আগের দিনটা স্বস্তিতেই কাটিয়েছিল বাংলাদেশ। এমনকি দ্বিতীয় দিন প্রথম ইনিংসে ৩০৫ রানে গুটিয়ে গিয়ে পুঁজিটা ছিল সমৃদ্ধ। পরে অসিদের ৯৮ রানে ২ উইকেট তুলে নিয়ে পাল্টা আক্রমণের ইঙ্গিতও দিয়েছিল। কিন্তু তাদের হতাশায় ডুবিয়ে দিনটা অসিদের করে নিয়েছেন ডেভিড ওয়ার্নার ও হ্যান্ডসকম্ব। এই দুইজনের শত রানের জুটিতে ভর করেই দ্বিতীয় দিন ২ উইকেটে ২২৫ রানে শেষ করেছে সফরকারীরা। অসিরা দ্বিতীয় দিন শেষে পিছিয়ে আছে ৯০ রানে। ওয়ার্নার অপরাজিত আছেন ৮৮ রানে আর হ্যান্ডসকম্ব ৬৯ রানে।
প্রথম টেস্টে জ্বলে উঠতে পারেননি কাটার মাস্টার মোস্তাফিজুর রহমান। অথচ চট্টগ্রামেই বোলিংয়ে এসে দেখালেন তার বোলিং ঝলক। দ্বিতীয় ওভারেই তার বলে মুশফিককে ক্যাচ দিয়ে ফিরেছেন ওপেনার ম্যাট রেনশ। বিদায় নেন ৪ রানে। মধ্যাহ্নভোজনের আগে সফলভাবেই বিরতিতে যায় স্বাগতিকরা। অবশ্য পরে ফিরেই শুরুর ধাক্কা সামাল দেন ওপেনার স্মিথ ও ডেভিড ওয়ার্নার। ধীরে প্রতিরোধ দিতে থাকে এই জুটি। ৯৩ রানেই আসে এই জুটিতে। এক পর্যায়ে এই জুটি চিন্তার ভাঁজ ফেলে দেয় বাংলাদেশ শিবিরে। এরপর ২৯তম ওভারে সাকিবকে পাল্টে তাইজুলকে আক্রমণে আনলে সেই এনে দেয় কাঙ্ক্ষিত ব্রেক থ্রু। একেবারে ওভারের প্রথম বলেই বোল্ড হয়ে সাজঘরে ফেরেন অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক স্টিভেন স্মিথ। ৯৪ বলে ৫৮ রানের ইনিংস খেলেন তিনি। যেখানে ছিল ৮টি চার। এরপরই আসল প্রতিরোধটা দেন ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নার ও হ্যান্ডসকম্ব।
এর আগে চট্টগ্রাম টেস্টের দ্বিতীয় দিনটা দেখে শুনেই শুরু করে বাংলাদেশ। নাসির হোসেন ও মুশফিক এগিয়ে নিচ্ছিলেন বাংলাদেশের ইনিংস। অথচ নাথান দিনের ওভার শুরু করতে আসার পরই বাধে বিপত্তি। এক কথায় দুর্ভাগ্যই বলতে হবে মুশফিকের। পা বাড়িয়েছিলেন খেলতে। কিন্তু স্পিন করতে থাকা বল ব্যাটের কোনায় লেগে আঘাত করে স্টাম্পে। বেল পড়ে গেলে উল্লাসে মাতে অসিরা। মুশফিক বিদায় নেন ৬৮ রানে। ১৬৬ বলের ইনিংসে ছিল ৫টি চার।
এরপর নাসির মেহেদী হাসান মিরাজকে সঙ্গে নিয়ে লেজের দিকে গড়ছিলেন জুটি। সঙ্গে পুঁজিটাকেও ৩০০ রানের কাছাকাছি নিয়ে যাচ্ছিলেন। এর আগে দলীয় ২৯৩ রানে নাসিরকে ম্যাথু ওয়েডের তালুবন্দী করান অ্যাস্টন অ্যাগার। নাসির ৯৭ বলে ৪৫ করে ফেরেন। ৫ রানের জন্য মিস করলেন ফিফটি। যেখানে ছিল ৫টি চার। দীর্ঘদিন পর টেস্ট দলে ফিরলেও থিতু হতে পারলেন না বেশিক্ষণ। এরপর আবারও উইকেটের পতন। রানের প্রান্ত বদল করতে গেলে ডেভিড ওয়ার্নার আগেই স্টাম্প ভেঙে দেন। ১১ রানে বিদায় নেন মিরাজ। এরপর ছয় মেরে স্কোর ৩০০ ছাড়া করেন তাইজুল। কিন্তু তাইজুলকে এরপরেই স্লিপে তালুবন্দী করান নাথান লিওন। বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে গুটিয়ে যায় ৩০৫ রানে।
লিওন একাই ৯৪ রানে নিয়েছেন ৭ উইকেট। দুটি নেন অ্যাস্টন অ্যাগার।
এর আগে চট্টগ্রাম টেস্টের প্রথম দিনটা হাসিমুখে শেষ করেছে বাংলাদেশ। সেই হাসিটা আরও চওড়া হতে পারতো। শেষ বিকালে সাব্বির রহমান স্টাম্পিংয়ের ফাঁদে না পড়লে টাইগাররা আরও ভালো অবস্থানে থেকে শুরু করতো দ্বিতীয় দিনের খেলা। তবে যা হয়েছে, তা-ও কম স্বস্তির নয়।
নাথান লিওন এক প্রান্তে যেভাবে উইকেট তুলে নিচ্ছিলেন, তাতে প্রথম দিন শেষে বাংলাদেশের ইনিংসের চেহারা করুণ হতে পারতো। স্বাগতিকদের প্রথম চার ব্যাটসম্যানকে এলবিডাব্লিউর ফাঁদে ফেলে দারুণ এক কীর্তি গড়েছেন অস্ট্রেলিয়ার অফস্পিনার। টেস্ট ক্রিকেটের ১৪০ বছরের ইতিহাসে এমন ঘটনার জন্ম হয়নি। এর আগে ৬ বার কোনও দলের প্রথম চার ব্যাটসম্যান এলবিডাব্লিউর শিকার হলেও প্রতিটি ক্ষেত্রে বোলার ছিলেন ভিন্ন। চট্টগ্রামে লিওনের কীর্তি তাই এক কথায় অনন্য।
লিওনের সাফল্যে বাংলাদেশেরও ‘ভূমিকা’ আছে! বাঁহাতি ব্যাটসম্যানের বিপক্ষে ডানহাতি স্পিনার যে বাড়তি সুবিধা পায়, সে কথা অনেকেরই জানা। অথচ আজ বাংলাদেশের প্রথম পাঁচ ব্যাটসম্যানই ছিলেন বাঁহাতি! সুযোগটা কাজে লাগাতে ভুল হয়নি লিওনের, একে একে তিনি ফিরিয়ে দিয়েছেন তামিম-ইমরুল-সৌম্য-মুমিনুলকে। ডানহাতি মুশফিককে আগে নামালে হয়তো বাংলাদেশকে এমন ধস দেখতে হতো না।
১১৭ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়ে যাওয়া টাইগারদের পরিত্রাতা মুশফিক ও সাব্বির। দুজনের ১০৫ রানের জুটিতে প্রাণ ফিরে পায় বাংলাদেশ। ক্রিজে নেমেই আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে অতিথি অধিনায়ক স্মিথের কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ ফেলে দিয়েছিলেন সাব্বির।
ভালো খেলতে থাকা সাব্বির আউট হয়েছেন স্টাম্পিংয়ের ফাঁদে পড়ে, সেই লিওনের বলেই। ৬৬ রান করে সাব্বির ফিরে আসার সময় দিনের খেলা বাকি ছিল প্রায় ৯ ওভার। নাসিরকে নিয়ে দলের আর কোনও ক্ষতি হতে দেননি অধিনায়ক মুশফিক।