ভারতের সঙ্গে সাড়ে চার শ কোটি ডলারের ঋণচুক্তি সই করেছে বাংলাদেশ। টাকার অঙ্কে যা প্রায় ৩৬ হাজার কোটি টাকা। আজ বুধবার বেলা ১১টায় সচিবালয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে এই চুক্তি সই হয়। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) ও ভারতের এক্সিম ব্যাংকের মধ্যে এই ঋণচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।
এর মাধ্যমে সাত বছরের মধ্যে তৃতীয়বারের মতো বড় ধরনের ঋণ দিল ভারত, যা তৃতীয় লাইন অব ক্রেডিট (এলওসি) নামে পরিচিত।
তৃতীয় এলওসির অর্থ দিয়ে ১৭টি প্রকল্প করার প্রাথমিক তালিকা তৈরি করেছে বাংলাদেশ। তবে ঋণচুক্তিতে কোনো প্রকল্পের নাম থাকবে না বলে ইআরডি সূত্রে জানা গেছে। তালিকায় থাকা প্রকল্পগুলো হলো রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ বিতরণ অবকাঠামো উন্নয়ন; পায়রা বন্দরের বহুমুখী টার্মিনাল নির্মাণ; বুড়িগঙ্গা নদী পুনরুদ্ধার ও তীর সংরক্ষণ; বগুড়া থেকে সিরাজগঞ্জ পর্যন্ত দ্বৈতগেজ রেলপথ নির্মাণ; সৈয়দপুর বিমানবন্দর উন্নতকরণ; বেনাপোল-যশোর-ভাটিয়াপাড়া-ভাঙ্গা সড়ককে চার লেনে উন্নীত করা; চট্টগ্রামে কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণ; ঈশ্বরদীতে কনটেইনার ডিপো নির্মাণ; কাটিহার-পার্বতীপুর-বরনগর দিয়ে দুই দেশের মধ্যে বিদ্যুৎ বিতরণ লাইন তৈরি; মোংলা বন্দর উন্নয়ন; চট্টগ্রামে ড্রাই ডক নির্মাণ; মিরসরাইয়ের বারৈয়ারহাট থেকে রামগড় পর্যন্ত চার লেনে সড়ক উন্নীত করা; মোল্লাহাটে ১০০ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ; মিরসরাই বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গঠন; কুমিল্লা থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহর হয়ে সরাইল পর্যন্ত চার লেন সড়ক নির্মাণ; ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য যন্ত্রপাতি সরবরাহ এবং ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রাজশাহীতে ১ লাখ এলইডি বাল্ব সরবরাহ প্রকল্প।
কোনো ঋণচুক্তির আওতায় এটিই হচ্ছে দেশের ইতিহাসে দ্বিতীয় বড় ঋণ। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে রাশিয়ার সঙ্গে ১ হাজার ১৩৮ কোটি ডলারের (বাংলাদেশের টাকায় যা প্রায় ৯২ হাজার কোটি) ঋণচুক্তি করে বাংলাদেশ।
ইআরডি সূত্রে জানা গেছে, আগের দুটি এলওসির মতো তৃতীয় এলওসির শর্ত একই। আগের মতো ভারতীয় ঠিকাদারেরাই প্রকল্পের কাজ পাবে। ঋণের টাকার পূর্তকাজের প্রকল্প হলে ৬৫ শতাংশ মালামাল ও সেবা ভারত থেকে আনতে হবে। অন্য প্রকল্পে ৭৫ শতাংশ মালামাল ও সেবা ভারত থেকে আনতে হবে। আর ঋণের সুদহার ১ শতাংশ, প্রতিশ্রুতি মাশুল আধা শতাংশ। পাঁচ বছর রেয়াত সময়সহ ২০ বছরে পুরো টাকা পরিশোধ করতে হবে।
আগের দুটি এলওসিতে মোট ৩০০ কোটি ডলারের ঋণচুক্তি হয়। গত জুন মাস পর্যন্ত প্রথম এলওসির মাত্র ৩৫ কোটি টাকা ছাড় হয়েছে। প্রথম এলওসির ১৫টি প্রকল্পের মধ্যে ৮টি প্রকল্প শেষ হয়েছে। দ্বিতীয় এলওসির কোনো প্রকল্পে অর্থ ছাড় হয়নি।
২০১০ সালের ৭ আগস্ট দুই দেশের মধ্যে ১০০ কোটি ডলারের প্রথম এলওসি ঋণচুক্তি হয়। পরে অবশ্য ১৩ কোটি ৮০ লাখ ডলার অনুদানে রূপান্তর করে ভারত। ২০১৫ সালের জুন মাসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরের সময় ২০০ কোটি ডলার ঋণ বা দ্বিতীয় এলওসি দেওয়ার সমঝোতা চুক্তি হয়। পরে ২০১৬ সালের মার্চ মাসে ভারতের এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে ঋণচুক্তি হয়। এ ঋণের আওতায় ১৪টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে চায় বাংলাদেশ।
সূত্র: প্রথমআলো