ভারতের বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় বা বিএইচইউ-য়ের ছাত্রছাত্রীদের ওপর পুলিশের লাঠিচার্জ ও হেনস্থার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে দিল্লির ছাত্রীরা বৃহস্পতিবার রাতে দেশের রাজধানীতে বিক্ষোভ মিছিল বের করেছে।
এই বিক্ষোভ মিছিল করা হয়েছে রাতে, কারণ সূর্যাস্তের পর ছাত্রীরা কেন হোস্টেলের বাইরে থাকবে তা নিয়েই বেনারসে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘাত শুরু হয়েছিল।
দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীরাও অনেকেই মনে করছেন দেশের সেরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর ক্যাম্পাসেও মেয়েরা অনেক সুযোগ-সুবিধা ও সুরক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত।
‘পিঁজড়া তোড়’ নামে দিল্লিতে ছাত্রছাত্রীদের একটি অরাজনৈতিক সংগঠন – যার অর্থ হল খাঁচা ভাঙো – তার বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় দিল্লি ইউনিভার্সিটির আর্টস ফ্যাকাল্টির সামনে থেকে তাদের নৈশ মিছিলের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন।
গত সপ্তাহে বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে এক ছাত্রীর শ্লীলতাহানি হওয়ার পর কর্তৃপক্ষ প্রশ্ন তুলেছিল – কেন সন্ধ্যা ছটার পরেও তিনি হোস্টেলের বাইরে ছিলেন? এরপর পুলিশ ক্যাম্পাসে ছাত্রছাত্রীদের ব্যাপক মারধরও করে – তারই প্রতিবাদে ছিল তাদের এদিনের আয়োজন।
এই ছাত্রীরা প্রশ্ন তুলছেন, “দেশের বিভিন্ন ক্যাম্পাসে যেখানে ছেলেরা রাত সাড়ে দশটা পর্যন্ত হোস্টেলে ঢুকতে পারে, সেখানে মেয়েদের কেন অনেক আগে ঢুকে পড়তে হবে?”
কিংবা আর একজনের কথায়, “অনেক কষ্ট করে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আসার পরও কি মেয়েদের সঙ্গে বঞ্চনা শেষ হবে না?
যে বেনারস থেকে এই বিতর্কের শুরু, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নিজে সেখানকার এমপি।
ছাত্রছাত্রীদের বিক্ষোভের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কনভয়ের রাস্তা পাল্টাতে হয়েছিল বলেই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশ লেলিয়ে দেয় – এমনও অভিযোগ উঠেছে সেখানে।
অথচ অ্যাক্টিভিস্ট যোগেন্দ্র যাদব বলছিলেন, তাদের দাবিগুলো ছিল অতি সাধারণ।
তার প্রশ্ন, “ছাত্রীরা ক্যাম্পাসে অধিকতর সুরক্ষা, সূর্যাস্তের পর রাস্তায় আলোর ব্যবস্থা, হোস্টেলে সিসিটিভি বা বিশ্ববিদ্যালয়ে জেন্ডার সেন্সিটাইজেশন কমিটি – এগুলোই শুধু চেয়েছিল। এগুলো কী এমন দাবি, ছাত্রীদের তা চাইতেই বা হবে কেন?”
জেএনইউ-র ছাত্রী সংগঠনের নেত্রী শায়লা রশিদও বলছেন, আসলে ক্যাম্পাসে মেয়েরা অনেক ন্যূনতম সুবিধা থেকেই বঞ্চিত।
তিনি জানাচ্ছেন, “মেয়েদের অযথাই বদনাম করা হয়। অথচ এই বেনারসেই দেখুন, মেয়েদের হোস্টেলে ওয়াই-ফাই পর্যন্ত দেওয়া হয় না এই যুক্তিতে তাতে না কি ছাত্রীদের চরিত্র খারাপ হয়ে যাবে।”
দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নেতা সৈকত ঘোষও মনে করেন, মেয়েদের সুরক্ষা দেওয়ার নামে আসলে ক্যাম্পাসে তাদের পায়েই বেড়ি পড়ানোর চেষ্টা হচ্ছে।
যেখানেই বিপদের আশঙ্কা দেখা যায় – তা সত্যিই হোক বা কল্পিত – তখনই প্রথমে বলা হয় মেয়েদের ভেতরে ঢুকিয়ে দাও, তাদের আটকে রাখো। এটা দিল্লিই হোক বা বিএইচইউ, দেশের সব ক্যাম্পাসেই কর্তৃপক্ষের মানসিকতার মধ্যে ঢুকে গেছে। আর কড়াকড়ির শেকলটা সব সময়ই মেয়েদের পরানো হয়, ছেলেদেরকে নয়।
“এই যে রক্ষণশীলতার আবহ, সেটা বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর অনেক বেড়ে গেছে। আর এই রক্ষণশীলতার বিরুদ্ধে যে-ই কথা বলবে, বলা হবে সেই রাজনীতি নিয়ে আসছে, কিংবা সে নকশাল, মাওবাদী – এই সব! এই জিনিসই চলছে”, বলছিলেন অধ্যাপক ঘোষ।
এরই প্রতিবাদে রাতে দিল্লিতে পথে নামছেন দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় ও শহরের আরও বহু কলেজের ছাত্রীরা – বেনারসের ঘটনা তার প্রধান উপলক্ষ হলেও ক্যাম্পাসে ছাত্রীদের সুরক্ষা আর সমান অধিকার নিশ্চিত করাই যার প্রধান লক্ষ্য।
সূত্র : বিবিসি বাংলা।