাদি এ আদেশের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট ডিভিশনে ক্রিমিনাল মিস কেস (৫৮৯৩/০৪) দাখিল করেন। দীর্ঘ শুনানী শেষে বিচারকদ্বয় ২০১৩ সালের ১৮ জুলাই আপিল মঞ্জুর করে নি¤œ আদালতের আদেশের উপর স্থগিতাদেশ দেন। একইসাথে নি¤œ আদালতে মামলার কার্যক্রম নতুন করে শুরু করার করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন। আদেশের কপি দীর্ঘ এক বছরের বেশি সময় পর ফাইলবন্দি থাকার পর ২০১৪ সালের ১২ সেপ্টেম্বর সাতক্ষীরার মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে এসে পৌঁছায়। ১৭ সেপ্টেম্বর বাদির উপস্থিতিতে নারাজির শুনানী করার জন্য মুখ্য বিচারিক হাকিম নিতাই চন্দ্র সাহা ২০১৪ সালের ১৫ অক্টোবর দিন ধার্য করেন। ওই দিন বিচারক নিতাই চন্দ্র সাহা অভিযোগটি এজাহার হিসেবে গণ্য করার জন্য কলারোয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন। পরবর্তীতে মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা কলারোয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) শফিকুর রহমান ৫০ জনের নাম উল্লেখ করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। মামলাটি তিনটি ভাগে ভাগ হয়ে এসটিসি ২০৭/১৫, এসটিসি ২০৮/১৫ দু’টি অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ-২য় আদালতে বিচারাধীন। অপর টিআর ১৫১/১৫ মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে বিচারাধীন মামলায় বাদি মুক্তিযোদ্ধা কমা-ার শেখ মোসলেমউদ্দিন, কলারোয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফিরোজ আহম্মেদ স্বপন, সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম লাল্টু, শহীদুল ইসলাম, কলারোয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক আহবায়ক সাজিদুর রহমান চৌধুরী মঞ্জুর সাক্ষী দেওয়া শেষ হওয়ার পর বৃহষ্পতিবার প্রকৌশলী শেখ মুজিবুর রহমান ও অ্যাড. আজাহারুল ইসলাম আদালতে সাক্ষী দিয়েছেন। আগামি ১৭ অগাস্ট এ মামলার পরবর্তী সাক্ষীর জন্য দিন ধার্য করা হয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষের পিপি অ্যাড. ওসমান গনি জানান, এসটিসি ২০৭/১৫, ২০৮/১৫ এ দু’টি মামলায় বৃহষ্পতিবার সাক্ষীর জন্য অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ ২য় আদালতে দিন ধার্য ছিল। বাদি মোসলেমউদ্দিন গত ২৭ জুলাই এ আদালতে সাক্ষী দিতে এসে অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাকে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের করোনারি কেয়ার ইউনিটে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে তিনি চিকিৎসাধীন থাকায় তার সাক্ষী গ্রহণের জন্য রাষ্ট্রপক্ষের সময়ের আবেদনের প্রেক্ষিতে আগামি ১৭ অগাস্ট পরবর্তী সাক্ষীর দিন ধার্য করা হয়েছে। বৃহষ্পতিবার মুখ্য বিচারিক হাকিম রাফিজুল ইসলামের আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে সাক্ষীর কার্যক্রম পরিচালনা করেন জজ কোর্টের পিপি অ্যাড. ওসমান গনি, আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের সভাপতি অ্যাড. এসএম হায়দার আলী, অতিরিক্ত পিপি অ্যাড. শহীদুল ইসলাম পিণ্টু, অ্যাড. আলী হোসেন, সহকারি পিপি অ্যাড. শাহানেওয়াজ মোস্তাফিজুর রহমান, অ্যাড তৌহিদুর রহমান শাহীন, অ্যাড. ওকালত আলী প্রমুখ।
পূর্ববর্তী পোস্ট