চিত্রনায়ক সালমান শাহর মৃত্যু রহস্য উদঘাটনে এক সময় তার বিউটিশিয়ান আমেরিকা প্রবাসী রাবেয়া সুলতানা রুবিকে দেশে ফিরিয়ে এনে জিজ্ঞাসাবাদের চেষ্টা চলছে। মামলাটি তদন্তের দায়িত্বে থাকা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন-পিবিআই কর্মকর্তারা মনে করছেন তাকে দেশে ফিরিয়ে আনা সম্ভব।
এর জন্য আইনগত প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক সিরাজুল ইসলাম জানান, গুরুত্বপূর্ণ এই মামলাটি অগ্রগতি নির্ভর করছে সালমান শাহর বিউটিশিয়ান রুবি, দেহরক্ষী আবুল, গৃহপরিচারিকা মনোয়ারা, সিকিউরিটি গার্ড খালেক ও রিজভী নামের এক ব্যক্তিকে খুঁজে বের করে তাদের জিজ্ঞাসাবাদের ওপর। কিন্তু এদের কোনো সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না। পিবিআই-এর ঢাকা মেট্রোর বিশেষ পুলিশ সুপার (এসপি) আবুল কালাম আজাদ বলেন, গুরুত্বপূর্ণ এই মামলায় যাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন তারা কেউ দেশে নেই। সালমান শাহর বাসার সেই সময়ের কাজের মেয়ে থেকে শুরু করে দারোয়ান সবাই আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া ও থাইল্যান্ডে বসবাস করছে বলে প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে। পিবিআই-এর উপ-মহাপরিদর্শক বনোজ কুমার গতকাল এই প্রতিবেদককে জানান, চাঞ্চল্যকর এই মামলাটি তদন্ত করতে গিয়ে আমরা রুবি নামে একজনকে খুঁজছিলাম। যে রুবি দাবি করছে সালমান শাহকে হত্যা করা হয়েছে এই রুবি সেই রুবি কি না তা যাচাই-বাছাই চলছে। তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করার কাজ শুরু হয়েছে। এ ছাড়া ভিডিওতে দেওয়া তার বক্তব্য তদন্ত কাজে কতটুকু প্রাসঙ্গিক কতটা অপ্রাসঙ্গিক তা যাচাইয়ের জন্য আদালতে উপস্থাপন করা হবে। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে তুমুল জনপ্রিয়তার মধ্যে ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর রাজধানীর ইস্কাটন রোডে নিজের ফ্ল্যাট থেকে পুলিশ শাহরিয়ার চৌধুরী ইমনের লাশ উদ্ধার করে, রুপালি পর্দায় যার নাম ছিল সালমান শাহ। ওই ঘটনাকে আত্মহত?্যা বিবেচনা করে পুলিশ সে সময় রমনা থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা রুজু করে। মামলার তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয় সালমান শাহ আত্মহত্যা করেছেন। কিন্তু পুলিশের এই তদন্ত প্রতিবেদন আস্থা পাননি সালমান শাহর বাবা কমরুদ্দীন আহম্মেদ চৌধুরী ও মা নীলা চৌধুরী। থানা, ডিবি, সিআইডি ঘুরে অপমৃত্যুর মামলাটি বিচার বিভাগীয় তদন্ত হয় টানা প্রায় ১৪ বছর। প্রতিটির তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় সালমান শাহ আত্মহত্যা করেছেন। এই তদন্ত প্রতিবেদনে নারাজি জানিয়ে পুনঃতদন্ত দাবি করা হলে সম্প্রতি মামলা তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় পুলিশের নব গঠিত বিশেষায়িত ইউনিট পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন-পিবিআইকে। সামিরার বাবা জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক শফিকুল হক হীরা। মা থাইল্যান্ডের নাগরিক চট্টগ্রামের বিউটি পার্লার ব্যবসায়ী লুসি। সালমানের মৃত্যুর তিন মাস পরেই ব্যবসায়ী মুস্তাক ওয়াইজকে বিয়ে করেন সামিরা। দ্বিতীয় বিয়ের পর দেশ ছেড়ে চলে যান থাইল্যান্ড। সেখানে সামিরার নতুন সংসারে তিন মেয়ে রয়েছে। সেখানে সামিরার ছোট দুই বোন ফাহরিয়া হক ও হুনায়জা শেখ তাদের স্বামী-সন্তান নিয়ে বাস করেন। নীলা চৌধুরীর সন্দেহের মধ্যে থাকা রুবি সোমবার এক ভিডিও বার্তায় দাবি করেন সালমান শাহর স্ত্রী সামিরা ও তার পরিবার মিলে সালমান শাহকে হত্যা করেছে। তার এই বক্তব্যে সারা দেশে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। দুই দশক পর বিস্ফোরক বক্তব্য নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হাজির হওয়া রাবেয়া সুলতানা রুবিকে আমেরিকা থেকে দেশে ফিরিয়ে এনে তার জবানবন্দি নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন সালমান শাহর মা নীলা চৌধুরী। সালমান শাহর মৃত্যুর জন্য তার স্ত্রী সামিরা হক, চলচ্চিত্র প্রযোজক ও ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ ভাইসহ ১১ জনকে দায়ী করে আদালতে আবেদন করেছিলেন নীলা চৌধুরী। ওই ১১ জনের মধ্যে রুবির নামও রয়েছে। রুবির এই স্বীকারোক্তিকে অপরাধীদের স্বাভাবিক নিয়তি এবং সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনার ফসল হিসেবে বর্ণনা করছেন নীলা। হীরার পরিবারের কোনো একটি ঘটনার কারণেই সালমান শাহকে হত্যা করা হয়েছিল বলে দাবি তার। বর্তমানে নীলা চৌধুরী লন্ডনে তার ছোট ছেলে শাহরানের কাছে আছেন। অন্যদিকে হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে সামিরার বাবা বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক শফিকুল হক হীরা এতদিন পর রুবির এ ধরনের বক্তব্যের উদ্দেশ্য নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন।
পূর্ববর্তী পোস্ট