গত বেশ কিছুদিন হলো পত্রপত্রিকার পৃষ্ঠার দিকে আর তাকানো যাচ্ছে না। মানুষের নিষ্ঠুরতার কথা পড়তে ভালো লাগে না। এ রকম খবর পত্রপত্রিকায় ছাপা হলে নিজের অজান্তেই চোখ ফিরিয়ে নিই। একাত্তর সালে আমাদের এ রকম নিষ্ঠুরতার ভেতর দিয়ে যেতে হয়েছিল। তখন চোখ ফিরিয়ে নেওয়ার কোনো উপায় ছিল না। আমাদের চারপাশেই ওই ঘটনাগুলো ঘটেছিল। মনে হচ্ছে, ওই দিনগুলো বুঝি আবার ফিরে এসেছে। আমি না চাইলেও আবার ওই রকম ঘটনাগুলো দেখতে হচ্ছে, শুনতে হচ্ছে।
এক মা তার মৃত সন্তানের মুখের সঙ্গে মুখ লাগিয়ে শূন্যদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন। এ রকম দৃশ্য সহ্য করা কঠিন! কিন্তু এখন আমরা সবাই জানি, খবরের কাগজের ওই রকম একটি ছবির পেছনে এর চেয়েও ভয়ঙ্কর নির্মম আরও হাজারটি কাহিনি আছে। রোহিঙ্গাদের গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে, মেয়েদের ধর্ষণ-গণধর্ষণের শিকার হতে হয়েছে, নারী-পুরুষ-শিশুদের নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। ওই ভয়ঙ্কর অত্যাচার থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য এক-দুইজন নয়, ৪ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে বাংলাদেশে। এত অল্প সময়ে এত বেশি শরণার্থী আর কোথাও প্রাণ বাঁচানোর জন্য হাজির হয়েছে বলে আমার জানা নেই।
রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে থাকত। এই মুহূর্তে রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গার সংখ্যা কমে হাতে গোনা পর্যায়ে চলে এসেছে। তাদের বেশিরভাগই সেখান থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিয়েছে। বহুদিন থেকে মিয়ানমার এটিই করতে চেয়েছিল। তারা শেষ পর্যন্ত এটি করতে পেরেছে। পৃথিবীর মানুষের সমালোচনা কিংবা ধিক্কার এক কান দিয়ে শুনে অন্য কান দিয়ে বের করে দিয়ে মিয়ানমার তাদের বহুদিনের কাঙ্ক্ষিত চূড়ান্ত সমাধানটি শেষ পর্যন্ত করে ফেলতে পেরেছে।
পৃথিবী ইতিহাসে এ রকম চূড়ান্ত সমাধানের কোনো আভাস নেই। ইসরায়েল নামক রাষ্ট্রটি এর সবচেয়ে স্পষ্ট উদাহরণ। জোর করে একটি জায়গা থেকে সব অধিবাসীকে সরিয়ে দিয়ে সেখানে ইসরায়েল রাষ্ট্রটি তৈরি করা হয়েছে। বিশ্ববিবেকের এতে একটি আঁচড়ও পড়েনি। কাজেই হঠাৎ করে রোহিঙ্গাদের জন্য পৃথিবীর মানুষ ব্যাকুল হয়ে উঠবে, আমি একবারও সেটি মনে করি না।
আমরা নিজের চোখেই দেখতে পাচ্ছি, ওই রোহিঙ্গা বিপর্যয় নিয়ে আমাদের পাশের দেশ ভারতবর্ষের কোনো মাথাব্যথা নেই। চীন ও রাশিয়া মোটামুটি স্পষ্ট করে বলে দিয়েছে, তারা মিয়ানমারের পক্ষে। একাত্তরে যখন বাংলাদেশ গণহত্যা চলছিল, আমাদের চোখের সামনে শুধু মানুষের লাশ আর লাশ, ঠিক তখনও আমরা শুনতে পেতাম এটি ‘পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয়’।
এতদিন পর ওই একই ভাষায় একইভাবে আমরা শুনতে পাচ্ছি, রোহিঙ্গা গণহত্যার ব্যাপারটি হচ্ছে মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ বিষয়। ডোনাল্ড ট্রাম্পের দেশ আমেরিকার ‘রিফিউজি’ বা ‘শরণার্থী’ নিয়ে রীতিমতো অ্যালার্জি আছে। তাই বাংলাদেশের রোহিঙ্গা শরণার্থী নিয়ে তাদের কোনো গরজ থাকার কথা নয়। নিউইয়র্ক থেকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেটি সোজা ভাষায় আমাদের জানিয়ে দিয়েছেন।
সদা হাস্যময় মিনামারের জেনারেল সাহেব ইউরোপের খুবই জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব। সারা পৃথিবীতে তিনি খুবই দাপটের সঙ্গে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। অং সান সু চিকে সাধারণ মানুষ ইন্টারনেটে একটু গালমন্দ করছে। চোখ, নাক, মুখ বন্ধ করে এ সময়টা পার করে দিলেই পৃথিবীর মানুষ ওই কথা ভুলে যাবে। আমি প্রতিদিন ইন্টারনেটে বিবিসিতে একবার চোখ বুলিয়ে দেখি।
এর মধ্যেই প্রাত্যহিক খবরে এখন রোহিঙ্গাদের কোনো খবর নেই। প্রাণ বাঁচানোর জন্য লাখ লাখ নারী-শিশু ও পুরুষের নিজ বাসভূমি ছেড়ে অন্য দেশে আশ্রয় নেওয়ার ঘটনাটির গুরুত্ব বিশেষ অবশিষ্ট নেই। কাজেই মোটামুটি অনুমান করা যায়, মিয়ানমার তাদের রাখাইন রাজ্যটি মোটামুটি ঝামেলামুক্ত করে ফেলেছে। সেখানে আর কোনো রোহিঙ্গা নেই। কাজটি করতে হয়তো অনেক সময় লাগত। কিন্তু অনেক দ্রুত করে ফেলা গেছে।
পুলিশ-মিলিটারির ঘাঁটি আক্রমণ করে অল্প কিছু পুলিশ-মিলিটারিকে মেরে রোহিঙ্গাদের চরমপন্থি দল ‘আরসা’ পুরো কাজটি খুব সহজ করে দিয়েছে। এখন মিয়ানমারের বিশাল মিলিটারি বাহিনী খুবই ‘যৌক্তিক’ভাবে রোহিঙ্গাদের গণহত্যা করতে পারছে। এভাবে যে গণহত্যা করা যায়, আমাদের চোখের সামনেই সেটি অনেকবার হতে দেখেছি আমরা।
দুই.
শান্তির জন্য নোবেল পুরস্কার পাওয়া ভদ্রমহিলা অং সান সু চি সেদিন তাদের টেলিভিশনে একটা ভাষণ দিয়েছেন। ভাষণে তিনি কী বলবেন মোটামুটি অনুমান করা গিয়েছিল এবং সেটিই বলেছেন। একাত্তরে বাংলাদেশের এক কোটি শরণার্থী ভারতবর্ষে আশ্রয় নিয়েছিল। পৃথিবীর বেশকিছু দেশ যখন তা নিয়ে পাকিস্তানের ওপর চাপ দিয়েছিল, তখন কোনো একপর্যায়ে শরণার্থীদের ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছিল পাকিস্তানের মিলিটারি। ওই আহ্বান শুনে একটা শরণার্থীও ফিরে যায়নি। কেন যাবে?
পাকিস্তানের মিলিটারিরাও জানত, সেটি ফাঁকা বুলি। শরণার্থীরাও জানত এটা ধাপ্পাবাজি। নিজের জীবন নিয়ে কে ধাপ্পাবাজির ফাঁদে পা দেবে? মিলিটারির গুলি খেয়ে মারা যাওয়ার থেকে অনাহারে, রোগে, শোকে, কলেরায় মারা যাওয়াটাই তাদের কাছে বেশি গ্রহণযোগ্য মনে হয়েছিল। শরণার্থী ক্যাম্পে তখন প্রায় ৮ লাখ থেকে ১০ লাখ মানুষ মারা গিয়েছিল।
এবারে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পাওয়া ভদ্রমহিলা পাকিস্তানের মিলিটারি থেকে এক কাঠি সরেস! তিনি ঘোষণা দিয়েছেন, যাচাই-বাছাই করে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ফেরত নেওয়া হবে। যাচাই-বাছাই করার প্রক্রিয়াটি কী, আমরা এখনো তা জানি না। যারা প্রাণ নিয়ে পালিয়ে এসেছে, তাদের কাছে কী কাগজপত্র প্রমাণ হিসেবে আছে তা আমার জানা নেই।
সবচেয়ে বড় কথা, ওই রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর কোনো নাগরিকত্ব নেই। ব্যাপারটি বুঝতেই পারি না, একজন মানুষ একটি দেশে থাকে। কিন্তু সে ওই দেশের নাগরিক নয়! কোনো দেশের সংবিধানে কথাগুলো লেখা থাকে ওই দেশের নাগরিকের জন্য। কাজেই যারা ওই দেশের নাগরিক নয়, তাদের জন্য রাষ্ট্রের কোনো দায়দায়িত্ব নেই। এর অর্থ রোহিঙ্গা শিশু লেখাপাড়া করতে পারবে না, অসুস্থ হলে চিকিৎসা পেতে পারবে না, বাস-ট্রেনে উঠতে পারবে না, দেশের এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যেতে পারবে না।
সবচেয়ে ভয়ঙ্কর কথা, দেশের সুনাগরিকরা যদি দা-চাপাতি হাতে নিয়ে রোহিঙ্গাদের কেটে টুকরো টুকরো করে ফেলে, তাহলে সেটি অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করা হবে না। রোহিঙ্গা মেয়েরা যেহেতু নাগরিক নয়, সেহেতু তাদের ধর্ষণ করাও নিশ্চয়ই গুরুতর অপরাধ নয়। যে রাষ্ট্রের অনেক মানুষের নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হয়, ওই দেশের সংবিধানটি দেখার আমার খুবই কৌতুহল।
শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পাওয়া ভদ্রমহিলা শরণার্থীদের যাচাই-বাছাই করে ফিরে যাওয়ার প্রক্রিয়ার কথা বলে অবশ্য স্বীকার করে ফেলেছেন, শরণার্থী বলে কিছু একটা আছে। আমি ভেবেছিলাম, তিনি সেটিও অস্বীকার করবেন। চীন, রাশিয়া ও ভারতবর্ষ পাশে থাকলে যে কোনো মিথ্যা কথা খুব জোর দিয়ে বলা যায়।
নাফ নদীর এপার থেকে যখন দেখা যায় রাখাইন রাজ্যে গ্রামে গ্রামে আগুন জ্বলছে, তখন আগুনটাকে অস্বীকার করা একটু কঠিন হয়ে যায়। এখন রাখাইন রাজ্যের কর্মকর্তারা বলছেন, তারা নিজেরাই নিজেদের বাড়িতে আগুন দিয়েছে। এর চেয়ে নিষ্ঠুর কৌতুক আর কী হতে পারে!
শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পাওয়া ভদ্রমহিলার বক্তব্যের সবচেয়ে চমকপ্রদ বক্তব্য হচ্ছে, তাদের দেশের মিলিটারিরা ৫ সেপ্টেম্বরের পর আর কিছু করেনি। বক্তব্যটিকে সোজা বাংলায় অনুবাদ করলে এ রকম শোনাবে ‘২৪ আগস্ট থেকে আমাদের মিলিটারি রোহিঙ্গাদের নির্বিচারে হত্যা করেছে, মেয়েদের ধর্ষণ করেছে, বাড়িঘর জ্বালিয়ে দিয়েছে, রোহিঙ্গারা প্রাণ বাঁচানোর জন্য বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়েছে।
মোটামুটি সবাইকে যেহেতু তাড়িয়ে দেওয়া গেছে, এখন হত্যা করার জন্য আর কাউকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। সেহেতু ৫ সেপ্টেম্বর থেকে হত্যা, ধর্ষণ, বাড়ি জ্বালানো বন্ধ আছে।’ তবে এ কথাটি নির্জলা মিথ্যা। ৫ সেপ্টেম্বরের পরও রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের গ্রাম পোড়ানো হয়েছে। তাদের ওপর হামলা হয়েছে।
সবচেয়ে বড় কথা, শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পাওয়া ভদ্রমিহলার বক্তব্য শুনে মনে হলো, ৫ সেপ্টেম্বর মিলিটারি অ্যাকশন বন্ধ করার জন্য সারা পৃথিবী থেকে তিনি এক ধরনের বাহবা কিংবা সম্ভব হলে শান্তির জন্য দ্বিতীয় আরেকটি নোবেল পুরস্কার আশা করছেন! তা না হলে এত বড় গলায় এত বড় একটা মিথ্যা কথা কীভাবে বলা হয়?
মিয়ানমারে ছুটে গিয়েছিলেন আমেরিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। সামরিক শাসন শেষ হয়ে মিয়ানমার গণতান্ত্রিক দেশ হয়ে গেছে। ওই আনন্দে সারা পৃথিবী উদ্বাহু হয়ে নৃত্য করেছে। রোহিঙ্গা বিপর্যয়ের কারণে আমরা এখন মিয়ানমারে গণতন্ত্রের প্রকৃত ছবিটা দেখতে পাচ্ছি। তাদের সংসদের শতকরা ২৫ ভাগ আসন মিলিটারিদের জন্য।
শুধু তা-ই নয়, কোনো বিল পাস করতে হলে শতকরা ৭৫ ভাগ ভোট পেতে হয়। এর অর্থ কোন বিল পাস হবে এবং কোন বিল পাস হবে না, সেটি ওই দেশের মিলিটারি ঠিক করে দেয়। মজা এখানেই শেষ নয়, সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করে মিলিটারি। কিন্তু দেশটিকে পৃথিবীর সামনে উপস্থাপন করার জন্য রয়েছেন শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পাওয়া সারা পৃথিবীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় সিক্ত ফটোজেনিক এক ভদ্রমহিলা। কী মজা!
আমি দেশ, রাজনীতি, অর্থনীতি কিছুই বুঝি না। সাধারণ মানুষের কমনসেন্স দিয়ে সবকিছু বোঝার চেষ্টা করি। একেবারে মৌলিক যে বিষয়গুলো সাধারণ জ্ঞান দিয়ে বুঝতে হবে, সেটি হচ্ছে এই পৃথিবীতে সব মানুষের সম্মান নিয়ে বেঁচে থাকার অধিকার আছে।
পৃথিবীটা নানা দেশে ভাগ করা আছে। সব দেশের দায়িত্ব নিজের দেশের মানুষকে সুখ-শান্তিতে বেঁচে থাকার জন্য সাহায্য করা। গায়ের রং, মুখের ভাষা কিংবা ধর্মের জন্য কাউকে পছন্দ না হলেই তাকে দেশ থেকে বের করে দেওয়া যাবে না। ইসরায়েল কিংবা মিয়ানমার সেটি করতে পারবে না। তাদের যত বড় খুঁটির জোরই থাকুক না কেন, সেটি অন্যায় এ কথাটি আমরা উচ্চকণ্ঠে বলতে পারব।
আমার ‘উচ্চকণ্ঠ’ আমার চারপাশের মানুষের কান পর্যন্ত পৌঁছায়। কিন্তু যখন এক ডজন নোবেল পুরস্কার পাওয়া মানুষ ওই একই কথা বলেন, তখন এ কথাটি সারা পৃথিবীর বিবেককে নাড়া দেয়। জাতিসংঘের পক্ষ থেকে যখন বলা হয়, এটি হচ্ছে একটি জাতি নিঃশেষ করে দেওয়ার ধ্রুপদি প্রক্রিয়া তখন একটুখানি হলেও পৃথিবীর সব মানুষের ওপর বিশ্বাস আরও একটুখানি ফিরে আসে।
এর মধ্যে আরও একটি ব্যাপার আছে। পৃথিবীর বৈচিত্র্য হচ্ছে সৌন্দর্য। একটি দেশের মানুষের ভেতর যত বৈচিত্র্য থাকবে, ওই দেশটি হবে তত সম্ভাবনাময়। এর সবচেয়ে বড় উদাহরণ হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই দেশে পৃথিবীর সব দেশের সব জাতির মানুষ রয়েছে। সত্যি কথা বলতে কী এটি একটি বড় দেশ নয়, এটি একটি ছোট পৃথিবী। এ কারণে ওই দেশটি এত উন্নত হতে পেরেছে (এই মুহূর্তে ডোনাল্ড ট্রাম্প অবশ্য দেশটির প্রকৃত সৌন্দর্য অস্বীকার করে এটিকে বৈচিত্র্যহীন দেশে পরিণত করার চেষ্টা করছে!)।
আমাদের দেশের মানুষের মধ্যে বৈচিত্র্য খুব বেশি নয়। এ জন্য অল্প যে কয়েক আদিবাসী বা ভিন্ন কালচারের মানুষ রয়েছে, আমাদের বুক আগলে তাদের রাখার চেষ্টা করতে হয়। মিয়ানমারের জন্যও এ কথাটাই সত্যি। তাদের দেশের শতকরা ৯০ ভাগ মানুষ বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী। কাজেই ভিন্ন ধর্মের অল্প যে কয়েকজন রয়েছে, তাদের মূল্যবান সম্পদের মতো বুক আগলে রক্ষা করার কথা ছিল! মিয়ানমারের জেনারেলদের ওই সৌন্দর্য অনুভব করার ক্ষমতা নেই।
রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী তাদের কাছে আপদ-বালাই। তাদের নিশ্চিহ্ন করে দিলেই তাদের শান্তি। বলতে কোনো দ্বিধা নেই, তারা আধুনিক পৃথিবীর মানুষ এখনো হতে পারেনি। তাদের জন্য আমাদের করুণা হয়।
বাংলাদেশি হিসেবে আজ আমি অনেক গর্ব অনুভব করি যখন দেখতে পাই, আমাদের দেশটি হতভাগ্য রোহিঙ্গাদের বুক আগলে রক্ষা করার জন্য এগিয়ে এসেছে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী তাদের দেখতে শরণার্থী শিবিরে গিয়েছিলেন। তখন বিদেশি এক সাংবাদিক তাকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, ‘এই রোহিঙ্গাদের আপনি কতদিন রাখবেন?’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ‘কতদিন? তারা সবাই মানুষ!’ পৃথিবীর সবাই লাভ-ক্ষতির হিসাব কষছে! আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রী ওই লাভ-ক্ষতির হিসাব করেননি। একেবারে পরিস্কারভাবে বলেছেন, তিনি মানুষ হিসেবে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন!
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আমার কৃতজ্ঞতার শেষ নেই!
মুহম্মদ জাফর ইকবাল: কথাসাহিত্যিক ও অধ্যাপক, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।