নিজস্ব প্রতিবেদক : সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ধুলিহর ইউপি চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান ওরফে বাবু সানার বিপক্ষে কথা বলার অপরাধে তিন সহোদরকে চুরির অপবাদ দিয়ে নির্মমভাবে পিটিয়ে আহত করার অভিযোগ উঠেছে। গত বৃহস্পতিবার ও শনিবার দু’দফায এ ঘটনাটি ঘটে। আহত তিন সহদোর হলেন, সদর উপজেলার ধুলিহর সানাপাড়া গ্রামের মৃত ইমান আলী কারিকরের পুত্র কেসমত আলী, রহমত আলী ও সাবুর আলী। ভীত সন্ত্রস্ত এই সহোদররা ভয়ে মুখ খুলতেও সাহস পাচ্ছেন না।
অভিযোগ উঠেছে- সাবুর আলীর ভাই কেসমত আলীকে গত বৃহস্পতিবার সকালে চেয়ারম্যান ইউনিয়ন পরিষদে ডেকে ছাগল চুরির অপবাদ দিয়ে নির্মমভাবে বেত দিয়ে পিটিয়ে মারাত্মক আহত করেন। এরপর কেসমত আলীর ছোট ভাই রহমত আলী বাজার করে বাড়ি ফেরার পথে তাকেও ধরে নিয়ে যাওয়া হয় ইউনিয়ন পরিষদে। পরে দুপুরে কেসমত আলী ও রহমত আলীকে ব্রহ্মরাজপুর পুলিশ ক্যাম্পের এ,এস,আই সৈয়দ আলীর কাছে দিলে তিনি তাদের ক্যাম্পে নিয়ে আটকে রাখেন। পরবর্তীতে দেন দরবার শেষে ওই দিন রাত ১১ টার দিকে পুলিশকে ২০ হাজার টাকা ঘুষ দিয়ে মুচলেকার মাধ্যমে তারা ক্যাম্প থেকে মুক্তি পান।
এর একদিন পর গত শনিবার সাবুর আলী এই বিষয়টি এলাকার জনৈক ব্যক্তির সাথে গল্প করাকালে চেয়ারম্যানের চাচাতো ভাই মিন্টু শুনতে পেয়ে চেয়ারম্যানেকে বিষয়টি জানান। চেয়ারম্যান তাৎক্ষণিক দফাদার জহির ও গ্রাম পুলিশ মিন্টু সাহা (ভোম্বল)-কে দিয়ে সাবুর আলীকে তার বাড়ি থেকে চেয়ারম্যানের বাড়িতে ডেকে আনে। এসময় তাকে চেয়ারম্যানের বাড়ির একটি কক্ষে আটকিয়ে নির্মমভাবে উপর্যুপরি ৩টি লাঠি দিয়ে পেটায়। চেয়ারম্যান বাবু সানার দেহরক্ষী সোহরাব তাকে এ ৩টি লাঠি সরবরাহ করে।
সাবুর আলী জানান, মারপিট করার সময় চেয়ারম্যান বলে, তুইও চোর, তোর নামে জামাতের মামলা রয়েছে, তোকে আরো ৪/৫টি মামলা দিয়ে চালান করবো। এ সময় সে কয়েকবার চেয়ারম্যানের পা জড়িয়ে ধরে অনুনয় বিনয় করে বলে ‘আমার কিছু নেই, আমি দেশ ছেড়ে চলে যাবো। তখন চেয়ারম্যান বলে ‘আজকেই চলে যেতে পারবি’। এসব বলতে বলতে তাকে লাথি মারে ফেলে দিয়ে বেধড়ক পিটাতে থাকে। মারপিটে সাবুর আলীর ডান হাতের কবজিতে চোট পায়। এছাড়া সারা শরীর থেতলে যায়। চেয়ারম্যান ছেড়ে দেওয়ার সময় সাবুর আলীকে আরো বলে ‘এই কথা যদি কেউ শোনে তাহলে তোর হাড় একটা একটা করে বেছে ফেলবো’। চেয়ারম্যানের ভয়ে সাবুর আলী কাউকে কিছু না জানিয়ে স্থানীয় গ্রাম্য চিকিৎসক মফিজুল ইসলামকে দেখিয়ে ব্যান্ডেজ ও হাত প্লাস্টার করিয়ে নেন।
সাবুর আলী আরো জানান, ২০১৩ সালে সুন্দরবনে পিকনিকে গিয়ে চেয়ারম্যান বাবু সানার সাথে হরিণের মাংস নিয়ে গোলযোগ হয়। এরই জের ধরে সে তার নামে নাশকতার মামলা দেয়। কান্নাজড়িত কন্ঠে আরো জানায়, যে মার আমাকে মেরেছে তা চোখে না দেখলে বিশ্বাস করতে পারবেন না। হাতে পায়ে ধরে অনুরোধ করেও নিজেকে রক্ষা করতে পারিনি। আমরা গরিব মানুষ। আমাদের বিচার কেউ করবে না। এলাকার কোন মানুষ বলতে পারবে না আমি কোন দল করি। অথচ মিথ্যা মামলায় জেল খেটে আমি নিঃস্ব হয়ে গেছি। চেয়ারম্যান কর্তৃক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ভয়ে এসব পত্রিকায় না লেখার জন্য এই প্রতিবেদককে তিনি অনুরোধ জানান। চেয়ারম্যান জানতে পারলে আবারও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশংকা রয়েছে তার।
ব্রহ্মরাজপুর পুলিশ ক্যাম্পের এ,এস,আই সৈয়দ আলী বলেন, কিসমত ও রহমত আলীর বিরুদ্ধে একটা অভিযোগ ছিলো, তাদের আটক রাখা হয়। কিন্তু পরবর্তীতে সেটা তারা স্থানীয়ভাবে মিমাংসা করায় তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। তবে ২০ হাজার টাকা ঘুষ নেওয়ার বিষয়টি ঠিক নয় বলে তিনি দাবি করেন।
সাবুর আলীর ভাই কেসমত আলী তাদের তিন ভাইকে চেয়ারম্যান বাবু সানা চুরির অপবাদ দিয়ে মারপিট করে আহত করেছেন বলে স্বীকার করেন।
এ ব্যাপারে চেয়ারম্যান বাবু সানার সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, “সাবুর আলীকে মারপিট করার ঘটনা মিথ্যা। আমি তাকে মারপিট করিনি। তার ভাই কিসমত মটর ও ছাগল চুরি করেছিল। চুরি করে যাওয়ার সময় কিসমতের জামা রেখে যায়। এলাকাবাসী ওই জামা দেখে চিনতে পারে। তাই তাদের ধরে ক্যাম্পে দেওয়া হয়। ক্যাম্পে জরিমানা দিয়ে তারা চলে আসে। এছাড়া সাবুর আলীর সাথে কোন কিছুই ঘটেনি।